মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

নরক থেকে ব্রাজিল দলে, রূপকথাকেও হার মানায় যে গল্প

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ০৫:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

নরক থেকে ব্রাজিল দলে, রূপকথাকেও হার মানায় যে গল্প

পৃথিবীতে প্রত্যেক দিন প্রত্যেকটা মানুষ লড়াই করছেন নিজের মতো করে। সবার লড়াইয়ের গল্পটা আলাদা। কেউ লড়ছেন খ্যাতির জন্য, কেউ ক্ষমতার কেউ আবার অর্থের জন্য। আবার দু-মুঠো ভাত কিংবা একটা মাথা গোজার ঠাঁইয়ের জন্যও কেউ কেউ লড়াই করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এরকমই এক লড়াইয়ের পেছনের গল্প লিখেছেন ব্রাজিলের তরুণ ফুটবলার অ্যান্টনি ম্যাথেউস। যে গল্প এখন পর্যন্ত অনেকেরই অজানা। চলতি মৌসুমেই নাম লিখিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। কাতার বিশ্বকাপেও ডাক পেয়েছেন ব্রাজিল জাতীয় দলে।

আরও পড়ুন- ব্রাজিলের জালে ৭ গোলের মতো অঘটন আবারও দেখবে ফুটবল বিশ্ব?


বিজ্ঞাপন


অ্যান্টনির ছেলেবেলা যেখানে বেড়ে ওঠা, সেই ফাবেলা ‘লিটল হেল’ নামে পরিচিত। অ্যান্টনির বাড়ির সামনেই চলত ড্রাগ ডিলারদের ব্যবসা। সম্প্রতি প্লেয়ার্স কর্নারে অ্যান্টনি লিখেছেন, ‘ফাবেলার মাঝখানে আমরা যেখানে থাকতাম, আমাদের বাড়ির ২০ গজ দূরেই ছিল ড্রাগ ডিলারদের আস্তানা। সবসময়ই মাদকের গন্ধ নাকে আসত। ছেলেবেলায় আমরা ভাই-বোনেরা মিলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম’।

ছেলেবেলায় অ্যান্টনি এমন দিন কাটিয়েছেন, যখন রাতের বেলায় তাদের বাড়িতে বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ত। পরিবারের সকলে মিলে সেই জল বের করতে হত। সবকিছুই তারা একসঙ্গে করতেন হাসিমুখে। তার ‘টিম গেম’-এর পাঠ যেন সেখান থেকেই নেওয়া। অ্যান্টনি জানান, এমনও অনেক দিন কাটাতে হয়েছে, যখন সকাল ৯টায় স্কুলের জন্য বেরিয়ে রাত ন’টায় বাড়ি ফিরে কিছু খাওয়ার থাকত না। কোনোদিন আধপেটা, তো কোনওদিন অভুক্ত অবস্থায় ঘুমাতে যেতে হত। তবে ইউরোপের ক্লাবে খেলায় এখন সেই অর্থকষ্ট নেই। নিজেকে চেনাতে শিকড়ের সন্ধান দিলেন অ্যান্টনি। তিবি বলেন, ‘আমি কে, জানতে হলে আমার অন্ধকার অতীতটাও জানা দরকার। জীবন আমায় এমন অনেক কিছু দেখিয়েছে যা হয়তো অনেকেই কল্পনা করতে পারবেন না’।

অ্যান্টনির শিউরে ওঠা ছেলেবেলার ঘটনায় তিনি জানান, ‘একদিন স্কুলে যাচ্ছিলাম। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা দূর যেতেই দেখি গলির রাস্তায় একজন লোক পড়ে রয়েছে। কোনও সাড়াশব্দ নেই। আমার এলাকায় এমন ঘটনা নতুন নয়। তবে ওই বয়সে আমার কাছে তা ছিল ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। কিছুক্ষণের জন্য সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। হতভম্ভের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ পর হুঁশ ফিরল। মনে পড়ল, আমি স্কুল যাচ্ছিলাম। সেই মৃতদেহের উপর দিয়ে লাফিয়ে রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম’।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন- উরুগুয়ে থেকে আর্জেন্টিনা, কেমন ছিল ১১টি বিশ্বকাপের বল

তবে সেই দুঃসহ অতীত পেরিয়ে সাফল্যের আলোতে অন্ধকার ঘুচিয়েছেন অ্যান্টনি। ২০১০ সালে সাও পাওলোর যুব দলে যোগ দেন এই ফরোয়ার্ড। ২০২০ সালে আসেন আয়াক্সে। সেখানে দারুণ দুইটি বছর কাটিয়ে চলতি মৌসুমে যোগ দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চেও দেখা যাবে এই ব্রাজিলিয়ানকে। এক প্রকার নরক থেকে উঠে একটা নতুন জীবন পেয়েছেন। যথার্থভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। শিক্ষক, ড্রাগ ডিলার, গ্যাংস্টারের সঙ্গে খেলা এই ফুটবলার এখন বিশ্বকাপের মঞ্চে। প্রমাণ করেছেন ডারউইনের অস্তিত্বের জন্য লড়াইয়ে টিকে থাকার গল্পকে।

এফএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর