সপ্তাহখানেক বাদেই কোরবানির ঈদ। তাই আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ ছাড়াও চলছে কেনাবেচা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক খুললেই দেখা মিলছে গরুর ছবির। সঙ্গে রয়েছে গরু বিক্রির বিজ্ঞাপনও। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতি ও গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার খামারিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কোরবানি উপলক্ষে বেড়েছে গরু ও খামারের সংখ্যা। তবে করোনা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সেই তুলনায় বাড়েনি গরুর চাহিদা। তাই ঈদ ঘনিয়ে আসলেও সোনাগাজী উপজেলায় কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য অনলাইনে পশুর হাট নামে বেশ কয়েকটি ফেসবুক আইডি খোলা হলেও তেমন একটা সাড়া পাচ্ছেন না খামারি ও সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
খামারিরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হওয়ায় এবং দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ হাটে ক্রেতা কম থাকতে পারে। এমতাবস্থায় গরুর দাম ও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা। ফলে খামারিদের আশঙ্কা- কোরবানির হাটে পশুর দাম কম থাকলে খামারিদের সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
এদিকে, উপজেলার চরাঞ্চলে মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন কারণে গরু-মহিষের চারণভূমি ছোট হয়ে আসায় গো-খাদ্য নিয়েও নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খামারিরা কোরবানি উপলক্ষে গরু লালন-পালন করে থাকেন। সেই সঙ্গে এবার পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু আনা বন্ধ থাকায় অনেক নতুন খামারিরাও গরু পালনসহ মোটাতাজাকরণে ঝুঁকেছেন। এ কারণে উপজেলায় দিন দিন খামারির সংখ্যা বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর উপজেলায় খামারির সংখ্যা ছিল এক হাজার ৫৬০টি। এসব খামারে কোরবানির জন্য ১৭ হাজার ৫০৫টি পশু পালন করা হয়। তবে এ বছর খামারি সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পশুর সংখ্যাও বেড়েছে। এবার উপজেলায় এক হাজার ৫৮১টি খামারে মোট ১৭ হাজার ৬০০টি পশু কোরবানি উপলক্ষে লালন-পালন করা হয়েছে। এই হিসেবে গত বছরের চেয়ে এবার ২১টি খামার বৃদ্ধিসহ ৯৫টি পশুর সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা সমস্যার কারণে বাজারে গো-খাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। এতে আরও বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
খামারিদের ভাষ্য, করোনা সংকটের আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১২শ’-১৩শ’ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। শুধু গমের ভুসি নয়, খৈলসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির ২৫ কেজির দানাদার গো-খাদ্য (সম্পূরক) যেখানে ৯০০ টাকা বস্তা ছিল তা এখন বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার খামারিদের মধ্যে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতকান্দি এলাকার রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বড় খামার। ইতোমধ্যে সেখানে তিনি ১৫-২০টি গরু এবারের কোরবানি ঈদে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন। তবে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গরুগুলো বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।
রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে খামারে গরু পালন করি। এবার আমার খামারের সবচেয়ে বড় ব্রাহমা জাতের একটি গরু রয়েছে, যার ওজন প্রায় ৪৫ মণ ছাড়িয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত গরুটির দাম হাঁকানো হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। বাকি গরুগুলোর ওজনও প্রায় ৮-১২ মণ হবে।
এবার বেশি আয়ের আশা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গরুগুলো বিক্রি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের এক-দুই মাস আগে থেকে ব্যাপারিরা এসে দর-দাম করে গুরু নিয়ে যেতে। আর বাকি গরুগুলো উপজেলার বিভিন্ন বাজার ছাড়াও চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করতাম। তবে এবার এখন পর্যন্ত ব্যাপারিদের কোনো খোঁজ-খবর নেই। এতে মনে হয় এবার লোকসান গুণতে হবে।
অপর খামারি শাহিদ ও ফরিদ একই শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন সংকটের কারণে সরকার নানা খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। খামারিদের প্রণোদনা না দিয়ে গো-খাদ্যের দাম কমিয়ে দিলে তারা উপকৃত হতেন।
সার্বিক বিষয়ে সোনাগাজী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সার্জন কল্লোল বড়ুয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, গতবারের তুলনায় উপজেলায় এবার খামারি ও কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির মাঝেও এবার উপজেলায় ১৯টির বেশি কোরবানির হাট বসবে। সবমিলিয়ে পশু কেনাবেচা কেমন হয়- এখন সেটাই দেখার বিষয়।
ইতোমধ্যেই উপজেলার যেসব বাজারে বেশি পশু বিক্রি হয় সেসব বাজারগুলোতেও সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানো নিয়ে চিন্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ সামাজিক দূরত্ব না মানলে করোনার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
/আইএইচ