কোরবানি ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো— ত্যাগের মহান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। নফসের (আত্মা) আনুগত্য ত্যাগ করে মহান আল্লাহর একান্ত অনুগত হওয়ার মধ্যেই কোরবানির সার্থকতা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমরা তোমাদের অবশ্যই ভয়, দারিদ্র্য, সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি করার মাধ্যমে পরীক্ষা করব।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)
আমরা অনেকেই ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি না। ফলে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হয় না। আল্লাহর বিধান পালনে জান মালের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে প্রাণপ্রিয় সন্তান ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। আর ইসমাইল (আ.) নিজেও কোরবান হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং বাবাকে বলেছিলেন, ‘হে আমার বাবা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ (সুরা সাফফাত: ১০২)
বিজ্ঞাপন
এটাই হলো প্রকৃত কোরবানি। এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে যে আমার কোরবানি কেমন হওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- আমরা অনেকে কোরবানির মর্ম অনুধাবন করতে পারি না। ফলে কোরবানির পশুর দাম কম-বেশি নিয়েও আমরা হা-হুতাশ করি কিংবা অহংকারসুলভ আচরণ করি। এসব কোরবানির প্রকৃত শিক্ষার পরিপন্থী।
প্রশ্ন হলো- কেউ কোরবানির পশু কিনলে তাকে দাম জিজ্ঞেস করা যাবে কি না। অবশ্যই যাবে এবং উত্তরও দেওয়া যাবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। বর্তমান দরদাম কেমন চলছে তা জানা অনেকের প্রয়োজন হতে পারে, সে কারণে জানতে চাওয়া এবং প্রশ্নকারীকে সত্য উত্তর জানিয়ে দেওয়া উচিত। এতে শরিয়তের কোনো বাধানিষেধ নেই।
কিন্তু আজকাল যা হয়েছে, কোরবানির পশুর দরদাম নিয়ে অনেক জায়গায় জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। কেউ হয়ত একটু বেশি দামে পশু কিনেছে, এ কারণে তাকে অন্যরা বকাঝকা করছে, বোকা আখ্যা দিচ্ছে। সে নিজেও এমন আফসোস করছে যেন বড় লস করে ফেলেছে। আবার কেউ একই ধরণের পশু কম দামে কিনল, সে অহংকারী আচরণ করছে আর সবাইকে তার দক্ষতা প্রকাশ করছে, যেন সে ব্যবসায় বড় অংকের লাভ করে ফেলেছে। এসব আচরণ কোরবানির সঙ্গে যায় না।
মূলত কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে কারো যদি ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়, তার সওয়াবও ১০ হাজার টাকা পরিমাণ বেশিই হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে কখনও এমন প্রশ্ন করবেন না যে ৫০ হাজার টাকার পশু কেন তুমি ৬০ হাজার দিয়ে কিনলে? সুতরাং তার কোনো ক্ষতিই হয়নি। ওদিকে পশু বিক্রেতাও লাভবান হয়েছে। আর যে ব্যক্তি কম খরচ হওয়ার কারণে নিজেকে লাভবান মনে করছে, সে আসলে লাভবান হয়নি। বরং যত টাকা খরচ হয়েছে সে পরিমাণ সওয়াবই সে পাবে। এটাই হক্কানি আলেমদের অভিমত। কেননা যে পরিমাণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা ও গভীর আবেগ-উদ্দীপনা সহকারে মানুষ আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করবে; আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতিদানও তত বেশি ধার্য হবে।
বিজ্ঞাপন
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ হলো একটি বীজের মতো। যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অধিক দান করেন। আল্লাহ অধিক দানশীল ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা: ২৬১)
দুঃখজনকভাবে কোরবানির উদ্দেশ্য না বোঝার কারণেই মানুষের মধ্যে এসব আচরণ প্রকাশ পায়। দরদাম, গোশত ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে, যা কখনও কাম্য ছিল না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কোরবানির আসল মাকসাদ অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

















































































































































































































































































































