বাড়ি যাওয়ার জন্য দুই ঘণ্টা থেকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখনো গাড়ি পাচ্ছি না। আর যে গাড়ি পাই সেগুলোতে অনেক বেশি ভাড়া। ৩০০ টাকার ভাড়া এখন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দাবি করেছে। কিন্তু এত টাকা দিয়ে কীভাবে বাড়ি যাব?
মঙ্গলবার (২৭ জুন) বিকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে প্রতিবেদকের কাছে এই কথাগুলো বলছিলেন ইব্রাহিম আলী। তিনি পেশায় রিকশাচালক। শেরপুর জেলার বাসিন্দা। কিন্তু বর্তমানে বসবাস করেন রাজধানীর তেজকুনি বাজার এলাকায়। তবে ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়েছেন দুপুর দুইটায়। কিন্তু বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোনো গাড়ি পান নাই।
বিজ্ঞাপন
ইব্রাহিম আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার বাড়ি শেরপুরে। ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে যেতে পারছি না। তাই কম ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
মকবুল আলী নামের আরেক যাত্রী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার বাড়ি জামালপুরে। আমি ঢাকায় ভবন নির্মাণে কাজ করি। তাই ঈদের বাড়ি যাওয়ার জন্য আজ দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে আসি। কিন্তু বাস ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে চালকরা। তাই তিন ঘণ্টা থেকে অপেক্ষা করছি।
ঈদের আগে ৩৫০ টাকায় জামালপুর যাওয়া যেত জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ৭০০ টাকা ৮০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছেন চালকরা।
শুধু ইব্রাহিম আলী ও মকবুল আলী নয়, রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে এমন শত শত যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রী পরিবহনের জন্য মহাখালী টার্মিনাল বাসে বাসে পরিপূর্ণ। এর বাইরেও যেসব বাস টার্মিনালে জায়গা পায়নি, তাদের স্থান হয়েছে রাস্তার দুইপাশে। ঘরেফেরা মানুষেরা নিজ নিজ গন্তব্যের বাস খুঁজে সেসব বাসের যাত্রী হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে রাস্তা এবং টার্মিনালের ভেতরে অপেক্ষা করছেন। নামকরা বাস কোম্পানিগুলো ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া না নিলেও অন্যান্য বাসগুলোতে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী বাসগুলোর কর্মীরাও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, ঈদ উপলক্ষে তারা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন।
বিনিময় পরিবহনের হেলপার মখলিছ মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ঈদের আগে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। তাই একটু বেশি ভাড়া নিচ্ছি।
তিনি বলেন, জামালপুরের বকশীগঞ্জ যাওয়া যায় নিয়মিত ৪০০ টাকা। কিন্তু আজ আমরা ৭০০ টাকা নিচ্ছি।
মিনহাজ নামের এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবসময়ই ৪০০ টাকায় বকশীগঞ্জে যাই। কিন্তু আজ ১ হাজারের নিচে কেউ নিচ্ছে না। এখানে দেখভালের দায়িত্বে বিভিন্ন সংস্থা থাকলেও কেউ কোনো কথা বলছে না।
সরেজিমনে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু বাড়তি ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে কিছুই বলছেন না কেউ।
রবিউল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, আমার বাড়ি শেরপুরে। আমি কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করি। তাই নিয়মিত শেরপুরে যাওয়া আসা করি। আগে ৩০০ টাকায় শেরপুর যাইতাম। কিন্তু আজ ৭০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা চাচ্ছে।
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, তারা একটি ব্যানার টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয় না। এনা পরিবহন সম্পর্কে কোনো যাত্রী অধিক ভাড়া নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেননি।
এ ব্যাপারে মহাখালী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিশ্বজিৎ সূত্র ধর ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সারাদিন থেকেই দায়িত্ব পালন করছি। সকাল থেকে বিকালে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে।
তবে ভাড়া বেশি আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা দেখছি।
এদিকে, ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌ-পথের বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। অনতিবিলম্বে এই ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের ভ্রমমাণ আদালতের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
মোজাম্মেল হক বলেন, এবারের ঈদে যানজট ও জনজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসনীয় তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও ঈদযাত্রায় বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে।
তবে আজ সকালে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটবেন না। কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ পুলিশ অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করবেন। যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ঈদুল ফিতরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। তাই ফাঁকা ঢাকায় তেমন বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এবারও আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও সাদা পোশাকে নিয়োজিত রয়েছে।
কেআর/এমএইচটি