রোববার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

একজন একভাগ আরেকজন একাই ছয়ভাগে কোরবানি শুদ্ধ হবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৩, ০৫:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

একজন একভাগ আরেকজন একাই ছয়ভাগে কোরবানি শুদ্ধ হবে কি?

কোরবানি ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন—‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

শরিকে কোরবানির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানা জরুরি। শরিয়ত নির্দেশিত নিয়ম না মানলে কোরবানি শুদ্ধ হয় না। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজনের কারণে কোনো শরিকেরই কোরবানি হয় না। যেমন কেউ হারাম টাকায় শরিক হলে এবং কারো নিয়তে গণ্ডগোল থাকলে একজনের কারণে কোনো শরিকেরই কোরবানি সহিহ হবে না। (সহিহ মুসলিম: ২২১৫; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮; কাজিখান: ৩/৩৪৯)


বিজ্ঞাপন


প্রশ্নে উল্লেখিত ক্ষেত্রে তথা একজন একভাগ ও আরেকজন একাই ছয়ভাগে কোরবানি করলে সমস্যা নেই। কেননা শরিকে কোরবানিতে প্রত্যেক অংশ পূর্ণ একভাগ হওয়া এবং সমান হওয়াটাই জরুরি। ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, কোরবানির পশুতে প্রত্যেক অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭)

‘উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ।’ (মুসলিম: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭)

শরিকে কোরবানি করলে গোশত ওজন করে বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নেই। তবে হাড্ডি-মাথা ইত্যাদি যেসব অংশ সাধারণত সমানভাবে ভাগ করা যায় না, সেগুলো অনুমান করে ভাগ করা যাবে। এতে সামান্য কমবেশি হলে সমস্যা নেই। (ফতোয়ায়ে কাজিখান: ৩/৩৫১)

একজন ছয়ভাগ ও অন্যজন একভাগে কোরবানির ক্ষেত্রে আলেমদের পরামর্শ হলো- যে ছয়ভাগ নিতে পারছে, সে একই টাকা দিয়ে একা একটি পশু কিনে কোরবানি করা, একইভাবে যে একভাগ নিচ্ছে সে একা ছোট একটা পশু কোরবানি করা শ্রেয়। এভাবে করলে শরিকের নিয়ত ও উপার্জন নিয়ে কিংবা ভাগাভাগির গরমিল নিয়ে বাড়তি টেনশন করতে হয় না, অন্যদিকে একই টাকার মধ্যে সুন্দরভাবে কোরবানিটা সম্পন্ন হয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন


সামর্থ্যবান স্বাধীন ব্যক্তির ওপর শুধুমাত্র একটি কোরবানি ওয়াজিব হয়। অনেক সম্পদের মালিক হলেও একটি কোরবানিতেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য একাধিক পশু কোরবানি করলে বেশি সওয়াব হবে, কিন্তু সেটি জরুরি নয়।

সুতরাং, সওয়াবের নিয়তে কেউ সামর্থ্য অনুযায়ী একাধিক ভাগে শরিক হলেও কোরবানি শুদ্ধ হবে এবং এতে অনেক সওয়াব লাভ হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এতে আমাদের কী লাভ?’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’ সাহাবায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সওফ তথা দুম্বা, ভেড়া ও উটের পশমের বিনিময়ে কি এ পরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে?’ রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘হ্যাঁ, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২৭)

উল্লেখ্য, তিন শ্রেণির চতুষ্পদ জন্তু দিয়ে কোরবানি করা যায়। যেমন ১) ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। ২) গরু, মহিষ। ৩) উট। কোরবানির জন্য উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। (মুআত্তা মালেক: ৭৫৪) ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে, কোনো অবস্থাতেই ওই ছাগল দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। (ফাতাওয়া কাজিখান, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২০৫-২০৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবানদের বিশুদ্ধ নিয়ত ও হালাল উপার্জন দিয়ে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। শরিকে কোরবানির ক্ষেত্রে শরিয়ত নির্দেশিত নিয়মগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর