প্রায় ২৬ বছর ধরে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড থেকে ঢাকায় কোরবানিতে বিক্রির জন্য গরু নিয়ে আসেন শামসুল বেপারী। দ্রুত ট্রাক নিয়ে পদ্মা পাড়ে এলেও ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্লান্ত হতে হয়। সঙ্গে গরুগুলোও নিস্তেজ হয়ে পড়ত। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ার পর আগের সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন ঘাটে এসে আর দীর্ঘসময় ঘাম ঝরাতে হবে না। মাত্র কয়েক মিনিটেই পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানো সেতু দিয়ে পার হচ্ছেন। ঘাটের দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে এমন হাজার হাজার পশু ব্যবসায়ীর মনে তৃপ্তির রেখা এঁকে দিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাজধানীর শ্মশান ঘাটের পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা এমন স্বস্তির কথা জানান। তাদেরই একজন শামসুল বেপারী। যিনি ২৬ বছর ধরে ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় গরু নিয়ে আসেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
পদ্মা সেতু দিয়ে গরু নিয়ে আসার অনুভূতি জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে শামসুল বেপারী বলেন, ‘একদিকে স্বপ্নপূরণ হইছে। আরেক দিকে ফেরির কষ্ট শেষ হইলো। ২৬ বছর ধইরা ঘাটের যত কষ্ট ছিল সেতুতে ওঠার পর সব শেষ।’

সরেজমিন পোস্তাগোলা-শ্মশানঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে হাট বসার কয়েকদিন বাকি থাকলেও গরু নিয়ে কিছু কিছু পাইকার ঢাকায় ঢুকেছেন। তাদের মূল হাটের বাইরে আপাতত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে সেতুর তুলনায় ফেরিতে টোল কম হওয়ায় কেউ কেউ এখনো ফেরিতে গরু পার করছেন বলে জানা গেছে। যদিও গাড়ি সংকটের কারণে সময় নিয়ে ছাড়ছে ফেরি। তবে আগের তুলনায় বেশি গতিতে চলায় দ্রুত নদী পার হয়ে মাওয়া আসা সম্ভব হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার দুপুরে পোস্তাগোলা পুলিশ ফাঁড়ির পেছনের মাজারের সামনে গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের। একই এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী মিলে ট্রাকে করে মোট ৮০টি গরু এই বাজারে নিয়ে এসেছেন। যারা সবাই পদ্মা সেতু দিয়ে হাটে এসেছেন।

পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে সবার চোখেমুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। একজন বলছিলেন, ‘সেতুর ওপরে ওঠার পরও কেন যেন আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।’
এদের নেতৃত্ব দেওয়া শামসুল বেপারীর ছেলে লালন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা আসলে সবসময় ধুপখোলা মাঠে গরু নিয়ে আসতাম। প্রতিবছর সবার আগে আসার চেষ্টা করি। এবার প্রথম এই বাজারে এসেছি। পদ্মা সেতু দিয়ে এসেছি। সকাল সাড়ে আটটায় রওনা দিয়েছি, ১২টার পর ঢাকায় পৌঁছেছি। এটা তো ভাবতেও পারিনি কোনোদিন।’
অবশ্য কাছাকাছি সময় একই এলাকা থেকে রওনা দিয়ে ফেরিতে পার হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে জানান লালন।
তাইজুল ইসলাম নামে আরেকজন গরু বিক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, কোনোদিন ভাবি নাই পদ্মা ব্রিজ দিয়ে পার হবো। আশা পূরণ হইল। কি সন্দুর করছে। বিদেশেও মনে হয় এমন করে না।’

ফেরিঘাটে নিজের কষ্টের কথা তুলে ধরে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘একবার এমনও হয়েছে একদিন বিকালে ঘাটে আইসা পরদিন দুপুরে মাওয়ার এপার নামছি। সেই কষ্টের দিন শেষ।’
ধোলাইখালের পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা রাসেল মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরাও সেতু দিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ট্রাকের ড্রাইভার ও যার মাধ্যমে ট্রাক নিয়েছে সেই দালাল খরচ বাঁচাইতে ফেরি দিয়ে নিয়ে আসছে। সেতু দিয়ে যারা আসছে তাদের চেয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে। যাওয়ার সময় সেতু দিয়ে যাব।’
বিইউ/এমআর

















































































































































































































































































































