খোলা আকাশের নিচে মশার উৎপাত। সেইসঙ্গে ভ্যাপসা গরম। এর মাঝেই কেউ শুয়ে পড়েছেন গরুর সঙ্গে। আবার কেউ পাশে বসেই ঝিমোচ্ছেন। তারপরও নেই বিরক্তির ছাপ। শত কষ্ট হলেও সঙ্গে আনা পশুর প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। রাতভর এভাবেই নির্ঘুম রাত কাটাতে দেখা গেছে পশু বিক্রেতারা।
সোমবার (২৬ জুন) রাতভর রাজধানীর আফতাব নগর, তেজগাঁও ও মেরাদিয়া কোরবানির হাট ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
রাত ১০টা থেকে একটা পর্যন্ত রাজধানীর আফতাবনগর গরুর হাটে ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে গরু। ক্রেতারা পছন্দের গরু কেনার জন্য ঘোরাঘুরি করছেন। বিক্রেতারা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ গরুর পরিচর্যা করছেন।
রাত ১১টার দিকে আফতাবনগর বটতলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে বসে আছেন। ক্রেতারা তারা তাদের পছন্দের গরু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিক্রেতাদের না ঘুমানোর জন্য মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।
শেরপুর মিরাজ আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, গত রোববার আমরা শেরপুর থেকে নয়জনে ২১টি গরু নিয়ে আসছি। সারারাত আমরা সজাগ ছিলাম। তবে শিফট করে আমরা ঘুমাই। তিনি বলেন, গত দুই দিনে তিনটি গরু বিক্রি করেছি। এখনো ১৮টি গরু রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জামালপুরের ব্যবসায়ী শাহিন মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, মোট দশটি করে নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে তিনটি গরু বিক্রি করছি। ক্রেতার আশায় রাতভর বসে আছি।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা রনি মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা ছয়টি গরু নিয়ে তিনজন এসেছি। রাতে একজন ঘুমাই। বাকি দুইজন সজাগ থাকি।
রাত ১২টায় আফতাবনগর এল ব্লক রোডে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা রাস্তার মধ্যে বসে আছেন। আবার কেউ কেউ শুয়ে পড়েছেন। ক্রেতারা তাদের পছন্দমত গরু দরদাম করছেন।
একই এলাকায় হাবিবুর রহমান পাটোয়ারী নামে এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, গরু বিক্রির আশায় রাত জেগে বসে আছি। দুই দিন থেকে আসছি। মাত্র একটি গরু বিক্রি করেছি।
রাত সাড়ে ১২টায় বরই তলায় গিয়ে দেখা গেছে, কেউ কেউ ঘুমাচ্ছেন। একই দলের কয়েকজন ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। আবার কেউ কেউ গরুকে খাবার দিচ্ছেন।
কথা হয় নাটোরের ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা ছয়জন গরু নিয়ে এসছি। তাই তিনজন ঘুমাচ্ছেন। আর বাকিরা গরু বিক্রির চেষ্টা করছি।
একই এলাকার আলতাব হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ছয়টি গরু নিয়ে আসছি। মাত্র দুটি বিক্রি করছি। বাকি গরু বিক্রির জন্য বসে আছি।
আফতাব নগর কে ব্লক ঘুরেও একই অবস্থা দেখা গেছে। তবে সেখানে গিয়ে বিভিন্ন এক দৃশ্য দেখা গেছে। কে ব্লকের আট নম্বর রোডে বসে আছেন কুষ্টিয়ার আতার মিয়া। তিনি বসে বসে গরুর মুখে খাবার তুলে দিছিলেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার অনেক আদরের গরু এটি। দুই বছর থেকে কষ্ট করে এই গরু লালন পালন করেছি। কিন্তু একটু বেশি লাভের আশায় গরুটি ঢাকায় নিয়ে এসেছি।
কত দাম হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার গরু এখন পর্যন্ত এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দাম হয়েছে। আরও ২০ হাজার টাকা বেশি পেলে বিক্রি করে দেব।
এক পর্যায়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, গত দুই বছর এই গরুর পেছনে অনেক সময় দিয়েছি। সেজন্য গরুটি বিক্রি করতে কষ্ট লাগছে। তাই গরুর পাশে বসে খাওয়াচ্ছি। ঘুম আসছে না।
রাত ১টার দিকে রাজধানীর মেরাদিয়া কোরবানির হাট ঘুরেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। সেই হাটে রাজবাড়ী থেকে রাজাবাবু নামে একটি গরু আনা হয়েছে। তবে সেই গরুটি দেখতে অনেক লোকজন ভিড় করতে দেখা গেছে।
গরুটির মালিক রায়হানুল কবির ঢাকা মেইলকে বলেন, রাজাবাবুকে নিয়ে দুই দিন থেকে এসেছি। সারা রাত জেগে থাকি। গরুটি বিক্রি হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘুম আসবে না।
একই হাটের গরু বিক্রিতা বাগেরহাটের রহিম মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, গরু নিয়ে এসেছি। বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত ঘুম আসবে না।
এর আগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। সেখানে মাঠ ভর্তি গরু থাকায় রাস্তায় অবস্থান করেছেন গরু ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে তারাও নির্ঘুম রাত কাটান তারা।
নজরুল ইসলাম নামে এক গরু বিক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি রোববার সকালে শেরপুর থেকে ৮টি গরু নিয়ে ঢাকায় আসি। আমার সঙ্গে দুইজন শ্রমিকও নিয়ে আসছি। শ্রমিকরা ঘুমালেও আমার ঘুম আসে না। তিনি বলেন, কখন ক্রেতা আসবে সেটা তো বলা যায় না। তাই রাতে ঘুমাচ্ছি না।
কেআর/এমআর