মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সারি সারি বাঁশের খুঁটিতে সেজে প্রস্তুত কাওলা পশুর হাট

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২২, ০৪:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

সারি সারি বাঁশের খুঁটিতে সেজে প্রস্তুত কাওলা পশুর হাট
ছবি: ঢাকা মেইল

ক’দিন বাদেই পালিত হবে মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে ঘিরে তাই প্রস্তুত হচ্ছে কোরবানির পশুর হাট। সেই সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটছে হাট ইজারাদারদের। এরই ধারাবাহিকতায় সারি সারি বাঁশের খুঁটিতে সেজেছে রাজধানীর কাওলা শিয়ালডাঙ্গা পশুর হাট। পাশাপাশি গরু বিক্রেতা খামারি আর পাইকারদের জন্য জায়গাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে একাধিক শেড ও বাঁশের আস্তাবল। সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষে অস্থায়ী এই হাটটিতে এখন শুধু কোরবানির পশু আসার অপেক্ষা।

হাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার (১ জুলাই) থেকে বিক্রেতারা তাদের পশু নিয়ে আসতে শুরু করবেন। তবে বেচাকেনা শুরু হতে আরও সময় লাগবে।


বিজ্ঞাপন


সাধারণত ঈদের দুই-তিনদিন আগে থেকে কোরবানির পশুর হাট জমজমাট হয়। এর আগে ভিড় থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম থাকে। লোকজন আসে, ঘুরে ঘুরে হাটে ওঠা পশু দেখেন। একই সময় তারা বাজারের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করেন।

Qurbani Hat

সরেজমিনে কাওলা শিয়ালডাঙ্গা হাট ঘুরে দেখা যায়, মুক্ত পরিবেশে পিচ ঢালা রাস্তার দু’পাশে সারি সারি বাঁশের খুঁটি বসিয়ে গরু বাঁধার স্থান তৈরি করা হয়েছে। পাশেই নির্দিষ্ট দূরত্বে তৈরি করা হয়েছে একাধিক শেড। পাশাপাশি হাটে আগত পশু বিক্রেতা ছাড়াও ক্রেতাদের জন্য রাখা হয়েছে নিরাপদ পানি ও পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা।

চলতি বছর কাওলা শিয়ালডাঙ্গা হাটটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা পেয়েছেন তৌফিকুর রহমান। তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈমের ব্যক্তিগত সহকারী এবং দক্ষিণখান থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।


বিজ্ঞাপন


Qurbani Hat

সারাদেশ থেকেই এই হাটে গরু আসে। অনেক পাইকার ও খামারিরা ইতোমধ্যেই হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের স্থান বুকিং দিয়েছেন। এতে ইজারাদাররাও সংশ্লিষ্টদের নাম, কতটুকু স্থান নেবেন তা উল্লেখ করে নির্ধারিত স্থানে পোস্টারও ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুবিধার্থে স্বেচ্ছাসেবকরা সব সময় মাঠে থাকবেন বলেও জানিয়েছেন হাট সংশ্লিষ্টরা।

ভালো দাম পাওয়ার আশা বিক্রেতাদের

এ বছর কাওলা পশুর হাটে গরু নিয়ে আসবেন বগুড়ার শহীদুল ব্যাপারী। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই গরু লালন-পালন করি। এবার মোট ১২টি দেশি গুরু নিয়ে হাটে আসব। আসার সকল প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছি। আগামী শনিবার (২ জুলাই) হাটে আসব।’

ভালো দাম পাওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ বছর গো-খাদ্যের দাম অনেক বাড়তি। মানুষের খাবারের থেকেও গরুর খাবারের দাম বেশি। ভুষিসহ বিভিন্ন খাবারের দাম শতকরা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত ভারতীয় গরু ঢুকেনি। এটা আমাদের জন্য উপকারী।’

সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে এই ব্যাপারী বলেন, ‘ভারতীয় গরু যেন ঢুকতে না দেওয়া হয়। দেশে চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। ওইসব গরু না আসলে আমরা ভালো দাম পাব আশা করি। খাবারের মূল্য যা বেড়েছে, এবার ভালো দাম না পেলে খামারিরা গরু পালনই বন্ধ করে দেবে।’

Qurbani Hat

গাইবান্ধার অপর গরু ব্যবসায়ী আমিনুল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দুই-একদিনের মধ্যেই গরু নিয়ে হাটে আসব। উত্তরে ও সিলেট বিভাগে বন্যা থাকায় এবার গরু সংগ্রহে বেগ পেতে হয়েছে। পাশাপাশি খাবারের দামও অনেক চড়া। ইন্ডিয়া থেইকা গরু না আসলে এবার বাজার চড়া যাবে। সব ঠিক থাকলে ভালো দাম পাব আশা করি। ঠিকমতো দাম না পাইলে ব্যবসা করাটাই কঠিন হয়ে যাবে। খামারিরাও গরু পালন বন্ধ করে দেবে। এত দামি খাবার খাইয়ে লাভ না করতে পারলে গরু পালন সম্ভব না। আমাদেরও ব্যবসা করা সম্ভব না।’

সাশ্রয়ী দামে কোরবানির পশু কিনতে চান ক্রেতারা

মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় ক্রেতা সর্বনিম্ন খরচে তার চাহিদা মেটাতে চায়, অপরদিকে বিক্রেতা তার সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করতে চায়। কোরবানি ঈদ কেন্দ্রিক গরুর হাটেও এই চিত্র দেখা যায়।

কাওলা হাট এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এলাকার হাট হিসেবে বেশিরভাগ সময় এখান থেকেই পশু কেনেন তারা। একাধিক হাটে দেখে দাম সম্পর্কে ধারণা নেন। পরে পছন্দ ও দামে মিলে গেলে তা কেনেন। এ ক্ষেত্রে এলাকার হাটই বেশি প্রাধান্য পায়।

Qurbani Hat

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ সময় এখান থেকেই কোরবানির পশু কিনি। সারাদেশ থেকেই পশু আসে। এবার দাম চড়া হবে মনে হচ্ছে। দামের অবস্থা বুঝে পশু কিনব। হাট একদম পাশে হওয়ায় বাজারের দাম দেখেশুনে একদম শেষের দিক গরু কিনি। এবারও তাই করব।’

চলতি বছর রাজধানীতে ২০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে ১৫টির ইজারা চূড়ান্ত করেছে দুই সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তাদের ১০টি অস্থায়ী হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) পাঁচটি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করেছে। বাকি পাঁচটি হাটের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিবারের মতো এবারও দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ার স্থায়ী হাটেও বিক্রি হবে কোরবানির পশু।

এমএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর