বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নওগাঁয় ‘কাঙ্ক্ষিত দর’ মেলেনি চামড়ার

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২২, ১২:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

নওগাঁয় ‘কাঙ্ক্ষিত দর’ মেলেনি চামড়ার

পবিত্র ঈদুল আজহায় এবার নওগাঁয় প্রায় ৩ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। তবে চামড়ার ‘কাঙ্ক্ষিত দর’ মেলেনি বলে জানা গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কিছুটা বৃদ্ধি করে মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭-৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

ছাগলের লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নওগাঁয় কিছু আড়তদার সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে (গরুর চামড়া ৪০০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ২০ টাকা দরে) কিনেছেন বলে ‍অভিযোগ উঠেছে।


বিজ্ঞাপন


রোববার (১০ জুলাই) বিকেলে শহরে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, তাদের মোড়, গোস্তহাটির ঘুরে দেখা যায়, এক থেকে দেড় লাখ টাকার কোরবানির গরুর চামড়া ৩০০-৪০০ টাকা ও ২০-৩০ হাজার টাকার ছাগলের চামড়া ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অনেকে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় চামড়া দান করছেন।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মমতাজ হোসেন জানান, এবার চাহিদা বেশি থাকায় ছাগলের চামড়া ২০ টাকায় নিয়েছি। গরুর চামড়া ২০০-৪০০ টাকা দরে কিনে আড়তে বিক্রি করব। তবে পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে গরু-ছাগলের চামড়ার ব্যবসায় লাভ তেমন নেই। সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকার সঙ্গে স্থানীয় আড়তের মূল্যের কোনো মিল নেই। তাই চামড়া ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। এ পেশায় আগে জেলায় ২৫টি আড়ত জড়িত ছিল। এখন আছে মাত্র ৩টি। এ ব্যবসা আজ হুমকির মুখে। এবার গরুর চামড়ার দর কিছুটা বাড়লেও ছাগলের চামড়ার দাম নেই।

শহরের কালিতলার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম বলে মাত্র ৪০০ টাকা। এটা গরিব মানুষের হক। কিন্তু সিন্ডিকেট করে দাম কমানো হচ্ছে।
naogoan leatherতাজের মোড়ের বাসিন্দা শামিম হোসেন বলেন, ১ লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম বলছে ৩০০ টাকা। এটা কোনো কথা হলো! বিক্রি করেই দিতে হলো।

বালুডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, একটি ছাগল কিনে কোরবানি দিলাম। ব্যবাসায়ীর চামড়ার দাম বলে মাত্র ৩০ টাকা। ২২ হাজার টাকার ছাগলের চামড়ার দাম যদি হয় ৩০ টাকা, তাহলে কী বলবো বলেন। গরীবের হকটাও ঠিক মত পায় না। দাম বাড়াতেই চায় না।


বিজ্ঞাপন


পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে গরুর চামড়া বিক্রি করতে আসা ফারুক বলেন, ৮০ হাজার টাকার গরুর চামড়া দুইশ টাকায় বিক্রি করেছি। অথচ কয়েক বছর আগে এ ধরনের চামড়া বাজারে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। চামড়া ব্যবসাও এখন সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে।

অপর বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, সিন্ডিকেটরা গরিবের পেটে লাথি মারছে অথচ দেখার কেউ নেই। আমরা এতগুলো চামড়া নিয়ে এখন কী করবো।

ফড়িয়া ব্যবসায়ী মঞ্জুর রহমান জানান, আসলে আড়তদাররা চামড়ার দাম খুব বেশি বাড়াচ্ছে না। যার কারণে আমরাও বেশি দাম দিয়ে কিনতে পারছি না। প্রকারভেদে প্রতিটি চামড়ায় লাভ হচ্ছে ২৫-৩০ টাকার মত। গরু-ছাগলের চামড়ার এমন বাজার নিম্নমুখী গত দুই বছর ধরেই চলছে। এতে আমাদের করার কিছুই নেই।

নওগাঁ প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দাম নিলে সে বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত। তবে কেউ অভিযোগ করেনি। যেহেতু চামড়ার বিক্রি করে সেটা গরিব ও অসহায়দের মাঝে টাকা বিতরণ করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের একটি স্বচ্ছ মানসিকতার পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল।

জেলা প্রাণী সম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদে ৪ লাখ ৩৩ হাজার পশু প্রস্তুত ছিল কোরবানির জন্য। জেলায় খামারী রয়েছেন ২৫ হাজার। এবার প্রায় তিন লাখ পশু কোরবানি হয়েছে।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর