শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

শেষ মুহূর্তে জমজমাট হাট, গরু বিক্রির ধুম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২২, ০৮:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

শেষ মুহূর্তে জমজমাট হাট, গরু বিক্রির ধুম

রাত পেরোলেই পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে প্রতিটি পশুর হাট। দিনের বেলায় ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও বিকাল নাগাদ বাড়তে থাকে ক্রেতা। সন্ধ্যা পেরোনোর পরই ক্রেতাদের ঢল নামে প্রতিটি হাটে।

শনিবার (৯ জুলাই) ঢাকার দুই সিটির বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।


বিজ্ঞাপন


কমলাপুর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর অন্যতম বড় এই হাটটিতে শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশু বিক্রির ধুম পড়েছে। সেখানে কথা হয় গরু ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে। ঝিনাইদহ থেকে আসা রাশেদুল বলেন, তিনি মোট ১৪টি গরু এনেছেন। গত দুই দিনে আটটি গরু বিক্রি করেছেন। আজ দিনের বেলায় একটি গরু বিক্রি করেছেন। সন্ধ্যার পর আরও দুটি গরু বিক্রি করেছেন। আর তিনটি গরু আছে। কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও বাকি তিনটা বিক্রি করে দেবেন।

রাজধানীর শান্তিনগর থেকে কমলাপুরে গরু কিনতে এসেছেন মারুফুল আলম। তিনি জানান, মাঝারি সাইজের গরু কিনতে এসেছি। বাজেট ৭০ থেকে ৮৮ হাজার টাকার মতো। শেষ দিন হওয়ায় আজকে কোরবানির গরু নিয়েই বাসায় ফিরতে চান তিনি।

cow-1

দিনের শুরুতে হাটটিতে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও বিকালের পর থেকে ক্রেতা বাড়তে থাকে। হাটে ছোট গরুর তুলনায় বড় গরুর সংখ্যা বেশি। তবে চাহিদা বেশি ছোট গরুর।


বিজ্ঞাপন


সন্ধ্যার পর থেকে গরু বিক্রি বেড়েছে এই হাটে। মানুষ কিছু সময় ঘোরাঘুরির পরই গরু কিনে বাড়িরে উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। অল্প সময় পরপরেই গরু নিয়ে যেতে দেখা গেছে অনেক মানুষকে।

গরুর দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷ মালিবাগের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, 'কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন হাটে গরু দেখছি, পছন্দ অনুযায়ী দাম না মেলায় আজকে এই হাটে এসেছি৷ আগামীকাল ঈদ তাই আজকেই গরু কিনতে হবে৷ এককভাবে কোরবানি দেব বলে ছোট বা মাঝারি সাইজের গরু কিনব। এখনও দেখছি, দামটা গতদিনের তুলনায় একই রয়েছে মনে হচ্ছে৷ বড় গরুর দাম কিছুটা কম মনে হলেও ছোট গরুর দাম একই রয়েছে।'

cow-6অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি আজ ক্রেতারা দাম কম বলছেন। কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া বলেন, 'সকাল থেকে বাজারের অবস্থা ভালো না। ক্রেতারা অর্ধেক দাম বলছেন। আমার তিন লাখ টাকার গুরুর দাম তারা দেড় লাখের বেশি বলছেন না। গতকালও এটার দাম দুই লাখ টাকা উঠেছিল। অর্ধেক দামে বিক্রি করলে অনেক লস হবে। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করব। শেষের দিকে হয়তো বাজার কিছুটা উঠতে পারে৷'

বড় গরুর চাহিদা কম জানিয়ে অপর বিক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি মাদারীপুরের শিবচর থেকে চারটা গরু নিয়ে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত তিনটা বিক্রি করেছি৷ তবে এই একটা নিয়ে বিপাকে পরেছি। ক্রেতারা অনেক কম দাম বলছেন। এই দামে গরু বিক্রি করলে লোকসান হবে। ছোট গরুর চাহিদা বেশি। বেশিরভাগ ক্রেতা লাখ দেড়েকের মধ্যে গরু কিনতে চায়। আমার তিনটা মাঝারি সাইজের গরু ছিলো এখন এই বড়টাই শুধু বাকি আছে।'

