কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে পুরো ফুটবল বিশ্বকে বড় কিছুর বার্তা দিলেন ২৫ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা নিজেদের সরূপে ফিরে আসে। যার নেতৃত্বে ছিলেন সব আলো কেড়ে নেওয়া রিচার্লিসন।
টটেনহ্যাম হটস্পারের এই ফুটবলারের জোড়া গোলেই সার্বিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে শুভসূচনা করেছে নেইমার জুনিয়ররা। অথচ ব্রাজিলের জয়ের নায়কের ফুটবলার হওয়ার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। সেই পথে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল মাদক।
বিজ্ঞাপন
ব্রাজিলের উত্তরপূর্ব অঞ্চলের নোভা ভেনেকিয়া নামক এক শহরে জন্ম নেন রিচার্লিসন। দারিদ্রতার সঙ্গে লড়তে থাকা এই ফরোয়ার্ড তার পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন। বাবা ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রি, মা ছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
রিচার্লিসনের বন্ধু মহলের সকলেই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। অতি দ্রুত ধনী হওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি বন্ধুদের পথে হাঁটেননি। ছোটবেলায় আইসক্রিম ও চকলেট বিক্রি করতেন ব্রাজিলের এ তারকা।
সাত বছর বয়সে রিচার্লিসনকে তার বাবা দশটি বল কিনে দিয়েছিলেন। তার বাবার স্বপ্ন ছিল সে যেন বড় হয়ে ফুটবলার হয়। ১৪ বছর বয়সে একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটে টটেনহ্যাম ফুটবলারের সঙ্গে। রাস্তায় বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলার সময় এক মাদক কারবারি তার দিকে বন্দুক তুলে ধরে। তবে সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। মাদক ব্যবসায়ী তাকে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয় এবং পরবর্তীতে সেখানে খেললে তাকে গুলি করে দিবে বলে সতর্ক করে।
বিজ্ঞাপন
জীবন-মরণের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর কখনো রাস্তায় ফুটবল খেলতে যাননি এই ব্রাজিলিয়ান। ২০১৪ সালেই পেন্ডুলামের মতো বদলে যায় এই তরুণের গল্প। ব্রাজিলের দ্বিতীয় সারির ক্লাব আমেরিকা মিনেইরো থেকে শুরু পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের যাত্রা। তারপর ব্রাজিলের প্রথম সারির লিগে থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেকে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
— Copa do Mundo FIFA (@fifaworldcup_pt) November 24, 2022
আজ কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ব্রাজিল যখন গোল করতে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিল ঠিক তখনই ৬২ তম মিনিটে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ গোল ও ৭৩তম মিনিটে বাইসাইকেল কিকের মাধ্যমে দুর্দান্ত এক ফিনিশিং করে সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছেন তিনি।
২০১৪ সালে নেইমার জুনিয়রের পর প্রথম ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের ম্যাচে জোড়া গোল করলেন রিচার্লিসন। সেলেসাওদের হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবশেষ সাত ম্যাচে তার গোল হলো ৮টি। সার্বিয়ার বিপক্ষে যে ধরনের আগমনী বার্তা দিলেন এই ফরোয়ার্ড তাতেই বলা যায় সামনের দিনে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে বড় এক তারকার পথচলার সূচনা হলো মাত্র।
এমএএম