রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কোরবানির গোশত বণ্টনে সতর্কতা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৩, ১২:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরবানির গোশত বণ্টনে সতর্কতা

কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। ঈদুল আজহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো কোরবানি। এই ইবাদতকে নিছক উৎসব মনে করা ভুল। যথাযথভাবে কোরবানি করা এবং গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে শরিয়তের নির্দেশনা না মানলে এই ইবাদত সওয়াবশূণ্য হয়ে যেতে পারে। তাই ইসলামি আইনজ্ঞরা কোরআন-সুন্নাহর আলোকে গোশত বণ্টনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।

কোরবানির গোশতের সঠিক বিতরণ কোরবানীর মাংস বণ্টন পদ্ধতি
কোরবানির গোশত বিতরণের উত্তম পদ্ধতি হলো—এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া। অবশ্য পুরো মাংস যদি কেউ নিজে রেখে দেয়, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২২৪; আলমগিরি: ৫/৩০০)


বিজ্ঞাপন


গোশত বিতরণে সতর্কতা কুরবানীর মাংস বণ্টনে সাবধান
১. মান্নতের গোশত যদি নজরে জবাহ হয়, পুরোটাই বিতরণ করতে হবে। মান্নতকারী ও তার পরিবার এই গোশত খেতে পারবে না; বরং পুরোটাই দান করে দিতে হবে এবং যারা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত শুধু তাদেরকেই দেওয়া যাবে, ধনীদের দেওয়া যাবে না। নজরে জবাহ তথা মান্নতের জবাইয়ের মূল উদ্দেশ্য হয় পশু জবাই করা এবং গোশত সদকা করে দেওয়াই মূল মাকসাদ। এ জবাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নেই।

তবে, নজরে উজহিয়্যাহ তথা ‘মান্নতের কোরবানি’ যদি তাকাররুব ইলাল্লাহ হয় এবং এতে যদি গোশত খাওয়ার নিয়তও যুক্ত থাকে, তাহলে ওই গোশত মান্নতকারী ও ধনী সবাই খেতে পারবে। (ফতোয়ায়ে কাসিমিয়া: ১৭/৮২-৮৩) 

২. সামাজিকভাবে কোরবানির মাংস বিতরণে ভুল প্রচলন
কিছু মহল্লায় প্রচলিত আছে সকল কোরবানিদাতার কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ (যে অংশ গরিবদের জন্য রাখা) গোশত সংগ্রহ করে তা আবার সমাজের প্রতিটি ঘরে বণ্টন করা হয়। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় কোরবানিদাতা চক্ষুলজ্জার ভয়ে কিংবা সামাজিক চাপে পড়েই মাংস দিতে বাধ্য হন। একইসঙ্গে এক্ষেত্রে ধনী, গরিব এমনকি স্বয়ং কোরবানিদাতাও ওই গোশতের ভাগ পান। কিন্তু সমাজে অনেকের কোরবানি মান্নতের থাকে, যার মাংসে শুধু গরিবদের অধিকার। তাই এ পদ্ধতি জায়েজ নেই। সামাজিক বণ্ঠন জায়েজ

তবে যদি মান্নতের না হয়; কোরবানিদাতা স্বেচ্ছায় এখানে মাংস দেন এবং তা শুধু গরিবদের মাঝেই বিতরণ করা হয়, তাহলে তা জায়েজ হবে। (দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট, ফতোয়া নং: ১৫৩৮৩১) কুরবানীর মাংস সামাজিক বণ্টন


বিজ্ঞাপন


৩. শরিকে কোরবানির ক্ষেত্রে গোশত বণ্টনে সতর্কতা 
শরিকে কোরবানি করলে— সবার অংশ সমান হতে হবে এবং কারও অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারও আধা ভাগ হলে কোনো শরিকের কোরবানিই শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭) শরীকে কোরবানীর মাংস বণ্টন

