ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহার সময়। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোরবানির পশুর হাট সাজাতে ইজারাদারদের ব্যস্ততা। এরই মধ্যে কারও কারও প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। তবে সব ব্যস্ততা মাথায় নিয়েই আগামী ৬ জুলাই থেকে দ্বার খুলবে কোরবানির পশুর হাটের। এরপর বেচা-বিক্রি চলবে পাঁচদিন। যদিও হাটের সামনে থাকা সড়কের বেহাল দশা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সংশ্লিষ্টরা। তাদের আশঙ্কা- হাটগুলোর সামনের সড়কগুলোয় নির্মাণকাজ চলায় এবারের পশুর হাটে ভোগান্তি বাড়বে।
চলতি বছর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মোট ২০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১৫টির ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। যেখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তাদের ১০টি অস্থায়ী হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) পাঁচটি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। বাকি পাঁচটি হাটের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিবারের মতো এবারও দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ার স্থায়ী হাটেও বিক্রি হবে কোরবানির পশু বিক্রি।
বিজ্ঞাপন
সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, চূড়ান্ত না হওয়া পাঁচটি হাট ছাড়াও স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১৭টি স্থানে এবার পশুর হাট বসছে। আগামী ৬ জুলাই থেকে দার খুলবে এসব হাটের। এরপর বেচা-বিক্রি চলবে পাঁচদিন।
তবে ইজারাদারদের দাবি- হাটের প্রস্তুতি এবং প্রচার-প্রচারণায় তাদের কোনো কমতি নেই। কিন্তু হাটগুলোর সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে তাদের। সড়কে চলমান নির্মাণকাজ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে প্রভাব ফেলার পাশাপাশি ভোগান্তি বাড়াবে।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর অন্তত দুটি পশুর হাট ঘুরে ইজারাদারদের এই কথার সত্যতাও মিলেছে। সরেজমিনে ভাটারা-সাইদনগর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়- হাউজিং কোম্পানির আবাসন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় পরিবর্তন হয়েছে হাটের পরিধি। তবে নিয়ম মেনেই বসছে প্রধান সড়কের দুই পাশের খালি জায়গায়। যদিও সেখানে সড়কের উন্নয়নকাজ চালু রয়েছে দীর্ঘদিন।
হাট থেকে প্রায় দুই ফুট উঁচু করা হচ্ছে সড়ক। এখন কোনোমতে একপাশ দিয়েই চলছে দুই প্রান্তের গাড়ি। ব্যস্ত এই সড়কটি হয়েই হাটে আসবে কোরবানির পশুবাহী গাড়ি। তবে বর্তমান কাজ চলমান থাকায় রাস্তায় হেলে-দুলে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। সঙ্গে চারপাশে ধুলার রাজত্ব। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই এই ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের।
অন্যদিকে, অফতাবনগরের আশপাশের পশুর হাটেও একই চিত্র দেখা গেছে। এবার আমুলিয়া মডেল টাউনের সড়কে পশু রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তবে এখানকার একটি সড়ক নির্মাণাধীন থাকায় সড়কের ওপরেই করা হয়েছে মূল মঞ্চ (খাজনার স্থান) ও প্যান্ডেল। আর খাজনার স্থান থেকে কিছুটা দূরে গরুর হাট। যেখানে যাওয়ার রাস্তার অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। ফলে বৃষ্টি হলে এসব ভোগান্তি বাড়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ইজারাদার মো. সুরুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, সড়কের বেহাল অবস্থায় কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হবে। এরই মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সড়কের কাজ চলমান থাকায় ধুলা-বালুর অনেক বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে পশুবাহী ঘাড়িগুলো আনা-নেওয়ার বেশ অসুবিধা হবে।
গাজীপুরের কবির এগ্রো খামারির কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ বলেন, যে সড়কটি দিয়ে আমাদের গরুর গাড়ি প্রতিনিয়ত আসবে-যাবে, সেটি এক লেন হওয়ায় জট লাগবে। এছাড়া হাট সড়কের দুই পাশে হওয়ায় যানবাহনের সঙ্গে মানুষের জটও বাড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দা তবিবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির নির্মাণকাজ চলমান। বর্তমানে নিচু সড়ক উঁচু করা হচ্ছে। প্রশস্ত সড়কটি এখন এক লেন হয়ে যাওয়ায় যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। আর হাটের সময় তো চলাফেরা করাই মুশকিল হয়ে পড়বে।
এদিকে, দুই সিটি করপোরেশনের অন্য হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে- কোথাও কোথাও প্রায় শেষপর্যায়ে রয়েছে হাটের প্রস্তুতি। সেই সঙ্গে হাটের প্রবেশপথে ক্রেতাদের আকর্ষণে সাজানো হয়েছে বড় করে লেখা ‘গরু-ছাগলের হাট’ এর ব্যানারসহ মূল মঞ্চ (খাজনার স্থান), প্যান্ডেল, তোরণ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে মাঠের মধ্যে চলছে বাঁশের খুঁটি বসানোর কাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটসহ কয়েকটি স্থানে বন্যার কবলে পড়া পশুগুলোকে রাখতে আগেভাগেই প্রস্তুত করা হচ্ছে পশুর হাট। আর গত বছরগুলোয় হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কা মাথায় রেখেই এবার আগে থেকেই তারা সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে- আগামী ১০ জুলাই (রোববার) দেশে পবিত্র ঈদুল আযহা পালিত হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ডিএসসিসির অধীনে ১০টি পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে- আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের এলাকা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা।
এছাড়া ডিএনসিসির অধীনে সাতটি হাটের মধ্যে রয়েছে- ভাটারা-সাইদনগর পশুর হাট, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬ এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলায় ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তরদিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই থেকে এইচ পর্যন্ত এলাকার খালি জায়গা এবং ৩০০ ফিট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল-যমুনা হাউজিং কোম্পানির খালি জায়গা।
ডিএইচডি/আইএইচ/এএস