শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পরিবারের একাধিক সদস্যের ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয় না যে ভুলে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২৩, ০২:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

পরিবারের একাধিক সদস্যের ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয় না যে ভুলে

মুসলমানদের জন্য কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা প্রতিটি সামর্থ্যবান নর-নারীর ওপর ওয়াজিব। কিন্তু কোরবানির বিধান সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা অনেকে এই ইবাদতের সঙ্গে অনেক ভুল ধারণাকেও গুলিয়ে ফেলি। নিচে এমন দুটি ভুল নিয়ে আলোচনা করা হলো, যে কারণে পরিবারের একাধিক সদস্যের ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয় না।

১) নারীদের ওয়াজিব কোরবানি
গৃহকর্তার নামেই কোরবানি দিতে হবে বা সংসারের পুরুষদের নামেই কোরবানি দিতে হবে-এ ধারণা সঠিক নয়। বাংলাদেশে অনেক পরিবার এমন আছে, যাদের ঘরের নারী/মেয়েদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, অথচ তাদের নামে কোরবানি করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হয়েছে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়নি। আবার অনেক পরিবারে মা-বাবার নামে কোরবানি দেওয়া হলেও তাদের অবিবাহিত ছেলে-মেয়ের (যারা শিক্ষা/বিয়ের জন্য রাখা টাকা/সোনা দিয়ে জাকাতযোগ্য হয়ে গেছেন) নামে কোরবানি দেওয়া হয় না। অথচ তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব।


বিজ্ঞাপন


২) পরিবারের একাধিক পুরুষের ওয়াজিব কোরবানি
অনেক পরিবার আছে, যারা ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে পরিবারে অনেক সদস্য থাকার পরও শুধুমাত্র দু-একজনের নামে কোরবানি করেন। ফলে এমনও দেখা যায় যে কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে এমন সদস্য বাদ পড়ে গেছে। অথচ একই টাকায় কোরবানির উপযুক্ত একটি পশু কিনে পরিবারের সর্বোচ্চ সাত সদস্যের নামেও কোরবানি করার সুযোগ ছিল। অথচ এই সহজ সমাধানটি অনেকেই মেনে নিতে চান না। এর কারণ হলো- কোরবানির বিধান সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। কোরবানি করার সময় আমরা চিন্তা করি না যে আমাদের পরিবারের কজন সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে কিংবা একটি মানুষের কাছে কী পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়। 

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তাকে কোরবানি করতে হবে। 

নিসাব কী
সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি সোনার মালিক হলেই তাকে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বলে গণ্য করা হবে আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ বা এমন অতিরিক্ত জিনিস যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ বা বেশি হয়। বর্তমানে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দাম ৫৫ হাজার ১২৫ টাকা। 

আমাদের দেশে অনেক নারীর ওপরই কোরবানি ওয়াজিব, যেহেতু তাদের সবার কাছে কমবেশি গহনা থাকে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয় না। আবার এমন অনেক পুরুষ আছেন, যার ওপর মূলত কোরবানি ওয়াজিব নয় যেমন তার স্ত্রী বা কন্যার ওপর ওয়াজিব কিন্তু তার পক্ষ থেকেই কোরবানি দেওয়া হয়। সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য কত


বিজ্ঞাপন


কারো কাছে যদি সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ নাও থাকে, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আল মুহিতুল বুরহানি: ৮/৪৫৫)

যেমন—কারো কাছে এক ভরি সোনা ও সামান্য কিছু টাকা আছে, যার কোনো একটিও পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ নয়। কিন্তু এক ভরি সোনার মূল্য ও সামান্য টাকাকে একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের বেশি হয়ে যায়। যেহেতু এখন সোনার মূল্য অনেক বেশি, তাই কারো কাছে এক ভরির কিছু কম সোনা ও সঙ্গে কিছু টাকা থাকলেই সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয়ে যায়। ফলে তিনি নিসাবের মালিক বলে গণ্য হবেন এবং তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।

কোরবানির মতো মহান ইবাদতটি সঠিকভাবে পালন করা উচিত। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন। রুপার মূল হিসাব করে কোরবানির নিসাব, কী কী সম্পদ থাকলে কোরবানি দিতে হবে, নিসাব সম্পদের তালিকা

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর