কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)
কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় আমাদের সমাজে কোরবানিদাতার নাম উচ্চারণ করার রেওয়াজ রয়েছে। আসলে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরবানিটি যার পক্ষ থেকে করা হচ্ছে তার নাম পরিষ্কার ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া। এটি জায়েজ, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। কিছু হাদিসে (দোয়া পড়ে) কোরবানি করার আগে কার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হচ্ছে তার নাম বলে তারপর আল্লাহু আকবর বলে জবাই করার সমর্থন পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
যেমন হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ঈদের দিন দুটি মেষ জবেহ করেন। তিনি পশু দুটিকে কেবলামুখী করেন বলেন- “’ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল-আযদা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়ায়া ও মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা আন মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহি’’।’
দোয়ার অর্থ: “আমি একনষ্ঠিভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’’ (সুরা আনআম: ৭৯)। ’’(বলুন,) আমার নামাজ, আমার ইবাদত (কোরবানি), আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরিক নাই এবং আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আত্মসমপর্ণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম’’ (সুরা আনআম: ১৬২-৩)। হে আল্লাহ! আপনার নিকট থেকেই প্রাপ্ত এবং আপনার জন্যই উৎসগির্ত। অতএব তা মুহাম্মদ ও তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন।” (ইবনে মাজাহ: ৩১২১)
ভাগে কোরবানির ক্ষেত্রেও জবাইকারী সাতজন ব্যক্তির প্রতিনিধি হিসেবে শরিকদের নামগুলো উচ্চারণ করতে পারবেন। এতে দোষের কিছু নেই।
তবে মুখে সব শরিকের নাম বলা জরুরি বিষয় নয়; বরং জবাইকারী শুধু পশুটির মালিকদের নামে কোরবানি করছেন- এতটুকু মনের মাঝে রেখে জবাই করলেও কোরবানি বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই নাম বলা নিয়ে জবাইকারীকে পেরেশানি করার প্রয়োজন নেই। (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ: ১৫/৫১৭; বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৭১)
বিজ্ঞাপন
স্মরণ রাখতে হবে, কাদের পক্ষ থেকে পশু কোরবানি করা হচ্ছে, সেটি পশু ক্রয়ের সময়ই নির্ধারিত হয়ে গেছে। তাই কোরবানিদাতার নাম যে উচ্চারণ করতেই হবে তা নয়। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি কোরবানির পশু জবাই করার সময় মুখে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন।
সুতরাং, বোঝা গেলো—কোরবানির আগে নিশ্চিত হওয়ার জন্য নামগুলো পাঠ করা যেতে পারে, আবার না করলেও অসুবিধা নেই। এভাবে উল্লেখ করলেও হবে যে, আমরা অমুক বলছি, আমাদের কোরবানি কবুল করুন, অথবা সবার তরফ থেকে কোরবানি কবুল করুন। (তথ্যসূত্র: সহিহ বুখারি: ৫৫৫৮,সহিহ মুসলিম: ১৯৬৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাহ সমর্থিত নিয়মে কোরবানির পশু জবাই করার তাওফিক দান করুন। সবার কোরবানিকে তিনি কবুল করুন। আমিন।
জবাই করার সময় নাম উচ্চারণ, নামে কোরবানি, মানুষের নামে কোরবানির পশু জবাই, শরিকদের নামে কোরবানি জায়েজ