শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঢাকার অলি-গলি যেন ছাগলের হাট!

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৩, ০৫:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

ঢাকার অলি-গলি যেন ছাগলের হাট!
ছবি: ঢাকা মেইল।

রাত পোহালেই দেশজুড়ে পালিত হবে মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ মুহূর্তে তাই জমে উঠেছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী পশুর হাটগুলোয়। তবে ঈদকে ঘিরে শেষ সময়ে রাজধানীর অলি-গলি এখন রূপ নিয়েছে ছাগলের হাটে, মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে ছাগল। যদিও মাঝে বাগড়া দিচ্ছে বৃষ্টি। তবে বৃষ্টি একটু কমলেই অনেককে ছাগল নিয়ে অলি-গলিতে হেঁটে হেঁটে ক্রেতা খুঁজতে দেখা গেছে।

গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর অলি-গলিতে ছাগল বিক্রির এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সবশেষ আজ বুধবার (২৮ জুন) সকালেও বৃষ্টির মাঝেই নগরীর অলি-গলিতে ব্যাপারীদের ছাগল নিয়ে হাঁকডাক দিতে দেখা গেছে। একটি কিংবা দুটি নয়, কেউ ২০টি, কেউবা ৩০ কিংবা ৫০ আবার কেউ কেউ ১০০টি ছাগলও সঙ্গে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন।


বিজ্ঞাপন


তবে শেষ সময়ে বৃষ্টির কারণে ছাগল বিক্রেতারা বেশ বিপাকেই পড়েছেন। গরু বৃষ্টিতে ভিজলে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও ছাগলের ক্ষেত্রে প্রায়ই নানা সমস্যা দেখা দেয়। ফলে গত দুইদিন অলি-গলিতে ফেরি করে বিক্রি করলেও আজ সকাল থেকে খুব একটা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে পারেননি ব্যাপারীরা। তবে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে কিংবা অলি-গলির মাথায়, স্কুলের মাঠ বা ক্লাবের বারান্দায় বা সামনে তাবু টাঙিয়ে ব্যাপারীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যেখানে বৃষ্টি কিছুটা কমলেই আশপাশের বিভিন্ন ফ্ল্যাট-বাসা থেকে অনেককেই নিচে নেমে এসে দরদাম করতে দেখা গেছে।Goatবুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকার দুই প্রান্তেই বেশকিছু ছাগল নিয়ে ব্যাপারীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এছাড়াও রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনেও এক ব্যাপারীকে কিছু ছাগল নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় বৃষ্টি থামার। এ সময় কথা হলে ছাগল বিক্রেতা আজমত মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, গত তিন দিনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ২৮টি ছাগল বিক্রি করেছি। ১২টা বাকি আছে। বৃষ্টি না হলে এতক্ষণে হয়তো বেচা শেষ হয়ে যেত।

সকালে এই এলাকায় আসার সময় মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় দুটি ছাগল বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টি কিছুটা কমলে রাজাবাজার হয়ে পান্থপথের দিকে যাবো।

শুধু আজমত মিয়াই নয়, বুধবার রাজধানীর কলাবাগান, শুক্রবাদ, ধানমন্ডি খেলার মাঠ, ধানমন্ডি-১৫, সাতমসজিদ রোড, কারওয়ান বাজার এমনকি গুলশান এলাকাতেও অনেক বিক্রেতাকে অলি-গলির পাশে থাকা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ছাগল নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবারও (২৭ জুন) রাজধানীর ইসিবি চত্বর, পল্লবী, মানিকদি বাজার এলাকা ঘুরে ছাগলের পাল নিয়ে এভাবেই ব্যাপারীদের ঘুরতে দেখা গেছে।

পল্লবী এলাকায় ২০টি ছাগল নিয়ে ঘুরছিলেন হারুন মিয়া। কথা হলে ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ছাগল হাটে খুব একটা বিক্রি হয় না। বেশিরভাগ ক্রেতা এরকম চলতি পথেই কিনেন। হাসিল দেওয়ার ঝামেলাও নেই।Goatদাম নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমার কাছে ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাগল আছে। বেশিরভাগ ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে।


