দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে ঘিরে তাই বাঁশের খুঁটি আর ত্রিপলে ঢেকে বাহারি সাজে প্রস্তুত করা হয়েছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব হাটে উঠবে লাখ লাখ কোরবানির পশু। এ লক্ষ্যে পশুর হাটগুলোয় এখন জায়গা বরাদ্দের কার্যক্রম চলছে।
প্রায় প্রতিটি হাটেই নিজেদের পছন্দের জায়গা বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী রোববার (২৫ জুন) থেকে তারা নির্ধারিত এসব হাটেই তুলবেন কোরবানির পশু। হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাটের ভেতরেই কোরবানির পশু বাঁধার জন্য বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে শেড তৈরি করা হয়েছে। আবার কিছু হাটে এখনও শেষ ধাপের কাজ চলছে। তবে ইতোমধ্যেই হাটে বিভিন্ন খামারের লোকজন ছাড়াও ব্যবসায়ীরা এসেছেন। তারা ইজারাদার ও হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পছন্দের স্থান নির্ধারণ করছেন। কেউ কেউ আবার স্থান নির্ধারণ করে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে নাম ও মোবাইল নম্বর লেখা পোস্টারও সাঁটিয়ে রাখছেন।রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গার পশুর হাটে এবার গরু নিয়ে আসবেন উচ্ছ্বাস ব্যাপারী। এ জন্য হাটে জায়গাও বরাদ্দ করে রেখেছেন। ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে এই গরু ব্যবসায়ী বলেন, আমি এই হাটে ছয়টি গরু নিয়ে আসব। এ জন্য হাটে নিজের পছন্দের জায়গা বরাদ্দ করে রেখেছি।
একই কথা জানিয়েছেন আর আর এগ্রো বিডির মালিক মো. মাসুম। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমাদের খামার নরসিংদীর রামপুরা এলাকায়। সেখান থেকে প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে গরু নিয়ে আসব। তাই এই হাটেও জায়গা বরাদ্দ করে রেখেছি।
দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, এবার রাজধানীর দুই সিটির ১৯টি স্থানে বসবে কোরবানির পশুর হাট। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার ১০টি স্থানে হাট বসবে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় ইতোমধ্যেই উভয় সিটি করপোরেশন এসব হাটের ইজারাদার ও স্থান সুনির্দিষ্ট করেছে।দক্ষিণ সিটির অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শশ্মানঘাট সংলগ্ন আশ-পাশের খালি জায়গা, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা।
এছাড়াও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকায় উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা এবং লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গায়ও পশুর হাট বসবে।এদিকে, উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি স্থায়ী ছাড়াও ৯টি অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং আফতাব নগরস্থিত ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত সাবেক বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অংশের খালি জায়গা, দক্ষিণখানের কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদ নগর) পশুর হাট, মোহাম্মদপুর বছিলা এলাকায় ৪০ ফুট সড়ক সংলগ্ন রাজধানী হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা, মিরপুর গাবতলী গবাদি পশুর হাট (স্থায়ী হাট), মিরপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ নম্বর সেকশনের (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গা, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত কাঁচকুড়া বেপারীপাড়ার রহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠের খালি জায়গা এবং খিলক্ষেত খাঁ-পাড়া উত্তর পাশের জামালপুর প্রোপার্টিজের খালি জায়গা।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, কোরবানির পশুর হাটকে ঘিরে গরু ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অন্যবারের মতো এবারও কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অভিযোগ পেলেই তারা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।সম্প্রতি শেরে-বাংলা নগর থানা সংলগ্ন শুক্রাবাদ এলাকায় কোরবানির হাটে গরু না নেওয়ায় এক ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠে। পরে ওই ঘটনায় গরু ব্যবসায়ী জুলফিকার বাদী হয়ে শেরে-বাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর ইতোমধ্যেই ওই ঘটনায় এক যুবলীগ নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কোনোমতেই পশুর হাটের চৌহদ্দির বাইরে কোনো পশু রাখা যাবে না। সেই সঙ্গে পশুবাহী ট্রাক কোন হাটে যাবে- সে ব্যাপারে ট্রাকের সামনে ব্যানার টাঙানো থাকবে। হাটে নেওয়ার জন্য গরু নিয়ে টানাটানি করা যাবে না। এছাড়াও ব্যবসায়ীকে তার পছন্দমতো হাটে গরু নিয়ে যেতে দিতে হবে। এ ব্যতিক্রমী কোনো ধরণের ঘটনা ঘটলেই কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে বেশকিছু বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। কোরবানির পশুর হাটে যে কেনাবেচা, সেটার প্রতি বিশেষ নজরদারি রয়েছে। কারণ ইজারা পরবর্তী চাঁদাবাজি ও জাল টাকা জড়িয়ে দেওয়ার মতো একটি বিষয় থাকে। অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম রাসায়নিক দ্রব্য খাইয়েও গরুকে মোটাতাজাকরণ করা হয়। কোরবানির হাটে অনেকেই নানাভাবে প্রতারিত হয়। এসব বিষয়ে র্যাবের নজরদারি রয়েছে।
কেআর/আইএইচ