বরগুনার তালতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১৯টি দোকান ও ৪টি বসতঘর ভস্মীভূত হয়েছে। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৫টি দোকান। ঘর মালিক ও ভাড়াটিয়াসহ মোট ৪৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতি না থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতো দাবি স্থানীয়দের। অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি। ব্যবসায়ীদের দাবি এটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড।
রোববার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সংবাদ শুনে রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, থানা পুলিশ, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া রিয়াজুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আকন মো. আল-মামুনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন।

বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে হঠাৎ কড়াইবাড়িয়া বাজারের একটি মো. বশিরের পেট্রোলের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের দোকানসহ বসতঘরে। পরে স্থানীয়রা তালতলী ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তালতলী ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভাতে গেলে গাড়িতে পানি না থাকায় তারা আগুন নিভাতে ব্যর্থ হয়।
পরে পাশের ডোবা থেকে মেশিনের মাধ্যমে পানি দেয়ার চেষ্টা করলে মেশিনে ফুয়েল না থাকায় তাও ব্যর্থ হয়। পরে খবর দেওয়া হয় আমতলী ফায়ার সার্ভিসকে। খবর পেয়ে আমতলী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে মুদি-মনিহারি, হার্ডওয়্যার, ফার্মেসি ও তেলের দোকানসহ ১৯টি দোকান এবং ৪টি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ৫ দোকান। দোকানের ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীসহ মোট ৪৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তালতলী ফায়ার সার্ভিসের অপেশাদার কর্মকাণ্ডের কারণে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা যখন এসেছে তখন দু’টি ঘর অগ্নিকাণ্ড শিকার হয়েছে। পরে আমতলী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এবং ধারণা করছেন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য এটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড।
ক্ষতিগ্রস্ত ইব্রাহিম বীপরাজ বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের গাফেলতির কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যদি নিজেরা সবসময় প্রস্তুত না থাকেন, তাহলে কি করে চলবে। এই দায় ফায়ার সার্ভিসের নিতে হবে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম সিকদার পনু বলেন, কড়াইবাড়িয়া বাজারে এর আগে কখনও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পথে বসে গেছেন। তালতলী ফায়ার সার্ভিস যখন ঘটনাস্থলে আসে তখন তারা যদি আগুন নিভানোর কাজ শুরু করতে পারতেন তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হতো।
এ বিষয়ে তালতলী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার এস এম নুরুজ্জামান ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয়রা প্রথমে কচুরিপানা ভর্তি পুকুরে নামিয়ে দিয়েছিল, যার কারণে কচুরিপানা পাইপের ভেতরে আটকে গিয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়। আর আমাদের পর্যাপ্ত তেল ছিল, তেল না থাকার প্রশ্নই আসে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, খবর পাওয়ার পর আমি ভোররাত পর্যন্ত ঘটনাস্থল ছিলাম। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে। আর ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করব।
প্রতিনিধি/এসএস