তিনদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে জমে ওঠেছে মৌলভীবাজার জেলার পশুর হাটগুলো। তবে এবছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব পড়েছে পশুর হাটে। বাজারে নামীদামী বিভিন্ন জাতের বৃহৎ গরু ওঠলেও ক্রেতাদের আগ্রহের তালিকায় রয়েছে ছোট-মাঝারি দেশি গরুর প্রতি। তবে অনেক ক্রেতারা হাটবাজার থেকে সরাসরি না কিনে ক্ষুদ্র খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে লালনপালন করা গরু কিনতে আগ্রহী। পশুর হাটের পাশাপাশি ক্রেতারা এখন ঝুঁকছেন সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে। বিক্রেতাদের বাড়িতে গিয়ে পশু দেখা ও কেনাকাটা করতে পারায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অনেক ক্রেতারা।
সরেজমিনে কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় পশু বিক্রির ব্যস্ততা যেমন বেড়েছে তেমন রয়েছে ক্রেতাদের আনাগোনা। অনেকেই হাটে ঘুরতে এসেছেন, দেখছেন ও যাচাই করছেন। আর করছেন চাহিদামতো পশুর দরদাম। এই হাটগুলোতে বিক্রেতাদের ব্যস্ততা ছিলো চোখে পড়ার মতো।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, পশু কেনাবেচার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন অনেকেই। ক্ষুদ্র খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে লালনপালন করা পশুর মূল্য, ঠিকানাসহ ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করছেন। তা দেখে ক্রেতারা যোগাযোগ করছেন, কিনছেন পছন্দসই কোরবানির পশু।
শহরের বাসিন্দা নূর হোসেন জানান, এক সপ্তাহ পূর্বে অনলাইনে একটি মাঝারি খামারের কয়েকটি পশুর ছবি দেখে সরাসরি চলে যান সদর উপজেলার একটি গ্রামে। পছন্দনীয় ও সস্তায় কোরবানির পশু কিনতে পেরে খুশি তিনি।
রাজনগর উপজেলার রাসেল মিয়া জানান, সোনাটিকি গ্রামে দুটি দেশি গরু বিক্রয় হবে বলে খবর পান। পছন্দ ও দরদামে সুবিধা হওয়ায় একটি গরু কিনেন। তিনি বলেন, পনেরো দিন হলো গরু কিনে সেখানেই রেখে এসেছি। ঈদের আগের দিন বাসায় আনবো।
বিজ্ঞাপন
রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের বয়তুল আলী জানান, বাড়িতে ৫টি দেশি গরু লালনপালন করেন। ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও আপ করার ফলে ইতোমধ্যে ৪টি গরু তার বাড়ি থেকে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, হাটে গরু নিয়ে গেলে যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেশি হয়, ক্রেতাদেরও বাড়তি খরচ হয়। তাই ক্রেতারা আমার বাড়িতে এসে কেনায় দুপক্ষের লাভ হচ্ছে।
সদর উপজেলার খামারি আলাল খান জানান, বাড়িতে ছোট খামার আছে। হাটে ৮টি মাঝারি আকারের গরু তুলেছি। ২টা বিক্রি করেছি, একটা ৮০ হাজার আরেকটা ৭৫ হাজার টাকায়। বাজারে এই সাইজের দেশি গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
মৌলভীবাজার শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় অস্থায়ী বাজারে শাহীওয়াল প্রজাতির একটি গরু নিয়ে এসেছেন আমজাদ মিয়া। তিনি বলেন, বাড়িতে লালনপালন করেছি, বাজারে প্রথম তুলেছি। দাম চাচ্ছি ২ লাখ টাকা, ১ লাখ ৮০ হাজার হলে দিয়ে দেবো।
জানা গেছে, এবারও বাজারে ওঠেছে নানা রঙের ছোট-বড়-মাঝারি গরু। ছোট গরু ৩০ থেকে ৫০ হাজার ও মাঝারি গরু ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় গরু দেড় লাখ থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রেতারা কিছু ষাঁড় গরুর দাম হাঁকছেন ৭ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে দেশি মাঝারি গরুগুলো। ক্রেতারা বড় গরু রেখে ভিড় করছেন মাঝারি গরুগুলোর পাশে। করছেন দরদাম। বিক্রেতার সাথে ক্রেতার মতের মিল হলেই কিনে নিচ্ছেন পছন্দের গরুটি।
/এএস