১২ বছর আগে কাতারের জন্য স্মরণীয় একটি ঘোষণা আসে। ২ ডিসেম্বর,২০১০ তারিখটি আরবের এই দেশটির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি ছিল ফুটবল বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক আসরের আয়োজক হওয়া। শেখ মোহাম্মদ বিন হামিদ বিন খালিফা আল থানির সেই দিনের কথা এখনো মনে পড়ে নিশ্চয়।
সকল বাধা বিপত্তি পার করে অবশেষে ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে কাতার। পশ্চিমা পরাশক্তিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব ধরণের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজন করতে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে এশিয়ার দেশটির। 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' এর আয়োজনের পেছনে রয়েছে একাধিক গল্প, যা আপনাকে চমকে দিবে।
বিজ্ঞাপন
প্রচলিত সময়ের বাইরে গিয়ে বিশ্বকাপের সময় সূচি ঠিক করা থেকে শুরু করে ঘুষ দিয়ে আয়োজক হওয়া, মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন,
নারীদের অধিকার ও সমকামীদের প্রতি দেশটির মনোভাব কতো ধরণের আলোচনায় না ছিল আসর শুরুর আগে। এই রকম পথ পাড়ি দেওয়া মোটেও সহজ ছিল না কাতারের জন্য।
ঘুষ দিয়ে আয়োজক
যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে ২২তম বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার অনুমতি পায় কাতার। এতো বড় দেশকে পেছনে ফেলে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় জোর গুঞ্জন। অভিযোগ আসে ঘুষ দিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক স্বত্ব নিয়েছে আরবের দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়োজক নির্ধারণে ফিফার নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সাবেক সদস্য ঘুষের প্রস্তাব পান। সেই প্রস্তাব তারা গ্রহণ করে কাতারের পক্ষে ভোট দেন।
আরও পড়ুন: উরুগুয়ে থেকে আর্জেন্টিনা, কেমন ছিল ১১টি বিশ্বকাপের বল
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপের আয়োজক ইস্যুতে কারচুপির অভিযোগে নিষিদ্ধ হন সাবেক ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটার। চলতি বছরের জুলাইয়ে সুইজারল্যান্ডের একটি আদালত তাকে অব্যাহতি দেন। সেই সঙ্গে অব্যাহতি পান তার সঙ্গে অভিযুক্ত মাইকেল প্লাতিনিও।
সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি
২০০১ সালে আমেরিকার নাইন/ইলেভেনের মতো ন্যাকারজনক ঘটনার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বরাবরের মতোই অন্যরকম দৃষ্টিতে দেখে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব। কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর বিভিন্ন সংস্থা সন্ত্রাসী হামলার কথাও জানায়।
তবে বরাবরের মতোই এসব কিছু উড়িয়ে দিচ্ছে কাতার। তবে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এক তথ্য সামনে এনেছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম লা রাজন। তাদের দাবি, কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে সন্ত্রাসী হামলার ছক কষছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারীরা। তবে বিশ্বকাপের জন্য অন্যরকম নিরাপত্তার চাদরে দেশটিকে ঢেকে রেখেছে কাতার সরকার।
বিশ্বকাপের সময় পরিবর্তন
জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আসর শুরু হচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। জুন-জুলাইয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রচণ্ড গরমের কথা বিবেচনা করে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা)। জুনে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে কাতারের তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়ার থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। কাতারের বিশ্বকাপের সময় পরিবর্তনের জন্য এবং তাদের তাপমাত্রার কারণে অন্যান্য দেশের ফুটবলারদের অনেকটাই বেগ পেতে হবে।
শ্রমিকদের উপর অন্যায়সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
আলোর ঝলকানির কাতার বিশ্বকাপের আয়োজনের পেছনে রয়েছে লক্ষাধিক শ্রমিকের আর্তনাদ। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান দাবি করে বলেছে, বিশ্বকাপের বিভিন্ন প্রকল্পে গত এক দশকে প্রাণ হারিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েক হাজার শ্রমিক। যার মধ্যে শুধু বাংলাদেশির সংখ্যাই এক হাজারের বেশি।
শ্রমিকদের তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা থেকে বিভিন্ন রকমের অভিযোগ রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ নিয়ে বারবার অভিযোগ তুলেছে। কদিন আগে সংস্থাটি বিশ্বকাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের কমপক্ষে ৪৪০ মিলিয়ন ডলার দিতে ফিফার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে গত এক যুগে কয়েক হাজার শ্রমিকের মৃত্যুর তদন্ত করতে কাতার কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি।
সব কিছুকে ছাপিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই বিশ্বকাপ। প্রায় ২২ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা খরচে বিশ্বকাপ আয়োজন করছে কাতার,যা গত রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ২০ গুণ বেশি।
এমএএম