বিজ্ঞাপন


এ দিন মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকায় ছাগল কিনতে দেখা যায় ইব্রাহিমকে। ঢাকা মেইলকে এই ক্রেতা বলেন, ১৬ হাজার টাকায় কিনেছি। সড়কে দুই ব্যাপারী ৮০টি ছাগল এনেছিল। আমরা ১২ জন কিনেছি এখান থেকেই। গরুর হাটে যাব ভাবছিলাম, তবে ছাগল কেনার আর ঝামেলা রইল না।

ইব্রাহিম আরও বলেন, গরুর হাটে ঘুরে ঘুরে কোরবানির পশু দেখতে অনেক সময় লাগে। হাটে গরু কিনে নিলে পরে কেউ ছাগলের হাটে যেতে চায় না। আবার প্রথমে ছাগল কিনলে পরে গরুর হাটে ছাগল নিয়ে ঘুরাও যায় না। তাই প্রতিবছরই ছাগল এভাবেই ব্যাপারীদের কাছ থেকে কিনি।

এদিকে, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় কথা হয় ব্যাপারী ইমাম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, ছোট সাইজের ছাগল বিক্রি শেষ। বড় কয়েকটা ছাগল আছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় তিনটি ছাগল ১ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। অন্যগুলো ৩০-৪০ হাজার করে।

এ সময় ঈদুল আজহাকে ঘিরে এবার ব্যবসায়ীরা ঝিনাইদহ, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া থেকে সবচেয়ে বেশি ছাগল এনেছেন বলেও জানান তিনি।Goatশুধু কাজীপাড়া বা মিরপুরেই নয়, ছাগল বেচাকেনার এমন দৃশ্য দেখা গেছে রাজধানীর নতুনবাজার মোড় ছাড়াও বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা এলাকাতেও। বৃষ্টির মধ্যে অনেকেই ছাতা মাথায় নিয়েই বেড়িয়েছেন কোরবানির পশু কিনতে।

বুধবার বাংলামোটর এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচ থেকে দামাদামি করে দুটি ছাগল ৩৩ হাজারে কেনেন আশরাফুল ইসলাম। সঙ্গে থাকা আশরাফুলের ছেলে ছাগল কিনতে পেরে বেশ খুশি। পরে বাবা-ছেলে মিলে কিছু কাঁঠালপাতার ডাল কিনে রওয়ানা হন বাসার উদ্দেশ্যে।

আশরাফুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, গরু কিনতে আমাদের বাসার লোকজন সকালে বৃষ্টির মধ্যে আফতাবনগর হাটে গেছে। এদিকে বাচ্চাটা সকাল থেকে হাটে যেতে বসে আছে। পরে বৃষ্টি থামছেই না দেখে ছাতা মাতায় বেড়িয়ে ছাগল কিনলাম। আসলে প্রতিবছর ছাগল আগে কেনা হয়। এতে বাচ্চারা একটু খুশি হয়, আদর করে। ছাগলকে এটা-সেটা খাওয়ায়। তবে এবার আগে কিনতে পারিনি।

ছাগলের দাম নিয়ে তিনি বলেন, এবার দাম খুব একটা বেশি তা বলবে না। তবে গরুর দাম শুনেছি বেশি যাচ্ছে।

এ বছর রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাটগুলোয় বড় বড় কিছু ছাগল দেখা গেছে। ওজনভেদে লাখ টাকার ওপরে দাম চাওয়া হচ্ছে এসব ছাগলের। যদিও অনেক ক্রেতাই অভিযোগের সুরে বলেছেন- ছাগলের দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। তবে শেষ সময়ে অল্প লাভেই ক্রেতাদের হাতে ছাগল তুলে দিতে গেছে ব্যাপারীদের।

ডব্লিউএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর