৩২টি দলের ৬৪টি ম্যাচ, বিজয়ী একটি দল— এমন টানটান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় প্রতি ৪ বছর পর পর। পুরো বিশ্বের সব মানুষের মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করে পায়ের জাদু দেখান ফুটবলাররা। ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন।
গতকাল ভিন্নরকম এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচনা হয় কাতার বিশ্বকাপের। এবার অনেকেরই নজর কেড়েছে সাদা পোশাকের বিশ্বকাপ মাস্কটটি। যার নাম লায়িব বা লা’ইব। ১৯৬৬ সাল থেকেই প্রতিটি বিশ্বকাপের আসরে একটি করে মাস্কট থাকে। এটি মূলত স্বাগতিক দেশের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি চরিত্র। উদ্ভিদ, প্রাণিজগৎ, উপকথা, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারে মাস্কট। চলুন তবে ইতিহাসের খাতায় চোখ বুলিয়ে চিনে নেওয়া জানা যাক বিশ্বকাপের সব মাস্কটকে-
বিজ্ঞাপন
মাস্কট (mascot) কী?
অনেকের কার্টুনের মতো দেখতে বানানো একটি চরিত্র মাস্কট। সাধারণত মাস্কট বলতে কোনো ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর প্রতিরূপকে বোঝানো হয়। ধারণা করা হয় এটি সৌভাগ্য বয়ে আনে। জনসাধারণের কাছে পরিচিতির লক্ষ্যে বিদ্যালয়, ক্রীড়া দল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘ, সামরিক বাহিনীর একাংশ কিংবা বিভিন্ন ব্র্যান্ড নামকে মাস্কট আকারে ব্যবহার করা হয়। বিশ্বকাপে এর ব্যবহার করা হয় বিশ্বের কাছে স্বাগতিক দেশের সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে।
বিজ্ঞাপন
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ‘উইলি’ (১৯৯৬)
বিশ্বকাপের প্রথম মাস্কট ছিল এটি। ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডে সেবার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাস্কটটির ডিজাইনার রেগ হোয়ে উইলির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘উইলি’। ইউনিয়ন পতাকা জার্সি পরা একটি সিংহ ছিল এই মাস্কটটি। যার গায়ে লেখা ছিল ‘ওয়ার্ল্ড কাপ’। যুক্তরাজ্যের একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতীক সিংহ।
মেক্সিকো বিশ্বকাপের ‘জুয়ানিটো (১৯৭০)
১৯৭০ সালে বিশ্বকাপের আয়োজন করে মেক্সিকো। সেবারের মাস্কটির নাম ছিল ‘জুয়ানিটো’। একটি ছেলের আকারে এটি তৈরি করা হয়েছিল, যার পরনে ছিল সবুজ মেক্সিকো ফুটবল জার্সি এবং একটি হলুদ সোমব্রেরো। এটি মেক্সিকো পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী টুপি। সোমব্রেরোর গায়ে 'মেক্সিকো 70' লেখা ছিল। চরিত্রটি মেক্সিকোর সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে।
পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপের ‘টিপ এবং ট্যাপ’ (১৯৭৪)
জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হওয়া ১৯৭৪ এর বিশ্বকাপে মাস্কট ছিল দুটি ছেলে। এদের নাম টিপ আর ট্যাপ। এদের একজনের চুল কালো আর আরেকজনের সোনালী। মাস্কটদের গায়ে ছিল জার্মানির জাতীয় দলের জার্সি। যার গায়ে লেখা ছিল ‘ডব্লিউএম ৭৪’। ডব্লিউএম মূলত ওয়েলমিস্টারচ্যাফ্ট এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যার অর্থ জার্মানিতে বিশ্বকাপ।
আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের ‘গুয়াসিটো’ (১৯৭৮)
সেবারের মাস্কট গুয়াসিটো ছিল আর্জেন্টিনার জার্সি পরা একটি ছেলে। সে একটি টুপি পরেছিল যাতে লেখা ছিল ‘আর্জেন্টিনা ৭৮’। ছেলেটি গলায় রুমাল বাঁধা এবং ডান হাতে চাবুক নিয়ে ফুটবল খেলছে। সাধারণত আর্জেন্টিনার দক্ষ ঘোড়সওয়াররা যা ব্যবহার করে।
স্পেন বিশ্বকাপের নারানজিটো (১৯৮২)
