দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতিবছর এই ঈদে নামাজের পর ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা গবাদি পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আর এ কারণেই দেশে বেশিরভাগ পশুই বিক্রি হয় এই সময়ে।
ঈদকে ঘিরে ইতোমধ্যেই কোরবানির পশুর হাট সাজাতে ব্যস্ত সময় কাটছে হাট ইজারাদারদের। কোথাও কোথাও শতভাগ প্রস্তুতিও শেষ। আবার কিছু কিছু জায়গায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীতে ২০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে ১৫টির ইজারা চূড়ান্ত করেছে দুই সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তাদের ১০টি অস্থায়ী হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) পাঁচটি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। বাকি পাঁচটি হাটের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিবারের মতো এবারও দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ার স্থায়ী হাটেও বিক্রি হবে কোরবানির পশু।
সাধারণত ঈদের চারদিন আগে হাটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এর কয়েকদিন আগে থেকেই কোরবানির পশু উঠতে থাকে হাটগুলোয়। সেই হিসেবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ জুলাই ঈদ অনুষ্ঠিত হলে ৬ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিক হাট বসার কথা। তবে আগের অভিজ্ঞতা থেকে হাট সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন- আগামী ২ বা ৩ জুলাই থেকে হাটে কোরবানির পশু আসা শুরু হবে।
রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে অবস্থিত বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গায় প্রতিবছর পশুর হাট বসে। উত্তর সিটিতো বটেই, দক্ষিণ সিটির মধ্যেও এই হাটে এবার জমজমাট বিক্রির প্রত্যাশা করছেন হাট সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
ডিএনসিসি এলাকার এই হাটের ইজারাদার মো. নূর হোসেন। আর হাটটির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আলহাজ্ব কফিল উদ্দিন মেম্বার। বৃন্দাবনের এই হাটটির ইজারাদার নূর হোসেন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদকও। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমি এবারসহ গত তিন বছর ধরে হাটের ইজারাদারের দায়িত্ব পালন করছি। গতবার কিছু রাস্তায় সমস্যা ছিল। এবার রাস্তাগুলো সব পাকা হয়ে গেছে। মিরপুর থেকে আসার রাস্তাটিও খোলা আছে। ফলে এত সুন্দর খোলামেলা পরিবেশ হওয়ায় এবার হাটে বিক্রি জমে উঠবে বলে আশা করছি।
নূর হোসেন বলেন, আমার পাশে আরও একটি হাট আছে। তবে আমার এই হাটের পরিবেশ ভালো এবং খোলামেলা। ফলে ক্রেতারা গাড়ি নিয়ে আসলেও সমস্যা হবে না। বৃষ্টি হলে অন্যান্য বারের হাটের মতো এখানে কাদা হওয়ার সুযোগ নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য এটি বাড়তি পাওয়া।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাটের চারপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশ। সবুজ ঘাস আর মাঝখানে বয়ে গেছে পিচ ঢালা রাস্তা। একপাশে নির্মাণ করা হয়েছে পশুর হাটের জন্য শেড। সঙ্গে শেডের ওপর ত্রিপল বসানো হয়েছে। এছাড়া হাট আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন রাস্তায় সাজানো হয়েছে নানা ধরেনের তোরণ। সবমিলিয়ে হাটের প্রস্তুতির কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ। বর্তমানে শেষ মুহূর্তের কাজ হিসেবে গাড়ি থেকে গরু নামানোর জন্য র্যাম্প ও লাইটিংয়ের কাজ চলছে।
হাট ঘুরে আরও দেখা যায়- পুরো হাটজুড়ে গরু রাখার জন্য একাধিক শেড তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বসানো হয়েছে বাঁশের খুঁটি। আর উঁচু-নিচু স্থানগুলো ভরাট করা হয়েছে বালু-মাটি দিয়ে। শুধু তাই নয়, এই হাটে আসা বিক্রেতাদের সুবিধার কথা বিবেচনায় হাট কর্তৃপক্ষ পশুকে গোসল করানো, পানি খাওয়ানো ছাড়াও বিক্রেতাদের গোসলের জন্য ২৫০টি টিউবওয়েল স্থাপন করেছেন। সঙ্গে ১৫০টি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে, যা হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে ইজারাদার মো. নূর হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, এই হাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমার পক্ষ থেকে ২০০ স্বেচ্ছাসেবক থাকবে দিনে। আর রাতে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। তাদের সবার কাজ হবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দিক নির্দেশনা, গরু নামানোসহ হাটের মানুষদের সার্বিক সহযোগিতা করা।
এই হাটে কোনো দোকান বসতে দেওয়া হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে বাইরের খাবার কিনে খেতে আমরা বারবার নিষেধ করি, মাইকে প্রচার করি। যাতে কোনো বিক্রেতা বাইরের অচেনা-অজানা লোকের কাছ থেকে কোনো খাবার খেয়ে নিজের সম্পদ হারিয়ে না ফেলেন।
হাট সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন- আগামী ২ জুলাই থেকে উত্তরা বৃন্দাবন পশুর হাটে পশু আসা শুরু হতে পারে। এই হাটে সবচেয়ে বেশি গরু আসে কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা থেকে।
তবে এ বছর ব্যাপারিদের পাশাপাশি বিভিন্ন ফার্ম থেকে গরু বেশি আসতে পারে বলে ধারণা হাট ইজারাদারের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, একদিকে বন্যার ফলে অনেকেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যাপারিদের কাছে। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের গরু লালন-পালন করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারণ, গো-খাদ্যের দাম চড়া। এতে করে যাদের ফার্ম আছে তারা কষ্ট করে হলেও গরু লালন-পালন করছেন।
প্রতিবছর উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা মূলত এই হাট বসে। যা মূলত মেট্টোরেল ২ নম্বর স্টেশনের পশ্চিমে অবস্থিত। এ বছর এই হাটে আসার কয়েকটি রাস্তার কথা জানিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষ- যে কেউ এসব রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন। এরমধ্যে মিরপুর বেড়িবাঁধ হয়ে সরাসরি এই হাটে আসা যাবে। আশুলিয়া-বেড়িবাঁধ হয়েও এখানে আসা যাবে। এছাড়া মিরপুর ১০, ১১, ১২ ক্যান্টনমেন্ট থেকেও সহজেই এই হাটে আসা যায়। আবার উত্তরা হাউজবিল্ডিং হয়ে উত্তরা ১২ নম্বর দিয়েও হাটে আসতে পারবেন মানুষ।
এবার উত্তরা বৃন্দাবন হাটে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি এটিএম বুথ স্থাপন করবে। এছাড়াও হাসিলের টাকা ক্রেতারা ইচ্ছে করলে কার্ডের মাধ্যমে দিতে পারবেন। পাশাপাশি হাটে ব্যবসায়ীদের টাকা জমা দেওয়ার ভোগান্তি কমাতে ১৩টি হাসিল কাউন্টার তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে কোরবানিতে হাসিল শতকরা ৫ শতাংশ।
ডব্লিউএইচ/আইএইচ/এএস