আসন্ন কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পিরোজপুরের কামাররা। এসব সরঞ্জাম নতুনভাবে তৈরি এবং পুরোনোগুলোতে শান দিতে ব্যস্ত তারা। ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে এ কর্ম ব্যস্ততা। তবে কয়লা, লোহাসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ তেমন হয় না বলে জানান কামাররা।
বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ না থাকায় অলস সময় কাটালেও কোরবানির সময়টাতে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ সময় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হয় তাদের। মূলত এসময় তাদের কেনাবেচা বেড়ে যায়। যা দিয়ে সারা বছরের খোরাক জোগাড় করেন কামাররা।
বিজ্ঞাপন
এক সময় জমজমাট ছিল কামারপাড়া। ঘুম থেকে উঠলেই শোনা যেত কামারশালার টুং-টাং শব্দ, যা এখন শুধুই স্মৃতি। কারণ তাদের তৈরি তৈজসপত্রের স্থান দখল করেছে বিভিন্ন আধুনিক ওয়ার্কশপে তৈরি হওয়া রেডিমেড দা, বটি, কাস্তেসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।
জেলার নাজিরপুর উপজেলার শ্রীরামকাঠী বাজারের দেবাশীষ কর্মকার বলেন, কোরবানি ছাড়া বছরের অন্য মাসগুলোতে আমরা কোনোরকম দিন পার করছি। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একারণে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।

জেলার সদর উপজেলার পাচঁপারা বাজারের মিলন কর্মকার জানান, এলাকায় কাজ কম হওয়ায় জীবিকার তাগিদে আমি অন্য শহরে গিয়ে কামারের কাজ করতাম। কিন্তু সেখানেও ব্যবসায় মন্দা। ঘরভাড়া ও থাকা-খাওয়া সব মিলিয়ে না পোষানোয় আবারও এলাকায় চলে আসি।
বিজ্ঞাপন
জেলার দীঘিরজান বাজারের কমল কর্মকার বলেন, এখানে রাস্তার পাশে বাজারের দিনে বসে কাজ করি। প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুটি হাট বসে। আগে ইরি ও আমন মৌসুমে এই এলাকায় ধান কাটার জন্য কাস্তে ও আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পাট কাটার জন্য বড় বড় হাঁসুয়া তৈরির বায়না পেতাম। এখন হাট-বাজারে লোকের তেমন সমাগম নেই। ফলে খুব কষ্টে দিনযাপন করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। বড় ছুড়ি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। বটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে দেড়শ টাকা থেকে আড়াইশ টাকা।

দা শান দিতে আসা আরফিন ইসলাম, মালেক হাজরাসহ কয়েকজন ক্রেতারা বলেন, কয়েক দিন পরেই ঈদ। গরু ও ছাগল জবাই দিতে এবং মাংস কাটতে প্রয়োজন চাকু ও ছুরির। সে কারণে দা, বটি ও ছুরি কিনতে বাজারে এসেছি। তবে গতবছরে এসব জিনিসের যে দাম ছিল তার চেয়ে এবারে দাম দিগুণ বেশি।
শ্রীরামকাঠী বাজারের কামার শিল্পের পাইকার নৃপেণ কর্মকার বলেন, সারাবছরই তারা দা, বটি, চাকু, ছুরি বিক্রি করেন। কিন্তু কোরবানির মৌসুমেই এসব সরঞ্জামের কেনাবেচার ধুম পড়ে। এবারও ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে কয়লা ও লোহার দাম খানিকটা বেড়ে যাওয়ায় কামারদের কাছ থেকে খানিকটা বেশি দামে এসব জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে। যার ফলে কিছুটা বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।
আর এক কামার ব্যবসায়ী বলেন, ৭০০ টাকা কেজি দরে দা-কুড়াল, হাঁসুয়া-বটি ২৫০-৩০০ টাকা ও ছুড়ি ১৬০-১৫০ টাকা কেজি দরে প্রকারভেদে বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দা, বটি, ছোরা, চাকুর পাশাপাশি মাংস বানানোর কাজের জন্য গাছের গুঁড়ির চাহিদাও বেড়েছে।
টিবি

















































































































































































































































































































