কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরবানিতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের শিক্ষা এবং আল্লাহর ভালোবাসায় নিজের সব চাহিদা ত্যাগ করার শিক্ষা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত।’ (সুরা আনআম: ১৬২)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন। যেসব পশু দিয়ে কোরবানি করা হয়, সেগুলোর চামড়া দিয়ে নিজে উপকৃত হওয়া যায়। তবে বিক্রি করে মূল্য নিজে গ্রহণ করা যায় না এবং কাজের বিনিময় হিসেবেও দেওয়া যায় না। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (স.) আমাকে তার কোরবানির পশু জবাই করতে, পশুর গোশত, চামড়া ও নাড়িভুঁড়ি সদকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এগুলোর কোনো কিছু কসাইকে দিতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি: ১৭১৭; মুসলিম: ১৩১৭)
বিজ্ঞাপন
‘যে ব্যক্তি কোরবানি করবে, সে কোরবানির চামড়া বা গোশত বিক্রি করে তার মূল্য নিজের কাজে লাগাতে পারবে না এবং চামড়া ও গোশত দিয়ে কসাইয়ের মজুরিও দিতে পারবে না।’ (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩০১)
‘কোরবানিদাতা নিজে চামড়ার মূল্য খরচ করতে পারবেন না।’ (ফতোয়ায়ে কাজিখান: ৩/৩৫৪)
তবে, কোরবানিদাতা চামড়া ব্যবহার করতে চাইলে, তা পারবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরবানির পশুর চামড়া দ্বারা উপকৃত হও; তবে বিক্রি করে দিও না।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ খণ্ড: ৪ পৃ-২৯)
বিক্রি করে দিলে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩০১)
আর তা গরিব, এতিম ও অসহায়দের দিতে হবে। অর্থাৎ যারা জাকাত ও ফিতরা পাওয়ার উপযুক্ত, শুধু তারাই কোরবানির চামড়ার অর্থ পাওয়ার হকদার। এক্ষেত্রে এতিম ও দরিদ্র তালিবে ইলম তথা ইলমে দ্বীনের দরিদ্র শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া যাবে। ইলমে দ্বীনের দরিদ্র শিক্ষার্থীকে জাকাত, ফিতরা ও কোরবানির চামড়ার মূল্য প্রদানে বেশি সওয়াব আছে। কেননা কোরআনে বর্ণিত জাকাত-দান-সদকার একটি খাত হলো—ফি সাবিলিল্লাহ। জিহাদরত মুজাহিদ, হজের সফরে থাকা দরিদ্র ও ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দরিদ্ররা এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। (দুররুল মুখতার: ৩৪৩, হেদায়া: ১/১৮৫, রুহুল মাআনি: ৬/৩১৩)
মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তেই কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা যাবে। নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েজ ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩০১; কাজিখান: ৩/৩৫৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরবানির সকল মাসয়ালা জানার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।