রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ইসলাম পরিচ্ছন্নতার ধর্ম, বর্জ্য অপসারণ জরুরি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৩, ১১:০৭ এএম

শেয়ার করুন:

ইসলাম পরিচ্ছন্নতার ধর্ম, বর্জ্য অপসারণ জরুরি

ইসলাম পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ধর্ম। অপরিচ্ছন্নতা ও অপবিত্রতার স্থান ইসলামে নেই। আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা অর্জনকারীদের খুব পছন্দ করেন। মদিনার নিকটবর্তী কুবা এলাকার লোকজন পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করত। তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেখানে এমন লোকেরা রয়েছে, যারা ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করে । আর আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৮)

আরও বর্ণিত আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাকারা: ২২২)


বিজ্ঞাপন


কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক সময় কোরবানিদাতাদের অবহেলার কারণে কোরবানির বর্জ্যে পরিবেশ দূষিত হয়ে যায়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোরবানির পশুর রক্ত, মজ্জা, হাড়গোড় আর বিষ্ঠায় কোনো কোনো এলাকা বিশাল ভাগারে পরিণত হয়। উৎকট গন্ধে ঈদের আনন্দটাই ম্লান হয়ে যায়। পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এমন অবহেলা অন্তত ঈমানদার ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে মোটেও কাম্য নয়। ইসলামে বর্জ্য অপসারণ

জুমার দিন অতিরিক্ত লোকসমাগমের ফলে ঘামের দুর্গন্ধে অন্যদের কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল বলে রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবায়ে কেরামদের গোসল করে পরিষ্কার কাপড় পরে সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যেই ইসলাম মানুষকে দুর্গন্ধের কষ্ট থেকে বাঁচাতে এতটাই পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দিয়েছে, সেই ইসলামের মহান ইবাদত কোরবানি কি অপরিচ্ছন্নতার কারণ হতে পারে? না। কখনো না। ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব

কোরবানির পর পরিবেশ দূষণের জন্য প্রথম দায়ী হচ্ছেন কোরবানিদাতারা। তাদের অনেকে মনে করেন, কোরবানির পশুর দেহ থেকে চামড়া ছাড়ানো, গোশত সংগ্রহ এবং বণ্টনেই তাদের দায়িত্ব শেষ। বর্জ্য অপসারণ শুধু সিটি কর্পোরেশনের কাজ—এ ধারণা কিছুতেই ঠিক নয়। বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব তো প্রথমে কোরবানি দাতার। যথাসময়ে বর্জ্য অপসারণে অবহেলা করায় তা প্রতিবেশী, আশপাশের মানুষের কষ্টের কারণ হলে এর দায় কোরবানিদাতাকেই নিতে হবে। 

যত্রযত্র কোরবানির বর্জ্য ফেলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার ইসলাম কাউকেই দেয়নি। এমনকি তা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যার কষ্ট থেকে আশপাশের মানুষেরা নিরাপদ নয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারি: ৫/২২৪০; মুসলিম: ১/৬৮)।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: কোরবানির গোশত বিতরণের সঠিক নিয়ম

পক্ষান্তরে যথাসময়ে বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে জনসাধারণকে এ কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকলে রয়েছে মহান পুরস্কারের ঘোষণা। হজরত আবু সায়িদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য খেয়ে জীবনযাপন করবে, সুন্নত অনুসারে আমল করবে এবং কোনো মানুষ তার দ্বারা কষ্ট পাবে না সে জান্নাতি হবে।’ (তিরমিজি: ৪/৬৬৯)।

তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই সচেতন না হলে শুধু রাষ্ট্রের পক্ষে এ বিশাল বর্জ্য অপসারণ খুবই কঠিন। কোরবানির বর্জ্যরে পরিষ্কারের ব্যাপারে অবহেলা ঈমানের দুর্বলতারই প্রমাণ বহন করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ইমানের ৭০টিরও বেশি শাখা আছে, এর মধ্যে ন্যূনতম শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা।’ (মুসলিম: ৩৫)

ঈমানের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি যত্নবান হলে বিনিময়ে মিলবে আল্লাহর পক্ষ থেকে। নবীজি (স.) বলেন, ‘একব্যক্তি রাস্তায় চলতে চলতে একটি কাঁটাওয়ালা ডাল দেখতে পায়, সে ডালটি সরিয়ে দেয়। আল্লাহ তার এ কাজ কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি: ১/২৩৩; মুসলিম: ৩/১৫২১)।

মনে রাখতে হবে, পরিবেশের মালিক আমি নই। আমাকে কেবল ভোগের অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেই ভোগের অধিকার আমার একার নয়, অবাধও নয়। আমার ব্যবহারের ফলে পরিবেশকে দূষিত করার অধিকার ইসলাম আমাকে দেয়নি। আমার চেতনা থাকবে, কোরবানি বর্জ্য আমিই অপসারণ করবো। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সঠিক বোধ দান করুন। আমিন। ইসলামে বর্জ্য অপসারণের গুরুত্ব

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর