করোনার কারণে গত দু’বছর কোরবানির পশুর হাট খুব একটা জমে উঠেনি। হাটগুলোতে বিক্রির জন্য পশু তোলা হলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। সুবিধা করতে পারেননি খামারিরা। এ বছর করোনা প্রাদুর্ভাব তুলনামূলক স্বাভাবিক থালেও দাম নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে ময়মনসিংহের খামারিদের মাঝে। গো খাদ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র খামারিদের মাঝেও নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালের হরিরামপুর গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি রাসেল। গেলে ২০ বছর ধরে গবাদিপশু লালন পালনের সাথে জড়িত তিনি। দু’বছর আগেও কোরবানীর হাটকে ঘিরে চার থেকে পাঁচটি ষাড় গরু পালন করতেন। তবে, সে সংখ্যা এবার কমে দাড়িয়েছে একটিতে।
বিজ্ঞাপন
রাসেল ঢাকা মেইলকে জানান, ‘গরুর খাদ্যের দাম বাড়ছে। গম, ভুসি, খড় সবকিছুরই দাম নাগালে বাহিরে চলে যাচ্ছে। আগের মতো চার-পাঁচটি গরুকে লালন পালন করার সাহস হচ্ছে না। এবার তাই একটি গরু কোরবানির জন্য প্রতুস্ত করা হয়েছে, দামের আশা দেড় লাখ টাকা। কিন্তু, বাজারে কী দাম পাওয়া যায়, তার উপর তাকিয়ে থাকতে হবে। ন্যায্য মূল্য না পেলে এই চড়া মূল্যের গো খাদ্যের বাজারে ফিরিয়ে এনে খরচা বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই কম হলেও ছেড়ে দিতে হবে বাধ্য হয়ে।’
একই অবস্থা ওই এলাকার আরেক ক্ষুদ্র খামারি সাজেদুলের। কুড়া, পানি আর প্রাকৃতিক ঘাসের উপর ভরসা করে তিনি দুটি গরু পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘কৃষি কাজের পাশাপাশি বাড়িতে গরু লালন পালন করি। গত তিন মাসে চার বার গরুর খাদ্যের দাম বাড়ছে। এখন গরু দুটিকে গম, ভূসি খাওয়ানোর সামর্থ্য আমার নাই। সাদা পানির সাথে কুড়া মিশিয়ে কোন রকম খায়ানোর চেষ্টা চলছে। এভাবে কি আর গরু পালান করা যায়। সামনে হয়তো গরু পালনই বন্ধ করে দিতে হবে।’
পাশ্ববর্তী গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলছেন, ‘চার দফা গো খাদ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে গেলে তিন মাসে। আগে যারা ঈদকে ঘিরে যে সকল প্রান্তিক খামারি পাঁচ-ছয়টি করে গরু মোটাতাজা করতো, তারা এবার পারছে না। গ্রামাঞ্চলের অনেক খামারি গরু লালন পালন ছেড়ে দিচ্ছেন।’
গো খাদ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে প্রান্তিক কৃষকদের মতো পশুপালন কমিয়েছেন বড় খামারিরাও। জেলার ত্রিশাল উপজেলার হরিরামপুর ডেইরি খামারের ব্যবস্থাপক তোফায়েল আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘করোনার প্রভাব কাটতে না কাটতেই গো খাদ্যের দাম বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। খরচের সাথে বাজারে গরুর দাম এক শতাংশও বাড়েনি। বিগত বছরগুলোতে অর্ধশতাধিক গরু কোরবানির হাটের জন্য প্রস্তুত করা হত খামারে। সে সংখ্যা এবার কমে দাড়িয়েছে ১০-১৫টিতে, তারপরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বাজার যদি ভালো পাওয়া যায়, তাহলে কিছুটা ক্ষতি পোষানো সম্ভব।’
প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় খামারী এবং কৃষক পর্যায়ে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার গবাদিপশু। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় দুই লাখ বেশি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মনোরঞ্জন ধর বলছেন, ‘কোরবানির জন্য চাহিদার চেয়েও বেশি পশু রয়েছে। এবারও ক্রেতাদের চাহিদার কথা এবং সুবিধার কথা চিন্তা করে, হাটের পাশাপাশি অনলাইনে গরু কেনা বেচার মাধ্যম রাখা হবে। সেখান থেকে ক্রেতারা পছন্দসই পশু কিনতে পারবেন। এছাড়াও হাটগুলোতে প্রাণিসম্পদের মেডিকেল টিম কাজ করবে।’
বিজ্ঞাপন
প্রতিনিধি/এএ