বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর ফিফা বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে। বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার পর থেকে কাতার বিভিন্নভাবে পশ্চিমাসহ বিভিন্ন দেশের সমালোচনায় পড়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিশাল এই আয়োজন সঠিকভাবে শেষ করায় ও আন্তরিকতার কারণে বিশ্ববাসীর মন ছুঁয়েছে আল থানিদের দেশ।
মাত্র পাঁচ দশক আগে স্বাধীনতা ঘোষণা করা দেশ কাতার ২০১০ সালে ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি পায়। এরপরই দেশটির জনসংখ্যাও খুব দ্রুত বেড়ে যায়। দেশটির ৩০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে বেশিরভাগই অভিবাসী শ্রমিক। যাদের বেশিরভাগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিক।
বিজ্ঞাপন
দেড় দশক আগে কাতার কেমন ছিলো সেটি জানা গেছে এর কয়েকবছর আগে কাতারে যাওয়া পাকিস্তানি নারী শেহার বানুর কথায়। তিনি বলেন, '২০০৬ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়ান গেমসের উব্দোধনীতে ছিলাম। সেই সময় এটা অবিশ্বাস্য ছিল যে কাতারের মতো দেশ এমন আয়োজন করছে। তারপর আস্তে আস্তে পরিবেশ বদলে গেছে। নতুন খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম দেখে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে কাতার খেলাধুলা, সংস্কৃতি এবং শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।'
সেই সময়ে রাস্তাগুলো ছিল খালি। ছিল না শপিংয়ের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা। একটি নির্জন পাঁচতারা হোটেল, একটি বেসিক মল এবং অফিসের বিল্ডিংগুলো। এই ছিল পশ্চিম উপসাগরে দাঁড়িয়ে থাকা রাজধানী দোহার চিত্র।
তবে গত এক দশকে কাতারের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। উপসাগরীয় বাস্কের তীরে চকচকে নতুন বিল্ডিংগুলো আভিজাত্যের জানান দেয়।নতুন জেলা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং অত্যাধুনিক ভেন্যুগুলো শান্ত দোহাকে জনাকীর্ণ নগরীতে পরিণত করেছে। এখনও এর প্রসার হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কাতার বিশ্বকাপ, ভক্তরা দেখলেন ইসলামের সৌন্দর্য
বিশ্বকাপ কাতারে বসা নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। সেই আপত্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়, যখন আসার শুরুর মাত্র কিছুদিন আগেই কাতার স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, সেখানে অবৈধ সঙ্গী নিয়ে থাকা যাবে না। পরা যাবে না খোলামেলা পোশাকও। এ নিয়ে বেজায় চটে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে তাদের নীতিতে অনড় থেকেছে কাতার। শেষ পর্যন্ত এসব নিয়ম মেনেই বিশ্বকাপ দেখতে আসেন লাখো দর্শক।
দেশটি এই আয়োজন ঘিরে অকল্পনীয় পরিকল্পনা হাতে নেয়। দ্রুত শুরু করে বাস্তবায়ন। একের পর এক চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়াম বানিয়েই খ্যান্ত হয়নি আল থানিদের কাতার। রাস্তা-ঘাট, হোটেলসহ অত্যাধুনিক যাদুঘর নির্মাণ করে তারা।
এসবের পাশাপাশি তারা যে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা করে তা হলো আরব ও ইসলামের সৌন্দর্য প্রদর্শন। রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে লিখে দেয় ইসলামের বানী, মহানবীর বিভিন্ন কথা। আসর জুড়ে হাজারো স্বেচ্ছাসেবকরা দর্শকদের ইসলামের বিষয়ে জানাতে কাজ করেন। দর্শকরাও আগ্রহের সঙ্গে এগুলো গ্রহণ করেন।
ছয় লেন মহাসড়ক, ঝা চকচকে মেট্রো ট্রেন ব্যবস্থা এবং কমিউটার বাসসহ কাতার এখন যোগাযোগের হাব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যা ২০০০ সালের দিকে অকল্পনীয় ছিল। সেই সময় কাতারের মতো একটি ছোট দেশ ফুটবল বিশ্বকাপের মতো আয়োজন করতে পারে- এই ধারণাও ছিল কল্পনাতীত।
অনেক পশ্চিমা দর্শক কাতারে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। তবে দোহায় পা রাখার পরই তাদের সেই শঙ্কা কেটে যায়। যেমন আমেরিকান তরুণী আন্দ্রেয়া এম আল জাজিরাকে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও অনেকটা বেশি নিরাপদ কাতার।
আরও পড়ুন: কাতারের উন্নয়নের সাক্ষী, এখনও অবিশ্বাস্য লাগে শেহার বানুর
তেত্রিশ বছর বয়সী ব্রাজিল ভক্ত তাতিয়ানা লোপেজের কাতারে এসে সব ভুল ভাঙে। লোপেজ বলেন, ‘এখানকার পুরুষরা খুব বিনয়ী। যদিও আমি কলম্বিয়াতে যতটা দেখতে অভ্যস্ত, তারচেয়ে পাবলিক প্লেসে (মহিলাদের তুলনায়) বেশি পুরুষদের দেখা অদ্ভুত, তারা সবাই খুব সম্মান করেছে।’
পুরো বিশ্বকাপের সময়ে কাতারে কোনো সহিংসতা বা অপরাধের ঘটনা সামনে আসেনি। এছাড়া ইভটিজিং বা হয়রানির অভিযোগও জানাননি কোনো নারী। সফলভাবে আয়োজন শেষ করে মন ছুঁয়েছে কাতার।
একে