কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোন কোন পশু কোরবানির উপযুক্ত তা সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত। তিন শ্রেণির পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে। যেমন ১) ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। ২) গরু, মহিষ। ৩) উট। তাদের আবার নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে। উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হবে। (মুআত্তা মালেক: ৭৫৪)
হাদিসে উল্লেখিত পশুগুলো ছাড়া কোরবানি শুদ্ধ হবে না। এমনকি বন্য পশু হালাল হলেও তা দিয়ে কোরবানি করলে আদায় হবে না; যদিও তা কেউ লালন-পালন করে থাকুক না কেন। যেমন: হরিণ, কেউ যদি কোনো হরিণের বাচ্চা ছোটবেলা থেকে গৃহপালিত পশুর মতো পালতে থাকে, তবু তা দ্বারা কোরবানি হবে না। কারণ স্বভাবত এরা গৃহপালিত নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- বন্য প্রাণী কোরবানি করার কোনো প্রমাণ রাসুল (স.) থেকে প্রমাণিত নয়।
বিজ্ঞাপন
মোটকথা, হাদিসে উল্লেখিত পশুগুলো ছাড়া অন্যকোনো পশু কোরবানি করা যাবে না। (হেদায়া: ৪/৪৪৮)
পবিত্র কোরআনেও বন্য প্রাণী কোরবানির কোনো ইঙ্গিত নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে প্রদান করেছেন, তার ওপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে নিজেরা আহার করো এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।’ (সুরা হজ: ২৮)
আরও পড়ুন: হজ ও ওমরা পালনকারীরা যেসব প্রতিদান পাবেন
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি; সেগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সুরা হজ: ৩৪)
উল্লেখিত দুটি আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝে আসে কোরবানির পশু হতে হবে গৃহপালিত প্রজাতিভুক্ত। কোরবানি ও হজ সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে কোরবানিযোগ্য যেসব পশুর নাম পাওয়া যায়- তার সবগুলোই গৃহপালিত পশু। উক্ত আয়াতদ্বয় এবং এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর ভিত্তিতে প্রাচীনকালের ইসলামিক স্কলাররা মত ব্যক্ত করেছেন যে, কোরবানির শুদ্ধ হওয়ার জন্য পশু গৃহপালিত প্রজাতির হওয়া শর্ত।
গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্য গরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। (কাজিখান: ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৫)
তাই যেসব এলাকায় উপরোক্ত হাদিস উল্লেখিত গৃহপালিত পশু না পাওয়া যাবে, তাদের জন্য উচিত বাহির থেকে আনানোর চেষ্টা করা। যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে একটি মধ্যম ধরণের বকরির মূল্যপরিমাণ টাকা কোরবানির নিয়তে দান করে দেওয়া।
আরও পড়ুন: যে বিষয়গুলো না জানার কারণে মানুষ হজ আদায়ে গড়িমসি করে
কোরবানির পশু যেমন হওয়া উত্তম: কোরবানির পশু হবে ত্রুটিমুক্ত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, মধ্যবয়সী ও দৃষ্টিনন্দন। যেমনটি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুসা বলল, আল্লাহ বলছেন, তা এমন গরু যা বৃদ্ধও নয়, অল্পবয়স্কও নয়—মধ্যবয়সী। সুতরাং তোমরা যা আদিষ্ট হয়েছ তা বাস্তবায়ন করো।..আল্লাহ বলছেন তা হলুদ বর্ণের গরু, তার রং উজ্জ্বল গাঢ়, যা দর্শকদের আনন্দ দেয়।..মুসা বলল, তিনি বলছেন, তা এমন এক গরু, যা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানিসেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি—সুস্থ, নিখুঁত।’ (সুরা বাকারা: ৬৮-৭১)
এই আয়াতের আলোকে ইসলামি আইনজ্ঞরা বলেন, কোরবানির পশু নিখুঁত, দৃষ্টিনন্দন, সুস্বাস্থ্যের অধিকার ও মধ্যবয়সী হওয়া উত্তম। দৃষ্টিনন্দন যেকোনো রঙের পশু যেমন কোরবানি করা যাবে, তেমনি চাষাবাদে ব্যবহৃত হওয়ার পরও যদি পশু ত্রুটিমুক্ত থাকে তাহলে তা দিয়েও কোরবানি করা যাবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গৃহপালিত, সুস্থ-সুন্দর পশু দিয়ে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বন্য পশু দিয়ে কোরবানি কুরবানির জন্য বণ্য প্রাণী জায়েজ কোরবানির জন্য হরিণ, গয়াল কোরবানি হবে ?