এদিকে হাটের কন্ট্রোল সেন্টার থেকে বারবার অল্প দামে গরু বিক্রির ঘোষণা দিতে শোনা যায়৷ কন্ট্রোল সেন্টারের দায়িত্বরতরা বলেন, 'অনেক বড় গরুর মালিক গরু বিক্রি করতে পারেননি। তাদের দাবি অনুযায়ী দাম উঠছে না৷ ফলে অনেকে হতাশ হয়ে অল্প দামে গরু ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।

cow-5রাজধানীর দুটি স্থায়ী হাটের একটি গাবতলী গবাদি পশুর হাট। ঈদের বেশ আগে থেকেই জমজমাট এই হাট। গত তিন দিন ক্রেতা সমাগম দেখা গেছে হাটটিতে। শনিবার সকাল থেকে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে গাবতলী হাটে। হাটের মূল অংশের বাইরে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে। পশু বাঁধার জন্য রাখা হয়েছে বাঁশের খুঁটি। গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কের দীর্ঘ জায়গাজুড়ে গরু দেখা গেছে। তবে ভেতরের দিকে গরুর সংখ্যা কেমন চোখে পড়েনি। ভেতরের বহু জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, হাটে এখন দর্শনার্থী নেই। যারা আছেন, প্রায় সকলেই ক্রেতা। যার প্রমাণ মিলেছে হাসিল ঘরগুলোর সামনে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে হাসিল দিতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। আর কম দামে গরু বিক্রি করে মন খারাপ করা বিক্রেতার দেখা মেলেনি।

গাবতলীতে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় এমন গরুর দাম বাড়িয়েছে বিক্রেতারা। ফলে অনেকে গরু কিনতে এসে বিপাকে পড়েছেন। অনেকের গরু পছন্দ হলেও বাজেটে মিলছে না। 

কুষ্টিয়ার গরু ব্যাপারী আব্দুল লতিফ জানান, তিনি আজ চারটি মাঝারি সাইজের গরু ৮০ হাজারের ওপরে বিক্রি করেছেন। অথচ গতকাল শুক্রবার ছয়টি বিক্রি করলেও দাম কম পেয়েছিলেন। তার মতে, আজ মাঝারি সাইজের গরুর বাজার বেশ ভালো।

অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম গরুর হাটটিতে অনেক বড় গরু কম দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অনেক বড় গরুকে অর্ধেক দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

cow-4

এদিকে রাজধানীর বসিলা হাটে মূল সড়ক থেকে প্রবেশ করতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় খরচ করতে হয়। সড়কের অবস্থাও ভালো না। ফলে দিনের বেলায় হাটে ক্রেতা আশানুরূপ ছিল না। তবে রাতের বেলায় বিক্রি ভালোই হচ্ছিল।

বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, শুরুর দিকে হাটে ক্রেতাদের আনাগোনা কম ছিল। তবে গত তিন দিন ধরে হাটে যারা আসছেন তারা ক্রেতা। সেদিক থেকে শেষ মুহুর্তে হাট জমায় আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

ক্রেতা ও কোরবানির পশুতে জমজমাট আফতাবনগর হাট। শেষ মুহুর্তে কোরবানির পশুর সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ফলে হুটহাট দাম কমে বা বেড়ে যাওয়ার আতঙ্কও তৈরি হচ্ছে না।

হাটের মূল অংশের বাইরে রয়েছে কোরবানি উপযোগী পশু। একদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাটে পশু নিয়ে আসছেন খামারি ও ব্যাপারীরা। অপরদিকে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 

এমএইচ/কারই/এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর