রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

দম ফেলার ফুসরত নেই নওগাঁর কামার পাড়ায়

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৩, ১০:০৬ এএম

শেয়ার করুন:

দম ফেলার ফুসরত নেই নওগাঁর কামার পাড়ায়

পবিত্র ঈদুল আজহা এলে পশু কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জামের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারপল্লীতেও।

সম্প্রতি নওগাঁর কামারপল্লীগুলো ঘুরে দেখা গেছে দম ফেলার মতো ফুসরত নেই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের।


বিজ্ঞাপন


হাপরের টানে কয়লার চুলায় দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। জ্বলে ওঠা আগুনের ফুলকিতে লোহাও হয়ে উঠছে সূর্যবর্ণ। দগদগে গরম লোহায় দিন-রাত হাতুড়ি পেটানোর টুংটাং শব্দে মুখর কামার পল্লীর এলাকাগুলো। শহর থেকে শুরু করে গ্রামে পর্যায়ে কামার পল্লীতে এখন টুংটাং শব্দে মুখরিত। সবখানেই কর্মব্যস্ততার একই চিত্র। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে দ্বিগুণ। কামাররা সকলেই এখন ব্যস্ত পুরোনো দা, ছুরি এবং বঁটিতে শান দিতে। কেউবা ব্যস্ত নতুন নতুন দা-ছুরি তৈরিতে।

Kamar

কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্প্রিং লোহা (পাকা লোহা) ও কাঁচা লোহা দিয়ে উপকরণ তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, তবে দাম বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম।

এ ছাড়া ব্যবহার করা হয় এঙ্গেল, ব্লাকবার, রড, স্টিং, রেললাইনের লোহা, গাড়ির পাত ইত্যাদি, যা দিয়ে ছুরি, কাটারি, বটি, দা ও কুঠার ইত্যাদি তৈরি করে থাকি। মানভেদে পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১০০ থেকে ২০০, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বঁটি ২৫০ থেকে ৫০০, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


কথা হয় মান্দা উপজেলা সদরের কামারশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রত্যয় কুমারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমার দোকানে কর্মব্যস্ততা অনেক গুণে বেড়ে গেছে। এ মুহূর্তে দম ফেলারও সময় নেই। পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ক্রেতাদের অসংখ্য অর্ডার রয়েছে আমার। বছরের এই সময়টাতে রোজগার বেশি হলেও অন্য সময়ে তুলনামূলকভাবে রোজগার কম হয়।

তিনি বলেন মূলত, এটি আমাদের পূর্বপুরুষের পেশা। আমার বাবা-দাদু কামারের কাজ করতো। তাদেরকে সহয়োগিতা করতেই একাজে আমার জড়িয়ে যাওয়া।

সদর উপজেলার হাপাঁনিয়া বাজারের কারিগর অখিল চন্দ্র বলেন, সামনে ঈদ। যার কারণে পাইকারী দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এই সময়ে আমাদের কদর বেশি থাকে। তবে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে সেই রকম কাজের চাপ না থাকলেও ঈদে চাহিদা আরও বেশি হয়। কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুরির চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। সব মিলে ভালোই বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

Kamar

নওগাঁ সদর উপজেলার শিবপুর বাজারের কারিগর মনোরঞ্জরন পাল বলেন, ২৫বছর ধরে এ পেশায় আছি। প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের জন্য অপেক্ষায় থাকি আমরা। ঈদ মৌসুমে বছরের ভালো টাকা উপার্জন করা যায়। পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে লোহার তৈরি ধারালো অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। আর এজন্যই ঈদকে ঘিরে কামারদের তৈরি দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি বিক্রি হচ্ছে এখন।

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করতে লোহার তৈরি ধারালো অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। আর এজন্যই ঈদকে ঘিরে কামারদের তৈরি দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি সামগ্রী বেশি হয়ে থাকে। তবে আধুনিক যন্ত্র চায়নার তৈরি স্টিলের জিনিষ বাজার দখলে নেওয়ার কারণে প্রাচীন শিল্পের কারিগররা আদি পেশা পরিবর্তন শুরু করেছেন। তবুও বর্তমানে বাপ-দাদার এই পেশা অনেকে ধরে রেখেছেন। কামার শিল্প কিন্তু আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। এ পেশার সঙ্গে জড়িদের নানামূখী সুযোগ-সুবিধা করে দিতে ও তাদেও এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই এই শিক্ষাবিদ।

বিসিক জেলা কার্যালয়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ওয়ায়েস কুরুনী বলেন, নওগাঁ জেলায় বর্তমানে প্রায় ৩০০ কারিগর রয়েছে কামার শিল্পের সাথে জড়িত। তবে এ শিল্পের জড়িতদের সংখ্যা কমেছে। গত বছর চারশোর মতো ছিল। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্র ষ্টীলের জিনিষ বাজার বিক্রি হওয়ার কারণে অনেক কারিগর এ পেশা পরিবর্তন করছে। বিসিক কার্যলয় থেকে আমরা প্রশিক্ষণ ও ঋণসহয়াতা প্রদান করে থাকি। যদি কোনো কারিগর চায় তবে আমারা তাকে অবশ্যই ঋণ প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করব।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর