ফিফা বিশ্বকাপে আফ্রিকার তিনটি দেশ এখনও পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। এটুকুই ছিল এতদিন। কোয়ার্টার পার করতে পারেনি এর কোনও দেশ। কিন্তু এবার ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় যোগ করেছে আফ্রিকা, আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মরক্কো। এই দলটিকে তাদের সোনালি প্রজন্ম হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
মরক্কোর দুর্দান্ত ফুটবল দল বিশ্বকাপের এবারের আসর রাঙিয়ে তুলেছে। অনেকেই মরক্কোর এ উত্থানে অবাক হলেও, যারা ক্লাব ফুটবলের খোঁজ রাখেন তাদের কাছে এটি অস্বাভাবিক না। দলটির একাদশের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই খেলেন ইউরোপের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ ক্লাবে।
বিজ্ঞাপন
কোনও প্রতিপক্ষ এখনো মরক্কোর জালে কোনও গোল দিতে পারেনি। রয়েছে অপরাজিত। কানাডার বিপক্ষে যে গোলটি মরক্কো হজম করেছে, সেটি ছিল আত্মঘাতী। আটলাসের সিংহদের ডিফেন্স লাইন কতটা শক্তিশালী, তা বোঝার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।

বিভিন্ন দেশে জন্ম নেয়া ও ইউরোপে ক্লাব ফুটবলে পরিচিত মুখ এমন সব ফুটবলারকে নিয়ে শক্তিশালী এক দল সাজিয়েছেন কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ে।
ডিফেন্সের প্রাণ আশরাফ হাকিমি খেলেন মেসি-নেইমার-এমবাপেদের পিএসজিতে। বিশ্বকাপের আগেও মরক্কোর ফুটবল দলটি নিয়ে যতবার আলোচনা হয়েছে, ততবার উঠে এসেছে হামিকির নাম। এই রাইট ব্যাক ফুটবলারই তাদের সবচেয়ে বড় তারকা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: মরক্কোয় মুসলিম জনসংখ্যা কত?
ছোটবেলা থেকেই আশরাফ হাকিমির জীবন ছিল প্রতিবন্ধকতায় পরিপূর্ণ। কৈশোরে রিয়াল অ্যাকাডেমিতে অনূর্ধ্ব ১৭'তে খেলা, তারপর রিয়াল মাদ্রিদ, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড এবং শেষমেশ প্যারিস সেন্ট জার্মেই তথা পিএসজি এই সুদীর্ঘ রাস্তায় রয়েছে বহু উত্থানপতনের গল্প। বহু সংগ্রাম করে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি।

এছাড়া নায়েফ খেলেন ওয়েস্ট হ্যামে, নুসায়ের বায়ার্নে আর সাইস খেলেন বেসিকতাসে। এই সবগুলোই ইউরোপের উল্লেখযোগ্য ক্লাব। যে গোলরক্ষক মরক্কোর দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেই বুনু স্পেনের অন্যতম সফল ক্লাব সেভিয়ার হয়ে খেলেন।
হাকিমিকে যদি দলটির ডিফেন্সের প্রাণ বলা যায়, তাহলে দলটির আক্রমণের নায়ক হাকিম জিয়েশ। আয়াক্সে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। এখন খেলছেন চেলসিতে। বিশ্বকাপের কয়েকদিন আগেও জাতীয় দলে খেলার কথা ছিল না তার। তবে নতুন কোচ এসেই তার স্মরণাপন্ন হন। খুলে যায় ভাগ্য।
আসরজুড়ে নজর কেড়েছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সোফয়ান আমরাবাতও। পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্তিনার এই ফুটবলার।

ফলে যেমন আন্ডারডগ হিসেবে দেখা হয়েছিল মরক্কোকে, দলটা মোটেও তেমন নয়। বরং বড় দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার মতো সামর্থ তাদের রয়েছে। বেলজিয়ামের বিপক্ষে মরক্কোর জয়কে প্রথমে অঘটন বলেছিলেন অনেকে। তারাই এখন বলছেন তিন ধাপ পেরিয়ে যোগ্য দল হিসেবেই সেমিফাইনালে উঠেছে মরক্কো।
আরও পড়ুন: মরক্কোর মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলাদেশের যে বর্ণনা দিয়েছেন
গ্রুপপর্ব পার করার পর কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ে বলেছিলেন তাদের লক্ষ্য বিশ্বকাপ। নিজের দলের প্রতি বিশ্বাস ও দৃঢ়তা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি জাদুকর নই। আমার দলে কোনো জাদুকরও নেই। আছে ২৬ জন নায়ক। জন্ম যেখানেই হোক, মরক্কোর জন্য তারা জীবন দিতেও প্রস্তুত।’

২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ হাকিমি এবং তার দলের জন্য হতাশাজনক ছিল। স্পেন, পর্তুগাল এবং ইরানকে হারিয়েও গ্রুপপর্বেই বাদ পড়তে হয়েছিল তাদের। তবে কাতার বিশ্বকাপে গড়ে চলেছেন একের পর এক রেকর্ড। মাত্র দুই ম্যাচ সামনে স্বপ্নের সোনার কাপ। নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে সেই লক্ষ্য বেশি চেনা তাদের। কোচের ভাষায় ‘জীবন দিতেও প্রস্তুত’ মরক্কোর নায়কদের জন্য শুভকামনা।
একে































































































































































































































































































































































































































































