কাতারে বসেছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের ২২ তম আসর। যার প্রবল উন্মাদনা বরাবরের মতোই বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য মাত্রায়। সেই বিশ্বকাপ শুরুর দিন থেকেই বাংলাদেশের এই ফুটবল আবেগকে নিয়ে বৈশ্বিক গণমাধ্যমগুলো বেশ সরগরম। এবার বাংলাদেশের বিশ্বকাপ উন্মাদনা নিয়ে নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেছে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘লা নাসিয়ন’।
তারা বলছে, শুনতে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ১৭ হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশে আমাদের রয়েছে এক বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী। যারা আলবেসেলিস্তেদের প্রতিটি জয়ে উচ্ছ্বসিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে কীভাবে এত জনপ্রিয়তা পেলো আর্জেন্টিনা? মেসিদের নিয়ে কেন এত আবেগ বাংলাদেশিদের মাঝে? তারই কারণ উদঘাটন করার চেষ্টা করেছেন ‘লা নাসিয়নের প্রতিবেদক ‘মারিয়া দেল পিলার ক্যাস্টিলো’।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- সেনেগালকে হারিয়ে শেষ আটে ইংল্যান্ড
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের মাঠে বড় পর্দায় খেলা দেখার ছবি ভাইরাল হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে। এরপর ‘Seleccion Argentina’ নামক আর্জেন্টিনা ফুটবলের অফিশিয়াল টুইটার আইডি থেকে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায় তারা। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘ধন্যবাদ আমাদের দলকে সমর্থন দেয়ার জন্য। তারাও আমাদের মতো পাগল সমর্থক’। এইসব নিয়েই লা নাসিয়নের প্রতিবেদকের প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশের প্রধান শহর ঢাকা ছেয়ে গেছে আর্জেন্টিনার আকাশী-নীল পতাকায়। গায়ে গায়ে আর্জেন্টিনার জার্সি। তারা গাইছে আলবেসেলিস্তাদের জয়গান। ফুটবল বিশ্ব বুঝি এমনই হয়। মানেনা কোনো ভৌগলিক সীমারেখা। জানেনা কোনো রাজনৈতিক ভাষা। ভারত, মায়ানমার ও সাগর বেষ্টিত দেশটিতে আমাদের ফুটবলের জন্য এত মায়া কীভাবে জন্মালো? কীভাবে তারা আমাদের জন্য পাগল হলো? এই ব্যাপারে আমরা তাদের একজনের সাথে কথা বলেছিলাম। সে বলেছে, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন যে আর্জেন্টিনা একটি দুর্দান্ত দল। কিন্তু যখন আমি বড় হলাম এবং ফুটবল বুঝতে শুরু করলাম, তখন আমি মেসির একজন বড় ভক্ত হয়ে গেলাম’। শামসুল আরেফিন নামের আরেকজন সমর্থক জানান, ‘আল্লাহ ভরসা, আর্জেন্টিনাই ফাইনালে পৌঁছাবে ও জিতবে’।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন- এমবাপে-জিরুদের গোলে কোয়ার্টারে ফ্রান্স
সোনার বাংলাদেশ নামে পরিচিত দেশটি ১৮৫৮-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল। তখন তারা ভারতবর্ষ নামেই পরিচিত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্টে অবসান হয় ব্রিটিশ শাসনের। জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন দেশের। পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। এই পূর্ব পাকিস্তানই বর্তমান বাংলাদেশ। শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) তাদের হাতে সমস্ত ক্ষমতা নিয়ে নেয়। ভাষা, সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, শাসন সবকিছু পাকিস্তানিরা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। তাদেরকে মুক্তির ও স্বাধীনতার পথ দেখায় বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১৯৭০ সালের সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পরও তৎকালীন সরকার শেখ মুজিবরের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এরে কয়েক মাস পরেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করেন এবং ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালের কালো রাতে ঢাকায় গণহত্যা চালানোর নির্দেশ দেন। সেটিই ইতিহাসে ‘কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত। তবে গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন এবং বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে উৎখাত না করা পর্যন্ত সমগ্র জনগণকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে’। এই জাতীয়তাবাদই সমগ্র জাতিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনে অনুপ্রাণিত করে। এই ধারাবাহিকতায় নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। যেই যুদ্ধে শহীদ হয় ৩০ লাখ মানুষ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ এবং দারিদ্র্যের কারণে জাতিসংঘ কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশকে জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক আকারের দিক থেকে বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলির একটি (এলডিসি) হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তবে শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি এবং মানব উন্নয়নের সূচকের সাথে একত্রিত হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি কমিটির (ইউএনডিপি) মতে, ২০২৪ সালের মধ্যেই দেশটি এই কঠিন এলডিসি লেবেল থেকে মুক্তি পাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো শিল্পায়ন এবং পোশাক শিল্প। সেই দেশটির প্রত্যেকটি আর্জেন্টিনা সমর্থক স্বপ্ন দেখে যে আর্জেন্টিনাই এবার বিশ্বকাপ জিতবে। মেসির হাতেই উঠবে কাতার বিশ্বকাপের ট্রফি।
এফএইচ/এসসিএন































































































































































































































































































































































































































































