কোরবানির ঈদকে ঘিরে বরিশাল জেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী ৬৩টি গরুর হাটের অধিকাংশ মঙ্গলবার পর্যন্ত জমে ওঠেনি। ঈদের আগের দিন বিক্রির আশায় বুক বেঁধেছেন হাটের গরু ব্যবসায়ীরা। তবে স্থানীয় খামারগুলোর অর্ধেকের বেশি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এসব খামারে দেশি, শাহীওয়াল ও ফিজিশিয়ান গরু বিক্রি হচ্ছে।
বরিশাল নগরীসহ আশপাশের হাট ও খামার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ হাটে গরু ও ক্রেতা সংকট রয়েছে। হাটগুলোতে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় দামও অধিক। এক লাখ টাকার নিচে কোনো ছোট বা মাঝারি গরুর দেখা মেলেনি। তবে ব্যতিক্রম দৃশ্য স্থানীয় খামারগুলোতে।
বিজ্ঞাপন
এসব খামারের দেশি-বিদেশি গরুর অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে পশুর হাট এখনও জমে ওঠেনি। বরিশাল নগরীর কাগাশুরা, চরমোনাই, জেলার বানারীপাড়া উপজেলার গুয়াচিত্রাসহ কয়েকটি হাটে কিছুটা ক্রেতার সমাগম রয়েছে। তবে অধিকাংশ হাটে কোরবানির পশু ও ক্রেতা শূন্য। যে কয়টি গরু উঠেছে তার দামও গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এবার বরিশালে মোট ৬৩টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে।
বরিশালের খামারগুলোতে দেশি, শাহীওয়াল ও ফিজিশিয়ান গরু পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ৭৫ কেজি থেকে সাড়ে ৫০০ কেজি ওজনের কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লাখ টাকায়। তবে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খামার মালিকরা।
নগরীর সাদ সাঈদ অ্যাগ্রো খামারের পরিচালক মিরাজ বলেন, সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে গরুগুলোকে লালন পালন করেছি। তাছাড়াও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী খামারে ৬০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত গরু রয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা এসব গরু নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি। হাটে গিয়ে গরু কিনলে ক্রেতার অতিরিক্ত টাকা খরচসহ পশু বহনের ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই ক্রেতারা আমাদের দিকে ঝুঁকছেন।
বিজ্ঞাপন
নগরীর এমইপি অ্যাগ্রোর ফার্ম ম্যানেজার রাফিউর রহমান বলেন, ৩ শতাধিক গরু রয়েছে। এর ৭৫ ভাগ গরু বিক্রিও হয়েছে। তবে এখনও ৩২ মণেরও একটি গরু আছে। নাম রাখা হয়েছে ‘টাইটানিক’। প্রতিষ্ঠানটি গরুটির দাম হাকিয়েছে ৮ লাখ টাকা। এছাড়াও এই ফার্মে ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত গরু, ছাগল সংগ্রহে রাখা হয়েছে।
গরু ব্যবসায়ী আতাহার উদ্দিন বলেন, ১৩টি গরু নিয়ে বরিশালের হাটে বসেছিলাম। মাত্র চারটি গরু বিক্রি হয়েছে। কোরবানির আর মাত্র একদিন বাকি। এতগুলো গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। এর মধ্যে আবার দিনভর বৃষ্টিতে কেউ হাটমুখি হননি।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ৫টি গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী আরাফাত মিয়া বলেন, মাত্র দু’টি গরু বিক্রি করেছি। গতবছরের চেয়ে দাম অনেক বেশি তাই ক্রেতা কম। খাবারের দাম বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম বেড়েছে।
ক্রেতা মোতালেব মিয়া বলেন, হাটে অনেক গরু থাকলেও দাম বেশি। তাই পশু পছন্দ হলেও দামে পছন্দ হয় না। পছন্দের গরু খুঁজতে দু’টি হাট ঘুরেছি। কিন্তু পশু কিনতে পারিনি।
ক্রেতা ইয়াসিন মোল্লা বলেন, কয়েকটি হাট ঘুরে পশু কিনতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই আমার বন্ধুর পরামর্শে খামারিদের কাছ থেকে গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ খামার থেকে কিনলে খাজনা ও গাড়ি ভাড়া দিতে হয় না। খামারের পরিবহনে গরু বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ায় ঝামেলাও কম।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল আলম বলেন, চলতি বছরে বরিশাল জেলায় ৯০ হাজার ৯২৮টি কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে জেলায় ৬ হাজার ৪৩০টি খামারে কোরবানির পশু রয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৪০৮টি। বরিশাল জেলায় এবার চাহিদার বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। তাই এবার কোরবানির পরও পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
প্রতিনিধি/এসএস