মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

লালু-কালুকে নিয়ে ঢাকার হাটে ময়না

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

লালু-কালুকে নিয়ে ঢাকার হাটে ময়না
ছবি: ঢাকা মেইল।

১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংসার সামলানোর পাশাপাশি শখের বসে গরু লালন পালন করেন ময়না ইয়াসমিন। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার দুই সন্তানের জননী ময়না প্রতিবছর কোরবানির সময় একাধিক গরু বেপারীদের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু দাম নিয়ে তার মনে খটকা লেগে থাকত সবসময়। কারণ একটাই। তিনি যে দামে গরু বিক্রি করতেন তারচেয়ে অনেক বেশি দামে বাজারে তা বিক্রি করতো বেপারীরা।

লালু আর কালুর দাম হাঁকিয়েছেন তিনি সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে। তবে ৫ লাখ করে পেলেও বিক্রি করে দেওয়ার কথা জানান এই বিক্রেতা। ময়নার দাবি, গরু দুটোতে কমপক্ষে ১৪-১৫ মন গোশত হবে। সে তুলনায় আহামরি দাম চাওয়া হয়নি।

বছরজুড়ে ইয়াসমিন গরুর যত্ন করলেও লাভের টাকা যায় বেপারীদের পকেটে। তাই এবার ভাই আল-আমিনকে নিয়ে ময়না ইয়াসমিন নিজেই ঢাকার ধোলাইখাল হাটে এসেছেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বিশাল আকৃতির দুই গরু ‘লালু-কালু’।

ঢাকা মেইলকে ময়না ইয়াসমিন বলেন, প্রতি বছর কষ্ট করে গরু লালন-পালন করে বিক্রির পর দেখতাম তেমন কিছুই থাকে না। এবার দেখতে আসছি আসলেই গরুর দাম কেমন। যদি ভালো দাম পাই তাইলে খামার বড় করব। না হলে গরু পালা ছাইড়া দেব।

লালু আর কালুর দাম হাঁকিয়েছেন তিনি সাড়ে ৬ লাখ টাকা করে। তবে ৫ লাখ করে পেলেও বিক্রি করে দেওয়ার কথা জানান এই বিক্রেতা।

ময়নার দাবি, গরু দুটোতে কমপক্ষে ১৪-১৫ মন গোশত হবে। সে তুলনায় আহামরি দাম চাওয়া হয়নি।


বিজ্ঞাপন


রাজধানীর পুরানো হাটগুলোর মধ্যে ধোলাইখাল অন্যতম। ইজারাদাররা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে ১৫-২০ হাজার গরু এখানে আসবে।

lalu-kaluএ বছর দুই দফা টেন্ডারের পর হাটটি ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারা পেয়েছেন মোহাম্মদ হোসেন নামের একজন।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই হাটে গরু নিয়ে আসেন। তাদের ভাষ্য, পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী, বাড়িওয়ালা লাখ লাখ টাকার গরু কোরবানি দেন। ফলে এই হাঁটে বিক্রি ভালো হয়।

ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগে চার লাখ টাকা দিয়ে গরু দুটো কিনেছেন। পরম যত্নে দুবছর লালন-পালন শেষে বাজারে নিয়ে এসেছেন। জানালেন, প্রতিদিন গরুর পেছনে হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

ময়না বলেন, আগে যেখানে গরু প্রতি ৩০০ টাকার মতো খরচ হতো, এখন ৫০০ টাকার নিচে হয় না। ভুসি, খড়, ছোলা সবকিছুর দাম এ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। চাইলেও গরু কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই।

শেষ পর্যন্ত গরু বিক্রি না হলে কি করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আল্লাহ খালি হাতে বাড়ি পাঠাবেন না। ভাগ্যে থাকলে এই হাঁটেই বিক্রি হবে।

lalu-kaluগরু বিক্রির লাভের টাকায় নিজের ভাগ্যের কতটা পরিবর্তন হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাভ তো বেপারীরা করছে। এই জন্য তেমন কিছু করতে পারিনি। ছোট সময় থেকে ইচ্ছা ছিল নিজের একটা খামার করব। আগে কৃষি জমি ছিল না। এখন নিজের কিছু জমি আছে। দুই মেয়ে পড়াশোনা করাচ্ছি। এবার ভালো কিছু হলে খামার বড় করার চিন্তা করব। আর সরকার যদি পাশে দাঁড়ায় তাইলে ইচ্ছা পূরণ হবে।

পাশে থাকা ময়নার ভাই আল-আমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে মালয়েশিয়া থাকতাম। এখন দেশে আছি। দুলাভাইও বিদেশ ছিলেন। এখন দেশে সাংসারিক কাজকর্ম করছেন। বোনের সঙ্গে ঢাকা আসছি। হাটে যদিও কোনো সমস্যা নেই। তারপরও মহিলা মানুষ একা তো আসতে পারে না।

কথা প্রসঙ্গে ময়না জানালেন খাওয়া-দাওয়া হোটেলই সারছেন। আর ভাইকে নিয়ে গরুর পাশেই রাত পার করছেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই।

ধোলাইখাল হাটের ইজারাদারের নিয়োগ করা ক্যাশিয়ার জাকির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই যাতে শতভাগ নিরাপদ থাকতে পারেন সে জন্য আমরা এলার্ট আছি। সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কোনোরকম সমস্যা, সন্দেহজনক কোনো কিছু নজরে এলে আমাদের জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিইউ/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর