কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নাটোর জেলায় তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৫টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। শেষ সময়ে পশু যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ইতোমধ্যে নাটোরের বিভিন্ন হাটে ও খামারে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ।
জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নাটোর জেলায় ১৯ হাজার খামারে তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৫ টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত কোরবানির ঈদে ছিল তিন লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৮টি পশু। যার মধ্য নাটোর সদর উপজেলায় ৫৮ হাজার ৭৬০টি, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ২৭ হাজার ৯১৮টি, নলডাঙ্গা উপজেলায় ২৯ হাজার ২৮০টি, লালপুর উপজেলায় ৪১ হাজার ৯০৭টি, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৮৫ হাজার ১০০টি, সিংড়া উপজেলায় ৫৫ হাজার ১০১টি এবং বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৪৮ হাজার ৫০৮টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। এবার নাটোর জেলায় প্রায় দুই লাখ ২৫ হাজার কোরবানির পশু জবাই করা হবে।
বিজ্ঞাপন
উদ্বৃত্ত প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার পশু ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হাটে বিক্রি করা হবে। এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় দু'টি অনলাইন প্লাটফর্ম 'নাটোর পশুর হাট' ও 'অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাট' থেকে কোরবানির পশু কেনাবেচা করা হবে। এছাড়া জেলার ৭ উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিস, ব্যক্তি উদ্যোগে এবং খামারসহ প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি অনলাইন ফেসবুক প্লাটফর্মে কোরবানির পশু কেনাবেচা কাজ শুরু করেছেন।
নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট বসে নাটোর সদরের তেবাড়িয়া, বড়াইগ্রাম উপজেলার মৌখাড়া হাট, বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, গোপালপুর উপজেলার মধুবাড়ী এবং সিংড়া ফেরিঘাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে।
শহরের তেবাড়িয়া এলাকার খামারি আব্দুল মোতালেব বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য খামারে ১২টি গরু প্রস্তুত করেছেন। প্রাণি সম্পদ অফিসের পরামর্শে পুষ্টিকর খাবার, খৈল, গম, ভূষি, ছোলা এবং সবুজ ঘাস খাইয়ে খুব সহজেই পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। যদি বাজার ভালো থাকে তাহলে প্রতি গরু আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর এলাকার খামারি তানজিবুল রহমান বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য খামারে ১৬টি গরু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে গরুর বাজার মূল্য মোটামুটি ভালো। আশা করছি, দাম কিছুটা বাড়তে পারে। গোবাদি পশুর খাদ্যের দাম দিনে দিনে যে হারে বাড়ছে, তাতে পশু পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি গরুর বাজার মূল্য ঠিক থাকে তাহলে কিছু টাকা আয় করতে পারবো।
সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকার খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, লাভের আশায় তিন বছর আগে খামার গড়েছেন তিনি। তার খামারে মোট ১৮টি ষাড় গরু রয়েছে। যার মধ্য ১৫টি গরু কোরবানির বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি গরুর দাম বর্তমান বাজারমূল্যে থাকে তাহলে খামারিরা লাভবান হবে।
বিজ্ঞাপন
গুরুদাসপুর উপজেলার খামারি আজিজুর হক বলেন, তিন বছর আগে শখের বশে একটি খামার গড়েছি। আমার খামারে বর্তমানে ১৭টি ষাড় গরু রয়েছে। যার মধ্য দুইটি গরু বিক্রি করেছি। বাকী গরু ঈদের আগেই বিক্রির আশা রয়েছে। যদি এমন দাম থাকে তাহলে কিছু টাকা আয় করতে পারবো।
খামারে পশু কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি প্রতি বছর খামার থেকে গরু কিনে থাকি। খামার থেকে গরু কিনলে সুবিধা রয়েছে, ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাড়ে হয় না। তবে এ বছর গরুর দামটা বেশি।
হাটে গরু কিনতে আসা আফজাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, কোরবানি করার জন্য মাঝারি গরু খুঁজছি। এবছর গরু প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বেশি মনে হচ্ছে। যেহুত কোরবানি করতে হবে তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনতে হচ্ছে।
গোলাম কিবরিয়া নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এ বছর হাটে পর্যাপ্ত সব ধরনের গরু উঠেছে। দাম কিছুটা বেশি। তবে বড় গরুর তুলনায় মাঝারি গরুর দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। ভাবছি ১ লাখ টাকার মধ্য একটি মাঝারি গরু কিনবো।
নাটোর জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা ঢাকা মেইলকে বলেন, এ বছর ১৯ হাজার খামারে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোরবানির পশু প্রস্তত রাখা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে খামারীদেরকে প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি/এএ