স্পেনের জনপ্রিয় কমলা নারানজিটো। সেটির আদলেই গড়া হয়েছিল ১৯৮২ এর মাস্কট। কমলাটি স্প্যানিশ জাতীয় দলের জার্সি পরা। তার বাম হাতে রয়েছে একটি ফুটবল। স্প্যানিশ ভাষায় নারানজিটো বলতে কমলাকে বোঝায়।
মেক্সিকো বিশ্বকাপের ‘পিকুই’ (১৯৮৬)
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে মেক্সিকো মাস্কট হিসেবে পরিচয় করায় একটি জালাপিনো মরিচের সঙ্গে। যা তাদের দেশের ঐতিহ্য এবং রান্নাঘরের অন্যতম অপরিহার্য অংশ। এটি সোমব্রিরো টুপি পরিহিত এবং গায়ে মেক্সিকোর জাতীয় দলের জার্সি। ঝাল মরিচ এবং আচারে ব্যবহৃত স্প্যানিশ পিক্যানটে নাম থেকে পিকু শব্দটি এসেছে।
ইতালি বিশ্বকাপের ‘সিয়াও’ (১৯৯০)
সিয়াও ছিল ফুটবল মাথায় নিয়ে থাকা ত্রিভুজাকৃতি শরীরে রেখা সহযোগে অঙ্কিত খেলোয়াড়। তার শরীর রাঙানো হয়েছিল ইতালির পতাকার রঙে। দেশটিতে সাধারণ শুভেচ্ছা বা অভিবাদন জানাতে সিয়াও শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের ‘স্ট্রাইকার- দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ পাপ’ (১৯৯৪)
১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একটি কুকুরের আদলে তৈরি করা হয় সেই বছরের মাস্কট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্রই পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুর দেখা যায়। কুকুরটি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় চিত্রিত লাল, সাদা এবং নীল রঙের ফুটবল পোশাক পরেছিল। এর গায়ে লেখা ছিল ‘ইউএসএ ৯৪’।
ফ্রান্স বিশ্বকাপের ‘ফুটিক্স’ (১৯৯৮)
ফ্রান্সের জাতীয় প্রতীক হচ্ছে রুস্টার বা পুংলিঙ্গের মোরগ বা মোরগ শাবক। ১৯৯৮ সালের মাস্কট হিসেবে তারা একটি মোরগকে বেছে নেয়। এর পুরো শরীর নীল রঙের ছিল যা ফ্রান্সের জাতীয় দলের জার্সির প্রতিনিধিত্ব করে। জার্সির গায়ে ‘ফ্রান্স ৯৮’ লেখা ছিল। এর হাতে ছিল একটি ফুটবল।
দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপের অ্যাটো, কায ও নিক (২০০২)
২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপান যৌথভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করে। সেবছর তিনটি মাস্কট ছিল। যাদের নাম- অ্যাটো, কায ও নিক। এরা কমলা, নীল আর বেগুনি রঙের। তিনজনই কম্পিউটারে সৃষ্ট চরিত্র। অ্যাটো কোচ এবং কায ও নিক ফুটবলার।
জার্মানি বিশ্বকাপের ‘গোলিও এবং পাইল’ (২০০৬)
জার্মানির ৬ নম্বর জার্সি পরা একটি সিংহ ছিল গোলিও। আর পাইল হলো একটি কথা বলা ফুটবল।
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ‘জাকুমি’ (২০১০)
দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ চিতাবাঘ হিসেবে জাকুমিকে সাজানো হয়েছিল। এর গায়ে ছিল জাতীয় দলের জার্সি। যার গায়ে লেখা ছিল ‘সাউথ আফ্রিকা ২০১০’। জাকুমির চুল সবুজ রঙের। এর বাম হাতে একটি ফুটবল আছে।
ব্রাজিল বিশ্বকাপের ‘ফুলেকো’ (২০১৪)
ফুলেকো একটি স্থানীয় বিপন্ন প্রজাতির আরমাডিলো গোত্রের অন্তর্গত প্রাণী। এটি ‘ব্রাজিল ২০১৪’ লেখা সাদা রঙের জার্সি পরা ছিল। তার ডান হাতে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বল ছিল।
রাশিয়া বিশ্বকাপের ‘জাবিভাকা’ (২০১৮)
২০১৮ সালে বিশ্বকাপের মাস্কট ছিল বাদামী ও সাদা উলের টি-শার্ট পরিহিত একটি অ্যানথ্রোপোমোরফিক নেকড়ে প্রতিনিধিত্ব করছে। এর টি-শার্টের গায়ে ‘রাশিয়া ২০১৮’ লেখা। চোখে রয়েছে কমলা রঙা চশমা।
কাতার বিশ্বকাপের লা’ইব (২০২২)
চলতি বিশ্বকাপের মাস্কট লা’ইব। এটি সাদা রঙের কাতারি পোশাক পরা এক তরুণের আদলে তৈরি করা হয়েছে। আরবিতে লা’ইব শব্দের অর্থ দারুণ দক্ষ খেলোয়াড়। তার সামনে বল ও তার পোশাকে কাতারি আঙ্গিকে নকশা রয়েছে।
>> আরও পড়ুন: সৌন্দর্যে নায়িকাদেরও হার মানায় যেসব ফুটবলারের সঙ্গী
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ফুট দ্য বল ডটকম