৪. কোরবানিকৃত পশুর পা-মাথা ভাগের ক্ষেত্রে করণীয়
একাধিক শরিকে কোরবানি করলে ওজন করে মাংস বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নেই। পা ও মাথার ক্ষেত্রেও একই বিধান। তবে কেউ যদি নিজের ভাগের অংশ অন্যজনকে দিয়ে দেয়, তাতে সমস্যা নেই (দুররুল মুখতার: ৬/৩১৭, কাজিখান: ৩/৩৫১)।

৫. আকিকার মাংস বণ্টনেও একই বিধান কোরবানির মাংস বণ্টন
আকিকার মাংস সন্তানের মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং ধনী-গরিব সবাই খেতে পারবেন। আকিকার মাংসের বণ্টন ও ব্যবহার কোরবানির মতোই। কিছু নিজেদের জন্য রাখা, কিছু আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া এবং কিছু সদকা করা উত্তম (ইলাউস সুনান: ১৭/১১৮, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩০৪)।

৬. গোশত দেওয়ার চুক্তিতে কসাই ঠিক করা
কোরবানির পশুর গোশত দেওয়ার চুক্তি কসাই ঠিক করা জায়েজ নেই।  বিষয়ে ফতোয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েজ, তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। (কিফায়াতুল মুফতি: ৮/২৬৫)

কোরবানির মাংস দান না করলে কি ক্ষতি হবে?
কোরবানি পশুর মতো তার মাংসের মালিকানাও কোরবানিদাতার। সেক্ষেত্রে ওই মাংস নিজে খাওয়া কিংবা কাউকে দেওয়া একান্তই তার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তিনি চাইলে যেমন পুরোটাই বিতরণ করে দিতে পারেন, আবার চাইলে পুরোটা খাওয়ার অধিকারও তার আছে। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে- আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, তোমরা কোরবানির মাংস যে পরিমাণ ইচ্ছা খাও, অন্যদেরকে খাওয়াও এবং যতটুকু ইচ্ছা জমা করে রাখো। (সুনানে তিরমিজি: ১৫১০) কোরবানির মাংস ভুল বণ্টন

ধনীদের কোরবানির মাংস দেওয়া যাবে?
এটা যেহেতু কোরবানিদাতার নিজস্ব সম্পদ, তাই তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে উপহার হিসেবে দিতে পারবেন। ইসলামি আইনবেত্তা ফকিহদের অভিমতও এটাই।

কোরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়া যাবে?
কোরবানির মাংস অন্য ধর্মাবলম্বীকেও দেওয়া জায়েজ। (ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফতোয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০) সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) তার ইহুদি প্রতিবেশীকে দিয়ে গোশত বণ্টন শুরু করেছিলেন (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ: ১২৮)

প্রসঙ্গত, কোরবানির গোশত জমা করে রাখা জায়েজ। কেননা হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) কোরবানির মাংস জমা রাখতেও বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা খাও, জমা করে রাখো এবং দান-খয়রাত করো।’(বুখারি: ৫৫৬৯; মুসলিম: ১৯৭২; নাসায়ি: ৪৪২৬; মুআত্তা মালিক: ২১৩৫) ওয়াজিব কোরবানি হোক কিংবা নফল কোরবানি হোক; গোশত খাওয়া কিংবা হাদিয়া দেওয়ার হুকুমের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

কোরবানির গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণমূল্য সদকা করে দিতে হবে। (ইলাউস সুনান: ১৭/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২২৫; কাজিখান: ৩/৩৫৪; আলমগিরি: ৫/৩০১) কোরবানির মাংস বণ্টনের পদ্ধতি

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরবানির গোশত বণ্টনে শরিয়তের নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন। কোরবানির মাংস কতদিন রাখা যাবে, কোরবানির মাংস কয় ভাগে ভাগ করতে হয়, কুরবানীর গোস্ত বন্টনের হাদিস, কোরবানির নাম দেওয়ার নিয়ম, কোরবানির আয়াত ও হাদিস, কোরবানির গরুর ভাগের নিয়ম, কুরবানির গোস্তের বিধান, কোরবানির নিয়ম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর