শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ক্রেতা বিক্রেতার ‘ঠেলাঠেলি’

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২৩, ০৭:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্রেতা বিক্রেতার ‘ঠেলাঠেলি’

ফার্মগেটের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম স্বামী ছেলেসহ আসেন তেজগাঁও পলিটেকনিক মাঠে বসা পশুর হাটে। কালো রঙের ষাঁড় দেখে পছন্দ হয় ছেলের। বিক্রেতা দাম চাইলেন লাখ টাকার উপরে। ক্রেতা দামাদামি করে সর্বোচ্চ ৯৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বললেন। বিক্রেতা দিতে নারাজ, বিক্রেতার কথা লাখের উপরে উঠতে হবে। ক্রেতা সামনে এগিয়ে গেলেন আরেক গরু দেখতে।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকালে এই দৃশ্য দেখা যায় পশুর হাটে।


বিজ্ঞাপন


বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেকেই পশুর হাটে আসেন। কারও পছন্দ হলে সময় নষ্ট না করে কিনে নিচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ ক্রেতা বিক্রেতা আছেন লাখ টাকার হিসেবের মারপ্যাঁচে।

বাজার ঘুরে জানা যায়, বেশিরভাগ ক্রেতাদের পছন্দ লাখের মধ্যে গরু কেনা। আর বিক্রেতারা লাখের নিচে বিক্রি করতেই নারাজ। বাজারে লাখের নিচে গরু পাওয়াই মুশকিল। ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা দামের গরু ক্রেতার খুব একটা পছন্দ হচ্ছেনা আকৃতিতে ছোট হয় বলে আবার লাখ টাকার একটু বেশি দামের গরু অনেকের পছন্দ হলেও সেটিকে অনেক ক্রেতাই লাখের মধ্যে কিনার চেষ্টায় হাট ঘুরছেন।

৯৩ হাজার টাকায় অবিক্রিত গরুর মালিক হারিজ উদ্দিন এসেছেন জামালপুরের বকশিগঞ্জ থেকে। দুইটি বিক্রি করেছেন বাকি আরও দুটি আছে। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার একটা নিজস্ব গরু আরও তিনটা কিনে এই হাটে আসছি। যে গরু দাম করেছে সেটি আমরা গ্রামে থেকেই ১ লাখ ২ হাজারে কিনেছি। ঢাকায় আসতে আরও খরচ ২ হাজার। কিনার পর গরুকে খাওয়া খরচ আছে। এক লাখ ৫ হিসেবের মধ্যেই শ্রম বাদই দিলাম ১ লাখ ১০ বলে দিছি না বিক্রি করতে পারলে ফেত নিমু।’

cowমনোয়ারার পরিবার এক ঘণ্টা ঘুরে গরু কিনেন ৯০ হাজারে। গরু কিনেছেন কিনা কত দাম নিলো এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে মনোয়ারা বেগম বলেন, আসলে প্রথম দেখা গরুর রঙ ভালাে লেগেছিল। আপনার সামনেই সে গরু ৯৩ হাজার বলছি দেয়নি। অনেক ঘুরে ৯০ হাজারে পেলাম। কিন্তু আগের বিক্রেতা লাখের উপরে উঠতে বলছিলেন। আমাদেরও তো একটা হিসেব আছে। সাধ্যের মধ্যেই দিতে চেয়েছি।


বিজ্ঞাপন


এক প্রশ্নের জবাবে মনোয়ারা বলেন, কোরবানি গরু কিনেছি আলহামদুলিল্লাহ। তবে প্রথম গরুটা একটু বেশি বড় ছিল এটা তুলনামূলক একটু ছোট এটাও ঠিক।

পলিটেকনিকই নয় রাজধানীর বেশির ভাগ পশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতার দর দাম আটকে আছে লাখের ওপর আর নিচের মধ্যে। আফতাবনগর হাটেও একাই দৃশ্য দেখা যায়। অনেকেই ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার ব্যবধানের কারণে গরুর রশি ছেড়ে অন্য গরু দেখতে চলে যাচ্ছেন। বিক্রেতারও কোনো উপায় থাকছে না। কেননা, অনেকের খামারের লালন পালন করা হলেও হিসেব করছেন লালন পালনের খরচ নিয়ে আবার অনেকেই গরু কিনে এনেছেন রাজধানীতে একটু লাভের আশায় সেখানে বিক্রেতারা লোকসান দিতে নারাজ।

রামপুরার বাসিন্দা আহমদ হোসাইন ৯৫ হাজার টাকা বলেও চলে যাচ্ছিলেন বিক্রেতা বলে দিলেন এক লাখ ৫ হাজার লাগবে। কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েও ফেরত এসে এক লাখ বললেন বিক্রেতা গরু বিক্রি করলেন না অনেকটা রাগে ক্ষোভে সামনে চলে গেলেন।

বিক্রেতা আসলাম বলেন, ক্রেতা রাগ করলে কি করবো আমাদের দুই জনের গরু বিক্রি শেষ। আমার ৫টা বিক্রি করেছি। এটি বিক্রি করে সবাই একসাখে যাব। ১ লাখ ৫ হাজারেও কিছু লোকসান হয় এর বেশি লোকসান দেয়া সম্ভব না।

কুষ্টিয়া থেকে ১৪টি গরু আসা কাজল মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ৪টি বিক্রি করেছি। এখনো ১০টি আছে। এগুলো সবই দুই লাখের উপরে। ক্রেতাদের চাহিদা ১ থেকে দের লাখের মধ্যে। ওই দামের গরু ৪টা ছিল বিক্রি হইছে।

cowঝিনাইদহ থেকে আসা বিক্রেতা লেবু মিয়া বলেন, গরু হইলেই ৮০ হাজারের নিচে নাই। দুইমন মাংস হবে দাম ৮০ ৮৫ হাজার বিক্রি হচ্ছে। অথচ তিন মন সাড়ে তিনমন মাংস হবে দাম কয় ৯০ ৯৫ হাজার। ক্রেতারা দুই মনের গরুর দামের সাথে তিন সাড়ে তিন মনের গরু এক করে ফেলছে এজন্য তারা এই গরুও লাখের মধ্যে কিনতে চায়। আমাদেরতো উপায় নেই দেয়ার।

বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা আজাহার উদ্দিন তালুকদার ঢাকা মেইলকে বলেন, এই গরুটা ১ লাখ দাম করে এক ঘণ্টা বাজারে ঘুরেছি। সেও বিক্রি করতে পারেনি আমারও তেমন একটা পছন্দ হয়নি। পরে  ১ লাখ ১০ দিয়ে নিছি। শুরুতে ইচ্ছা ছিল ১ লাখের মধ্যে কেনার। যাক আল্লাহর ইচ্ছা।

এই ক্রেতা আরও বলেন, আমার প্রতিবেশী সেইম সাইজের গরু লাখের মধ্যে কিনেছে, যেহেতু কিনে ফেলেছি এখন আর কম বেশি কিছু নাই। রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায় ছোট গরুর চেয়ে একটু বড় বা মাঝারি আকৃতির গরুর চাহিদা থাকলেও দামে অসস্তি রয়েছে সবার মধ্যে। ক্রেতারা ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত গরু কিনছেন বেশি। এরমধ্যেও লাখের মধ্যে বাজেট হিসেব করে অনেকেই এসেছেন পশুর হাটে। এছাড়াও যারা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা অনেকেই একাধিক বড় গরু কিনতেও দেখা গেছে। অনেকই শেয়ারে কোরবানি দিলে হিসেবের মধ্যেই গরু কিনতে চান।

মধুবাগের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, আমরা নিজেদের লোক তিনজনে মিলে ১ লাখ ২০ হাজার মধ্যে কিনতে চেয়েছিলাম সেখানেও অতিরিক্ত ১০ হাজার লেগেছে। হাটে কথা হয় ব্যাংকার আহসান উদ্দিনের সাথে। গ্রামে কেউ নেই বলে অনেক বছর ধরে ঢাকায় ঈদ করেন তিনি।

cowআহসান উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি আর আমার সহকর্মী দুজনে মিলে কোরবানি দেই। দুজনে ৫০ হাজার করে একলাখের মধ্যে গরু কিনবো। কিন্তু বাজার ঘুরে লাখের নিচের গরু পছন্দ হচ্ছে না, বিক্রেতারা বলেন সব কিছুর দাম বেশি গরু পালনে খরচ বেশি তাই বলে এতো দাম এটা বুঝতে পারছিনা শেষ পর্যন্ত কেমন গরু পাবো।

বিক্রেতারা বলেন, ভুষির দাম বস্তায় বেড়েছে অনেক, খড়ের দাম বেশি, ভাত খাওয়ানো খুত, খৈ প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়ছে এজন্য গরুর দাম বেশি।

এদিকে, বিভিন্ন হাটের ক্রেতারা মনে করছেন এখনো মাঝে একদিন আছে ঈদের আগের রাতে প্রচুর পশু বিক্রি হয় সেকারণে এখনই বিক্রেতারা দা ছাড়ছেন না। ক্রেতারা অনেকেই প্রত্যাশিত দামে না পেয়ে ফিরে যেতেও দেখা যায় আবার পরে আসবেন সে আশায়। রাজধানীর হাট এলাকায় বিভিন্ন গো খাদ্যের ব্যবসা বেশ জমজমাট।

এদিন সকাল থেকে রাজধানী বৃষ্টি ফলে অনেকেই এদিনও বৃষ্টিতে ভিজে গরু কিনেছেন অনেকেই বুধবার রাতের কিনবেন সে আশায় বের হয়নি। রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১৯টি পশুর হাট বসেছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা।

goatবিক্রি ভালো ছাগলের

এদিকে, হাট ঘুরে দেখা গেছে গরুর চেয়ে ছাগলের বিক্রি হচ্ছে বেশ। অনেকেই তেজগাঁও, আফতাবনগর, উত্তরার বিন্দাবন হাটে প্রচি ছাগল বিক্রির দৃশ্য দেখা গেছে। ভালো বিক্রির কথা জানিয়েছেন হাটের হাসিল আদায়কারীরাও।

শৈরপুর থেকে আমজাদ ৮০টি ছাগল নিয়ে আফতাবনগর হাটে আসেন ইতোমধ্যেই ৬৫টি বিক্রি করেছেন। একই এলাকার জমির মিয়া ৩০ ছাগলের মধ্যে ২৪টি বিক্রি করেছেন। অনেকেই নিজের ছাগল বিক্রি করে প্রতিবেশীদের ব সাথে আসা ব্যক্তির ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন।

হানিফ নামের একজন বলেন, এবার শুরু থেকেই ছাগলের বেশ চাহিদা। হতে পারে অনেকেই এবার গরু কোরবানি দিচ্ছে না বাজেট কম। আমার ১৫টা ছিল বেচে দিছি এখন কাকার কয়েকটা ছাগল আছে শেষ হলে বাড়ির পথ ধরবো।

ডব্লিউএইচ/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর