ত্যাগ ও বিসর্জনের বার্তা নিয়ে আসে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ত্যাগ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করার জন্য নিজের প্রিয় সন্তানকে জবাই করতেও এদিক-ওদিক ভাবেননি হজরত ইবরাহিম (আ.)। শিশু ইসমাইলও আল্লাহর নির্দেশের খবর জেনে জবাই হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রিয় সন্তানকে জবাই করতে হয়নি তাঁকে। ঈদের দিন আল্লাহু আকবর
তাঁরা জানতেন মহান রবের নির্দেশ উপেক্ষা করা একজন গোলামের জন্য মোটেও শোভনীয় নয়। সেই মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইবরাহিম (আ.) খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এখান থেকেই পশু কোরবানির নির্দেশনা আসে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য।
বিজ্ঞাপন
তাই ঈদের দিনে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ করতে হবে বেশি। মুমিন জীবনে আল্লাহু আকবর ধ্বনির চেয়ে বড় কোনো ধ্বনি নেই। আল্লাহু আকবর অর্থ—আল্লাহ মহান। এই তাকবির উচ্চারণের মাধ্যমে মূলত আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। শক্তি-সামর্থ্য-সম্মান সবদিক থেকে আল্লাহ মহান, সবার ঊর্ধ্বে—তাকবির সে অর্থেরই প্রতীক। ঈদের দিন আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা
পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানি উদযাপনের পুরো প্রক্রিয়াটিই ‘আল্লাহু আকবর’-এর মর্মবাণীকে তুলে ধরে। তাকবিরে তাশরিকের প্রথম বাক্যও ‘আল্লাহু আকবর’। জিব্রাইল (আ.)-এর মুখে কোরবানির দিন এই শব্দ উচ্চারিত হয়েছিল। তাকবিরে তাশরিকের পটভূমি ব্যাখ্যায় বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন, যখন ইবরাহিম (আ.) স্বীয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি রাখলেন, আল্লাহর নির্দেশে হজরত জিবরাঈল (আ.) একটি দুম্বা নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করছিলেন। কিন্তু জিবরাঈল (আ.)-এর আশঙ্কা ছিল, তিনি দুনিয়াতে পৌঁছার আগেই ইবরাহিম (আ.) জবাইপর্ব সমাপ্ত করে বসবেন। ফলে তিনি আসমান থেকে উঁচু আওয়াজে বলে উঠলেন- ‘আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর।’
ইবরাহিম (আ.) আওয়াজ শুনে আসমানের দিকে নজর ফেরাতেই দেখতে পেলেন জিবরাঈল (আ.) একটি দুম্বা নিয়ে আগমন করছেন। ফলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর।’ পিতার কণ্ঠে এই কালিমা শুনতেই ইসমাঈল (আ.) উচ্চারণ করলেন- ‘আল্লাহু আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
খেয়াল করলে দেখবেন প্রত্যেকের কথায় ‘আল্লাহু আকবর’ আছে। এর প্রকাশ করার মাধ্যমে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব ঘোষণা করা হয়। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে কল্যাণকর নির্দেশ এবং বান্দাকে সেই নির্দেশ পালন করার তাওফিক দেওয়ার কারণে মহান আল্লাহর শুকরিয়া এবং তাঁর মহত্ব বর্ণনা করা ঈদের তাৎপর্য। হজ ও কোরবানির বিধান যেমন আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন, তেমনি তাঁর ওপর শুকরিয়া আদায়ের শিক্ষাও তিনিই দিয়েছেন। বান্দার সমগ্র সত্ত্বাজুড়ে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্বের ঘোষণা ও বহিঃপ্রকাশ বান্দাকে পূর্ণ শোকরগুজার বান্দায় পরিণত করে, ঈমানের নূরে আলোকিত হয় তাঁর ত্যাগ ও ঈদ উদযাপন।
বিজ্ঞাপন
এজন্য অন্তর থেকে আল্লাহর বড়ত্ব স্বীকার করার পাশাপাশি মৌখিকভাবেও ‘আল্লাহু আকবর’ বলা ঈদের দিনের একটি উত্তম জিকির। সাহাবায়ে কেরাম ও সলফে সালেহিন ঈদের রাতে ও সকালে তাকবির পাঠ করতেন। ঈদগাহে যাওয়ার সময়ও তাকবির বলতেন।
ঈদের নামাজের অতিরিক্ত তাকবির এবং খুতবার তাকবিরগুলো ঈদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এই বিধানগুলোর মধ্য দিয়ে মূলত জগতের সকল মিথ্যা বড়ত্বের দাবিদারকে পরিত্যাগ করা হয়। স্বীকার করে নেওয়া হয় লা-শরীক আল্লাহর বড়ত্বকে। আর এটিই মুমিনের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ।
ইসলামকে বাদ দিয়ে মানুষ যেসব মত ও ব্যবস্থা তৈরি করে নিয়েছে, যে সংস্কৃতিকে কুর্ণিশ করছে আর অর্থ-সম্পদ, প্রবৃত্তি ইত্যাদি দুনিয়াবি ছলনাকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে-সকল মিথ্যার প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়ে আল্লাহর বড়ত্ব ও কর্তৃত্বে প্রত্যাবর্তন করা এবং কর্ম, চিন্তা ও চেতনায় আল্লাহর আনুগত্য মেনে নেওয়াই হলো এই দীনের দাবী ও মর্মবাণী।
তাই ঈদের দিনে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ঘোষণার মাধ্যমে উজ্জীবিত হওয়া, এক আল্লাহর আনুগত্যে সমর্পিত হওয়া মুমিন মুসলমানের জন্য বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদের দিনে তাকবির ধ্বনি মননে-মগজে ও জিহ্বায় জারি রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

















































































































































































































































































































