ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবির পশুর হাট। হাটে দেশি পশুর আধিক্য থাকায় খুশি ক্রেতারা। দেশি গরুর সরবরাহ বেশি থাকায় কমেছে ভারতীয় গরুর চাহিদা ।তবে দাম নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয় পক্ষের।
ক্রেতা-বিক্রেতারা দাম নিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করছেন। বিক্রেতারা বলছেন হাটে তেমন ক্রেতা নেই, বিক্রি করার মতো দাম বলছেন না ক্রেতারা— দেখে-শুনে চলে যাচ্ছেন। এদিকে ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি, তাই তারা কিনতে পারছেন না।
বিজ্ঞাপন
পাঁচবিবির হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ও মাঝারি আকৃতির ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দামের গরুর চাহিদা বেশি। ভারতের গরু হাটে থাকলেও চাহিদা অনেকটা কম।
ফেনী থেকে আসা গরুর ব্যাপারি শাহাজাহান সিরাজ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি উত্তরবঙ্গের প্রায় সব হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে গিয়ে ঢাকাসহ আশে আশের বড় বড় শহরে বিক্রি করে থাকি। জয়পুরহাট সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে সব ধরনের গরু পাওয়া যায়। কিন্তু গত বছরের চেয়ে এবার গরু কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। বিক্রি করার সময় সেই রকম দাম পাচ্ছি না। সব জিনিসপত্রের দাম বেশি সাথে সাথে গরুর দাম বেড়ে গেছে।
কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যাপারি এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে। তিনি বলেন, শুধু দুই ঈদে গরুর ব্যাবসা করেছি। এই পাঁচবিবির হাটে গত বছর কোরবানি ঈদে ৭ গাড়ি গরু কিনেছিলাম। ঈদে গরু বিক্রি করে লাভ হয়েছিল। কিন্তু এবার গরু কিনতে হয়েছে বেশি দামে, আমি ২ গাড়ি গরু কিনেছি, দেখা যাক কী হয়।
সকাল থেকে হাটে ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ ক্রেতা ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে গরু কিনছেন।
গরুর ব্যাপারিরা আরও জানান, তাদের গতবারের চেয়ে বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়ে সেই হিসাবে দাম পাচ্ছেন না।
বিজ্ঞাপন
গরু বিক্রেতা আবু হোসেন বলেন, গত বছর বাড়িতে ৫টি গরু লালন পালন করে বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ করেছি। এবার আমি ৬টি গরু লালন পালন করছি। আজকে হাটে নিয়ে এসেছি ৩টা গরু। কিন্তু হাটে গরুর ব্যাপারি ও ঈদে কোরবানি দেওয়া ক্রেতাদের সাথে দাম-দরে হচ্ছে না। যে দাম বলছে গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায়, এই দামে বিক্রি করলে আসল টাকাও তোলা মুশকিল হয়ে যাবে।
গরু বিক্রেতা আব্দুল বলেন, আমি হাটে নিয়ে এসেছি ২টা গরু। এই গরুগুলো আমি তিন মাস আগে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। তিন মাস ধরে পালন করলাম। খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন এই গরুর দাম বলছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এই দামে গরু বিক্রি না করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। ঈদের ৩ দিন আগে বিক্রি করবো।
নওগাঁর সাপাহার থেকে হাটে গরু এনেছেন মো. জালাল নামের একজন। তিনি বলেন, আমি এবার ৭টি গরু হাটে এনেছি। ২টি গরু বিক্রি করেছি। এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে যে গরু কিনেছি ক্রেতারা তার দাম বলছে এক লাখ ১০ হাজার।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডা. মো. নিয়ায কাযমীর রহমান বলেন, উপজেলায় চাহিদার তুলনায় ৪০ হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত আছে। গরুর হাট ছাড়াও ২৭টি অনলাইন মাধ্যম ও জয়পুরহাট নামে একটি বেসরকারি ওয়েবসাইট রয়েছে। যেখানে মূল্য ও গরুর ছবিসহ বিবরণ দিয়ে প্রতিদিন আপলোড করা হচ্ছে। গরুর হাটে বিক্রির পাশাপাশি খামারীদের পশু বিক্রয়ের সুবিধার্থে অনলাইনে প্রচার চালানো হচ্ছে।
প্রতিনিধি/এএ