মাত্র পাঁচ দিন পরই ঈদুল আজহা। কোরবানির সময় ঘনিয়ে আসায় জয়পুরহাটে জমে উঠতে শুরু করেছে গবাদি পশুর হাট। তবে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়লেও হাটে কেনাবেচা তুলনামূলক কম। ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার হাটে গবাদি পশুর দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে। এদিকে হাটের ইজারাদার বলছেন, পর্যাপ্ত আমদানি আছে, বেচাকেনা সে অনুপাতে নেই।
তবে দাম নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয় পক্ষের। ক্রেতা-বিক্রেতারা দাম নিয়ে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করছেন। বিক্রেতারা বলছেন হাটে তেমন ক্রেতা নেই, বিক্রি করার মতো দাম বলছেন না, দেখে-শুনে চলে যাচ্ছেন। ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি, তাই তারা কিনতে পারছেন না।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৪ জুন) সরেজমিনে জয়পুরহাট পৌর এলাকার নতুনহাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ও মাঝারি আকৃতির ৮০ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা বেশি।
চট্টগ্রাম থেকে আসা গরুর বেপারী তৌফিক চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি উত্তরবঙ্গের প্রায় সব হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামের আশেআশের বড় বড় শহরে বিক্রি করে থাকি। জয়পুরহাট সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে সবধরনের গরু পাওয়া যায়। কিন্তু গত বছরের চেয়ে এবার গরু কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। সব জিনিসপত্রের দাম বেশি, এতে গরুর দামও বেড়ে গেছে।
বেপারী সাইফুল ইসলাম এসেছেন ফেনী থেকে। পেশায় তিনি একজন মজুদ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, শুধু দুই ঈদে গরুর ব্যবসা করে থাকি। এই জয়পুরহাটের নতুনহাটে গত বছর কোরবানি ঈদে ছয় গাড়ি গরু কিনেছিলাম। ঈদে গরু বিক্রি করে লাভ হয়েছিল। কিন্তু এবার গরু কিনতে হয়েছে বেশি দামে, আমি দুই গাড়ি গরু কিনেছি, দেখা যাক কী হয়।
গরুর বেপারীরা আরও জানান, তাদের গতবারের চেয়ে বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। আর মাত্র পাঁচ দিন পর ঈদ। সেই তুলনায় ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়ে এবছর একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
আর এই দিকে গরুর বিক্রেতাদের সাথে দাম নিয়ে কথা বললে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। গরু বিক্রেতা সোহেল বলেন, গত বছর বাড়িতে চারটি গরু লালন-পালন করেছিলাম। বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ করেছি। এবার ছয়টি গরু লালন-পালন করেছি। আজকে হাটে নিয়ে এসেছি তিনটি গরু। কিন্তু হাটে গরুর বেপারী ও ঈদে কোরবানি দেওয়া ক্রেতাদের সাথে দাম-দরে হচ্ছে না। যে দাম বলছে গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এই দামে বিক্রি করলে আসল টাকাও তোলা মুশকিল হয়ে যাবে।
নওগাঁর বদলগাছী থেকে আসা গরু বিক্রেতা কাওসার আহমেদ বলেন, আমি হাটে নিয়ে এসেছি দুটি গরু। এই গরুগুলো তিন মাস আগে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। তিন মাস ধরে পালন করলাম। খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন এই গরুর দাম বলছে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। এই দামে গরু বিক্রি না করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। ঈদের এক দিন আগে বিক্রি করব।
এদিকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
জয়পুরহাটের নতুনহাট গোহাটি ইজারাদারের দায়িত্বরত অলিদ হোসেন বলেন, প্রতিটি গরুর সাড়ে পাঁচশ টাকা করে টোল নেওয়া হচ্ছে। যারা টোলের রশিদ লিখছেন তারা ৫০ করে নিচ্ছেন। সরকারি মূল্যের বাইরে টোল আদায় করা হচ্ছে না।
অলিদ হোসেন বলেন, এ বছর ভারতীয় গরুর তেমন আমদানি না থাকায় হাটগুলোতে দেশি গরুর দাম চড়া। এখানে তুলনামূলক ছোট গরুর দাম বেশি আর ক্রেতা কম। তবে হাটে সবধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার আছে।
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, কোরবানির হাটে গরু বেচাকেনা জন্য বহনকারী গাড়ি ভালোভাবে যেন প্রবেশ করতে পারে এবং শহরে বা রাস্তায় যেন যানজট না লাগে সেজন্য পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাটে ছিনতাই যেন না হয় এবং নির্বিঘ্নে পশু বেচাকেনা হয় এজন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিনিধি/জেবি