ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কুমিল্লার খামারিরা প্রস্তুত। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে তাদের কাছে। তবে ভারত-সীমান্ত জেলা হওয়ায় অবৈধপথে পশু আসার আতঙ্কে রয়েছেন তারা। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার পশু পালনে খরচ বেশি হচ্ছে। এরমধ্যে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করলে খামারিদের লোকসানে পড়তে হবে। এ অবস্থায় সীমান্ত পথে গরু আসা বন্ধে কঠিন নজরদারি ও সরকারের আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন খামারিরা।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার প্রায় ১০৫ কিলোমিটার এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত। এছাড়াও পাশের জেলাগুলোর সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে প্রতিবছর কোরবানি উপলক্ষে অবৈধভাবে পশু প্রবেশ করে। যে কারণে খামারিদের খরচের তুলনায় কম দামে গরু-ছাগল বিক্রি করতে হয়।
বিজ্ঞাপন
কুমিল্লায় খামারি রয়েছেন ৩৩ হাজার ৯৩০ জন। একেকজন খামারি গরু ও ছাগল পালনে বিনিয়োগ করেছেন কোটি টাকা। সদর দক্ষিণ উপজেলার লক্ষ্মীনগর রাফি ফার্মএগ্রোতে রয়েছে ৫০টি কোরবানির উপযোগী গরু। এখানে একেকটি গরুর মূল্য হাঁকানো হচ্ছে তিন লাখ থেকে দশ লাখ টাকা।
রাফি ফার্মএগ্রোর খামারি জুয়েল আহমেদ বলেন, এবছর খৈল, ভূষি ও গরুর দানাদার খাদ্যে ব্যাপক দাম বেড়েছে। অপেক্ষা করতেছি বাজার পরিস্থিতির জন্য। মূল্য ভাল না হলে পথে বসতে হবে।
তিনি বলেন, সকল দুশ্চিন্তা ভারতীয় গরু নিয়ে। দেখা যায় হঠাৎ করে বানের জলের মতো বাজারে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে। ভারতীয় গরু না আসলে আমরা খামারিরা ভাল দাম পাবো বলে প্রত্যাশা করি।
কথা হয় ২০২১ সালে নির্বাচিত কুমিল্লার শ্রেষ্ঠ খামারি মো. খায়রুল বাশারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই লোকসানের ভয় মনে ভর করছে। লোকসানের দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম কাটে রাত। ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করলে আমাদের লোকসান ছাড়া লাভের কোনও আশা নেই। জেলার শ্রেষ্ঠ খামারির এ অবস্থা হলে বাকি ৩৩ হাজার ৯৩০ জন খামারির আশঙ্কার চিত্র সহজেই ফুটে ওঠে।
খামারি মো. খায়রুল বাশার আরও বলেন, গরু কিনে সারা বছর লালন-পালন করি। যখন কোরবানির ঈদ আসার ছয় থেকে সাত মাস বাকি থাকে, ওই সময় গো-খাদ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এরপরও লাভের আশায় বেশি দামেই খাবার কিনে গরুকে খাওয়াই। খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দামও সে অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হয়। তবে ভারতীয় গরু এলে আমাদের সব শ্রম ও খরচই বৃথা যায়। লোকসানে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হই।
বিজ্ঞাপন
কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় গত বছর ৩৬৩ হাটে কোরবানিযোগ্য দুই লাখ ২৮ হাজার ৬৪২ পশু বিক্রি হয়। সে বছর উদ্বৃত্ত থাকে ১১ হাজার ৬২৫টি পশু। এবার জেলার ৩৩ হাজার ৯৩০ জন খামারি পশু পালন করেছেন। এ বছর পশুর সম্ভাব্য চাহিদা দুই লাখ ৪৮ হাজার। অন্যদিকে প্রায় ১০ হাজার ৪৩২টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
এদিকে ১০ হাজারের বেশি পশু উদ্বৃত্ত থাকলে, সেখানে যদি ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তাহলে বাজার দর নেমে যাবে। এতে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
জেলার খামারিদের সংগঠন ডেইরি অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লার সভাপতি ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা একটি বছর পশু পালন করে স্বপ্ন দেখি। আর চোরাইভাবে ভারতীয় গরু এনে আমাদের স্বপ্ন নষ্ট করে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। তা না হলে আমরা শেষ। অনেক নতুন উদ্যোক্তা আছেন, তারা ধারদেনা করে খামার গড়েছেন। কোরবানির হাটে যদি তাদের গরু-ছাগল ভালো দামে বিক্রি না হয় তাহলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
খামারিদের এই নেতা আরও বলেন, শুধু ভারতীয় গরু প্রবেশ ঠেকালেই হবে না। সড়কে চাঁদাবাজি, বেশি দামে টোল আদায়, পরিবহনে বেশি ব্যয় ও ছিনতাইয়ের কারণেও অনেক খামারি প্রতি বছর নিঃস্ব হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এমন কোনও ঘটনা এ বছর ঘটেনি। তবে আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই, যেন খামারিদের কোনও ক্ষতি না হয়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই গরু দেশে প্রবেশ ঠেকাতে এবার কঠোর অবস্থানে আছে প্রশাসন। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে। আর হাট ও সড়কেও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকবে। আমরা চাঁদাবাজিসহ সব অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লায় স্থায়ী পশুর হাট আছে ৭৫টি। এ পর্যন্ত অস্থায়ী হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৩৭৯টি। নির্ধারিত হাসিল প্রতি ১ টাকায় ১১ পয়সা। এর বাইরে জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ উদ্ভাবিত ‘অনলাইন পশুর হাট’-এ পশুর বেচাকেনাকে উৎসাহিত করা হয়।