নামাজ ও কোরবানি দুটি আলাদা ইবাদত। সবার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় না, বরং শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)
আর নামাজ হচ্ছে ইসলামের দ্বিতীয় রোকন এবং মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণকারী। নামাজ মুসলমানের জন্য এত বড় দায়িত্ব যে, ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফরজ নামাজ ত্যাগকারীর ব্যাপারে মহানবী (স.) খুব কঠিন কঠিন কথা বলেছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়া। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল (কাফেরের মতো কাজ করল)’ (সহিহ মুসলিম: ৮২)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেন, ‘আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজের। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।’ (তিরমিজি: ২৬২১)
বিজ্ঞাপন
ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ ত্যাগ করলে তার ওপর আল্লাহ তাআলার কোনো জিম্মাদারি থাকে না’ (মুসনাদে আহমদ: ৫/২৩৮)। এক হাদিসে এসেছে, যার ভেতর নামাজ নেই, তার ভেতর দ্বীনের কোনো হিস্যা নেই। (মুসনাদে বাজ্জার: ৮৫৩৯)
ওমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি: ৬২৯১)
সুতরাং নামাজের সঙ্গে কোরবানির সম্পর্ক না থাকলেও নামাজ থেকে সম্পূর্ণ গাফেল ব্যক্তিকে কোরবানির পশুতে শরিক বানাতে নিষেধ করেন আলেমরা। কারণ, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং আল্লাহকে ভয় করা ব্যক্তি কখনও নামাজে ছেড়ে দিতে পারে না। এমন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করবে—বিষয়টি অসম্ভব বলা চলে। হয়ত মানুষের তিরস্কার থেকে বাঁচতে বা গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে থাকবে। এটি তার জন্য স্বাভাবিক।
আর আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কেউ কোরবানি করলে বাকি শরিকদের কোরবানিও সহিহ হবে না। এ বিষয়ে ফতোয়ার কিতাবে এসেছে—যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরিক নির্বাচন করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮, কাজিখান: ৩/৩৪৯)
বিজ্ঞাপন
তাই আলেমদের পরামর্শ হচ্ছে-নামাজের ব্যাপারে অবহেলা করে এমন ব্যক্তিকে শরিক করা নিজের কোরবানির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে যদি এমন হয় যে, সে নামাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করে, কিন্তু অলসতার কারণে কখনো কখনো ছুটে যায়—এমন ব্যক্তির সাথে কোরবানি দেওয়া যাবে। তারপরও সর্বাবস্থায় উত্তম হলো— এমন শরিক খুঁজে বের করা যারা শরিয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান যথাযথ মেনে চলে। (সহিহ মুসলিম: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনদার মুসলমানদের সাথে কোরবানি দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমাদের সবার কোরবানি কবুল করুন। আমিন।
বেনামাজির সাথে কোরবানি, বেনামাজি কোরবানিতে শরিক, বেনামাজি কোরবানিতে অংশ, বেনামাজির কোরবানি সহিহ হবে?