কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরবানিতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের শিক্ষা এবং আল্লাহর ভালোবাসায় নিজের সব চাহিদা কোরবানি (ত্যাগ) করার শিক্ষা রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত’ (সুরা আনআম: ১৬২)। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন- ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন’ (সুরা কাউসার: ২)
বিজ্ঞাপন
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্ত থাকেন, তাহলে তার জন্য আগে ঋণ পরিশোধ করা জরুরি। কারণ শেষ বিচারের দিন হাদিস অনুযায়ী, পাওনাদারকে নিজের নেকি দিয়ে দিতে হবে নতুবা পাওনাদারের গুনাহ কাঁধে নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। এছাড়াও আব্দুলাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে গড়িমসি (দেবো-দিচ্ছি) করার অভ্যাস থাকে তবে সে দুষ্টু লোক। আর গড়িমসি করা এক প্রকারের জুলুম। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বা)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঋণ করার পর মনে মনে সঙ্কল্প করে রাখে যে, সে ওই ঋণ পরিশোধ করবে না, তবে সে আল্লাহর সাথে চোর হয়ে সাক্ষাৎ করবে’ (ইবনে মাজাহ: ২৪১০)
তাই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কোরবানির দিনগুলোতে ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি না থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। আর ঋণ পরিশোধের পর যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯২)
কোরবানির নেসাব হলো- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্যের সম্পদ (টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা)।
মনে রাখতে হবে, কোরবানির নেসাব জাকাতের মতো সারাবছর জমা থাকা আবশ্যক নয়, বরং কোরবানির দিনগুলোতে অর্থাৎ ‘১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম নর-নারী ঋণমুক্ত থাকা অবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তবে তার কোরবানি করা ওয়াজিব।’ (রদ্দুল মুখতার: ৬/৩১২)
বিজ্ঞাপন
অনেকে ঋণ করে হলেও কোরবানি করে থাকেন, এমনটি অনুচিত। কারো কারো মনের অভিব্যক্তি হলো, ‘কোরবানির দিন আমার সন্তান কার মুখের দিকে চেয়ে থাকবে।’ এমন চিন্তা থেকে কোরবানি করলে কোরবানি হবে না, গোশত খাওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চই আমার কাছে কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছে না, তবে আমার কাছে পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ: ৩৭)
প্রসঙ্গত, স্বর্ণ বা রুপা পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হলে এবং উভয়টি মিলিয়ে যদি নেসাব পরিমাণ হয়, অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয়, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছেদ, আসবাবপত্র, তৈজসপত্রও ধর্তব্য হবে।
রাসুলুল্লাহ (স.) কোরবানি করা থেকে বিরত থাকা ব্যক্তিদের অভিসম্পাত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল (স.) বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমদ: ৮২৭৩; ইবনে মাজাহ: ৩১২৩; হাকেম: ৭৫৬৫-৭৫৬৬)
তাই যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব সে যেন তা পালন করার মাধ্যমে ওয়াজিব তরক করার গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের আগে ঋণ পরিশোধ করার মাধ্যমে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ঋণ থাকলে কোরবানি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কি কোরবানি করতে পারবে? ঋণের টাকায় কোরবানি, কোরবানি না করলে মানুষ কী বলবে