আবেগ, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনায় ভরপুর এক বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখল গোটা ফুটবল দুনিয়া। দুর্দান্ত জয়ের পর পুরো সময়টাকেই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির। ইতিহাস গড়া অর্জনে চোখের জল কোনভাবেই যেন সামলাতে পারছিলেন না সাবেক এই আর্জেন্টাইন রাইট ব্যাক। এই জয়ে স্ক্যালোনি নাম লিখিয়ে ফেলেছেন আলবিসেলেস্তা ফুটবল ইতিহাসের আরেক বিশ্বকাপজয়ী কোচ হিসেবে।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর কোচ হিসেবে নিয়োগ করা হয় স্ক্যালোনিকে। তবে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। কড়া সমালোচনা করেন সে দেশের প্রাক্তনীরাও।
বিজ্ঞাপন
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে স্ক্যালোনি ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামেন। ছিলেন আলবিসেলেস্তাদের ২০০৬ বিশ্বকাপ দলের সদস্য হিসেবেও। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। সবশেষ ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৪৪ বছর বয়সী স্ক্যালোনি।
আরও পড়ুন- স্বপ্নযাত্রায় মেসির যত রেকর্ড
ক্লাব ফুটবলে স্পেনের দেপোর্তিভো লা করুনায় স্ক্যালোনি পেশাদার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন। তিনটি দলের হয়ে লা লিগায় ১২ মৌসুমে ২৫৮টি ম্যাচ খেলে ১৫টি গোল করেছেন তিনি। এর সঙ্গে ইতালির লাজিও ও আতালান্তা ক্লাবের জার্সি গায়েও মাঠে নেমেছিলেন স্ক্যালোনি।
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার সহকারী কোচ হিসেবে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন লিওনেল স্ক্যালোনি। ২০১৭ সালের জুনে সাম্পাওলিকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে যুক্ত করা হলে স্ক্যালোনিকে তার সহকারী হিসাবে মনোনীত করা হয়। এর এক বছর পরই ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে জাতীয় দলের ব্যর্থতার পর স্ক্যালোনি ও পাবলো আইমারকে বছরের শেষ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে মনোনীত করে আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন। এরপর ২০১৮ সালের নভেম্বরে স্ক্যালোনির পদ স্থায়ী করা হয়। তার অধীনেই ২০১৯ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা তৃতীয় স্থানে থেকে আসর শেষ করে।
— MALE (@soyladeltango) December 18, 2022
স্ক্যালোনির অধিনেই আর্জেন্টিনা ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারানোর স্বাদ পায়। সেই বছরেই তিনি ফিফা ঘোষিত সেরা ফুটবল কোচ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। তবে শীর্ষ তিন জনের চূড়ান্ত সংক্ষিপ্ত তালিকায় তিনি জায়গা করে নিতে পারেননি।
২০১৬ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে কান্না ভেজা হারের পর লিওনেল মেসি যখন অবসরের সিদ্ধান্ত নেন, তখন এই স্কালোনি মেসিকে বুঝিয়ে পুনরায় আর্জেন্টিনা দলে ফেরত আনেন। তিনি মেসিকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, ভবিষ্যতে আর্জেন্টিনার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। সেই সময় গোটা বিশ্বের সকল আর্জেন্টাইন সমর্থক লিওনেল স্ক্যালোনির উপর আস্থা রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন- আর্জেন্টিনার জার্সিতে খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা মেসির
আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন অন্য দেশের ফুটবল বোর্ডের তুলনায় আর্থিকভাবে অনেকটাই দুর্বল। অন্যদের তুলনায় তারা কোচিং স্টাফদের খুব বেশি বেতনও দিতে পারেন না। তবুও স্ক্যালোনি ও তার কোচিং স্টাফ যেভাবে দিনের পর দিন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন তা অর্থ দিয়ে মাপা সম্ভব নয়।
স্ক্যালোনির সবচেয়ে বড় কৌশল হল তিনি প্রতিটি ম্যাচেই আলাদা আলাদা পন্থা অবলম্বন করেন। সব ম্যাচে দলকে একই কৌশলে খেলান না। যার বড় প্রমান এবারের বিশ্বকাপ। আসরের প্রথম ম্যাচে হারের পর তার দল যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এই ৪৪ বছর বয়সী কোচের। ফাইনাল জয়ের পর তাই প্রাপ্তির আনন্দটাও বাঁধভাঙা ছিল লিওনেল স্ক্যালোনির।
এফএইচ