কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২) যেসব সম্পদে কোরবানি ওয়াজিব হয়
কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়, বরং ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ এই তিন দিন কোরবানি করা যায়। ১০ তারিখে করা উত্তম।
বিজ্ঞাপন
কেবল সোনা-রুপা থাকলেই কোরবানি ফরজ হয়, তা সঠিক নয়। বরং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বেশি যদি কারো অতিরিক্ত স্থাবর সম্পত্তি থাকে যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে শামি: ৯/৪৫৩; খোলাসাতুল ফতোয়া: ৩/৩০৯; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬)
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য যে সকল সম্পদ ধর্তব্য হয়, তার একটা বিবরণ নিচে দেওয়া হলো
১. সোনা
২. রুপা
৩, ব্যবসায়িক পণ্য (যেগুলো বিক্রয় করার জন্য জন্য ক্রয় করা হয়েছে)।
৪, নগদ টাকা।
৫. ব্যাংকে, বীমা কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে থাকা টাকা এবং অন্যের কাছে পাওনা টাকা (নির্ধারিত শর্তে)
৬. প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোনো ধরণের সম্পদ যেমন- জমি, ভবন, গাড়ি ইত্যাদি ৷
খাবার দাবার, পোশাক পরিচ্ছদ, বসবাসের ঘর, বাহন ইত্যাদি, যা ছাড়া মানুষ জীবন ধারণ করতে অক্ষম, এসব বস্তুকে বলা হয় প্রয়োজনীয় বস্তু। এছাড়া যত সম্পদ থাকবে, এর ওপর কোরবানি ও সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়। যদি নগদ অর্থ দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করতে না পারে, তাহলে ঋণ করে হলেও কোরবানি দিতে হবে। পরে তা আদায় করে দেবে। যদি এটিও সম্ভব না হয়, কোরবানির দিনসমূহ চলে যায়, তাহলে পরবর্তীতে একটি মধ্যমপন্থী বকরির মূল্য কোরবানির নিয়তে সদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ৪৫৩-৯/৪৫২; দুররুল মুখতার: ৯/৪৬৩)
প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হয়। (আহসানুল ফতোয়া: ৭/৫০৬)
বিজ্ঞাপন
প্রয়োজনীয় বাহন বা গাড়ি-ঘোড়ার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। (সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৪/১৯-২০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১০২০৭; আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৬৫)
ব্যবসার নিয়তে গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি কিনলে তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং এসবের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭১০৩-৭১০৪)
তবে, ভাড়ায় চালিত গাড়ি জাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই এমন গাড়ির মূল্যের ওপর কোরবানি বা জাকাত দিতে হয় না। তবে সেগুলো থেকে ভাড়া বাবদ অর্জিত আয়ের যে অংশ প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের পর অতিরিক্ত থাকবে তা জাকাতযোগ্য বা কোরবানির উপযোগী সম্পদের মধ্যে গণ্য হবে। (সূত্র: কিতাবুল আসল: ২/৯৭; ফতোয়ায়ে খানিয়া: ১/২৫১; বাদায়ে: ২/৯১; আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৭৩)
কোনো ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর কোরবানি আদায় না করে অতঃপর ওই তিনদিন পর সে গরিব হয়ে যায় তাহলে তার ওপর কোরবানিযোগ্য ছাগল সদকা করা আবশ্যক। দরিদ্র হওয়ার কারণে কোরবানি মাফ হবে না। সুতরাং সে আদায় করে যেতে না পারলে তা আদায় করে দেওয়ার জন্য অসিয়ত করে যেতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৬৫ আল ইখতিয়ার: ৫/২০ মোবাইল শামেলা থেকে গৃহীত)
সম্পদের যথাযথ হিসাব করা কষ্টকর হলে আপনার সম্পদের পূর্ণ হিসাব আপনার কাছের কোনো হক্কানি আলিমের কাছে পেশ করুন। তিনি দেখে সিদ্ধান্ত দেবেন। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি আমল করুন। আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শরিয়তের নির্দেশনা মেনে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের কোরবানি কবুল করুন। আমিন।

















































































































































































































































































































