ঘনিয়ে আসছে কোরবানি ঈদ। শেষ মুহূর্তে গাইবান্ধার পশুর হাটগুলোতে রয়েছে উপচেপড়া ভিড়। একজন ক্রেতার পছন্দের গরু কিনতে সঙ্গে আছেন আরও ৭-৮ জন। অনুরূপ একজন বিক্রেতার সঙ্গেও একাধিক ব্যক্তির পদচারণা মুখরিত। সেই সঙ্গে চোখে পড়ার মতো দালালের দৌরাত্ম্য। এতে পশুর হাটে ভিড় বাড়লেও তুলনামূলক বেচাকেনা হচ্ছে কম।
সম্প্রতি জেলার ভরতখালি পশুর হাটসহ আরও বেশ কিছু হাটে দেখা গেছে ওইসব দৃশ্য। দূর থেকে দেখলে মনে হয় জমে ওঠেছে পশুর হাট। কিন্তু হাটের ভেতর স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে দেখা যায় আরেক চিত্র। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার চেয়ে তিনগুন মানুষের অবাধ বিচরণ। এমন বিচরণের কারণে সুযোগ নিচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি দালাল চক্র। যার ফলে ঠকছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বিজ্ঞাপন
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবছর কোরবানি উপলক্ষে জেলায় ২৫টি স্থায়ী ও ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটসহ অনলাইনের মাধ্যমে আরও ৮টি প্ল্যাটফর্মে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। বিশেষ করে ভরতখালি, লক্ষীপুর, দাড়িয়াপুর, সাদুল্লাপুর, বকসীগঞ্জ, ধাপেরহাট, মহিমাগঞ্জ ও মাঠেরহাটসহ আরও বিভিন্ন হাটে বসানো হয়েছে বিশাল পশুর হাট। এসব হাটে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বলদ, ষাঁড়, মহিষ, গাভী, ছাগল ও ভেড়া কেনাবেচা অব্যাহত রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় নিয়মিত এবং মৌসুমিসহ প্রায় ৪৯টি হাটে দেশি-বিদেশি, ছোট-বড় গরু-ছাগল আমদানি বেশি থাকলেও তুলনামূলক বেচাকেনা হচ্ছে কম। কারণ, গত বছরের চেয়ে এ বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু পণ্যের দাম বেড়েছে অনেকটা। তাই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে সাধারণ মানুষের। একসময় যেসব ব্যক্তি এককভাবে গরু কোরবানি দিতেন, বর্তমানে তাদের আর্থিক সংকটে একাই একটি কোরবানি দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে সেই ব্যক্তিরা একটি গরু কিনছেন ৩ থেকে ৭ জনে। যৌথভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কোরবানি দিতে। ফলে আগের তুলনায় পশু বিক্রি হচ্ছে কম। তবে হাটগুলোতে লোকজনের উপস্থিত রয়েছে বেশি।
এদিকে, প্রতিহাটে দালাল ও ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে ঠকছেন। এইসব দালালের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন তারা। হাটে আসা দালালরা মালিকদের সঙ্গে রফাদফা করে পশু হাতে নেন। ওই দামের চেয়ে বেশি বিক্রিত টাকা ঢুকছে দালালদের পকেটে। একই সঙ্গে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ইজারা।
বিজ্ঞাপন
ভরতখালি হাটের আসা মাহাবুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, এবার আমার কোরবানি দেওয়ার সামর্থ নেই। তাই ঈদের আমেজ হিসেবে পশুর হাট দেখতে আমরা কয়েকজন এসেছি।

বকসীগঞ্জ হাটের বিক্রেতার শহিদুল ইসলাম বলেন, তার খামারের একটি গরু বিক্রি করতে হাটে এসেছেন। দালালের হাত থেকে রেহাই পেতে সঙ্গে নিয়েছেন আরও ৪ জনকে। কিন্তু গরুর দাম সন্তোষজনক না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ছেন তিনি।
মাঠেরহাটের ক্রেতা আব্দুস সাত্তার মন্ডল বলেন, এর আগের বছরগুলোতে আমি একাই একটি গরু কোরবানি দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার তা ব্যত্যয় ঘটছে। ইদানিং নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। তাই আর্থিক সংকটের কারণে এ বছর ৫ জনের সমন্বয়ে (যৌথভাবে) একটি গরু কেনার জন্য হাটে এসেছি। আমরা সবাই গরুর দাম হাঁকাচ্ছি। তবে গরুর দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান সরকার জানান, জেলায় ১৫ হাজার ৮২১টি খামারসহ অন্যান্যভাবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৭৭টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। আর কোরবানির চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৭০টি পশু। ইতোমধ্যে কোরবানি পশুর হাট জমে ওঠেছে। বিক্রয়যোগ্য হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল দল রয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস

















































































































































































































































































































