মুসলমানদের বড় দুটি আনন্দ-উৎসবের একটি হলো ঈদুল আজহা। এই ঈদ রমজানের ঈদের চেয়ে ভিন্ন। রমজানের ঈদ তথা ঈদুল ফিতর পালিত হয় টানা একমাস সিয়াম সাধনার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারস্বরূপ আর ঈদুল আজহাতে রয়েছে মুসলিম জাতির জনক ইবরাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহান শিক্ষা। এই শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে কোরবানির মাধ্যমে ঈদুল আজহার আনন্দ-উৎসবে শামিল হন মুসলমানরা। জিলহজ মাসের ১০ম দিনেই উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।
ঈদুল আজহার দিন ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে ১২তম দিন পর্যন্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। ঈদুল আজহার নামাজের পর মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান হল—কোরবানি করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আজকের দিনে আমরা সর্বপ্রথম ঈদের নামাজ আদায় করব। এরপর ফিরে এসে কোরবানি করব। (বুখারি: ৯৬৮)
বিজ্ঞাপন
প্রিয়নবী (স.)-এর সুন্নাত অনুসরণ করে পবিত্র ঈদুল আজহা ও কোরবানি করা সব মুসলিমের কর্তব্য। ঈদুল আজহার দিনের কিছু শিষ্টাচার ও সুন্নত নিচে তুলে ধরা হলো।
১. অন্যদিনের তুলনায় ঈদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। (বায়হাকি: ৬১২৬)
২. গোসল করা ও পবিত্রতা অর্জন করা (বুখারি: ১/১৩০)
৩. সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরিধান করা। (সুনানু বায়হাকি: ৬৩৬৩)
বিজ্ঞাপন
৪. ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার থেকে বিরত থাকা। (তিরমিজি: ৫৪২; সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৮১৪)
৫. ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির (তাকবিরে তাশরিক) বলা। (পুরুষরা উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করবে, আর মেয়েরা পাঠ করবে নীরবে) (সুরা বাকারা: ১৮৫ তাফসির)
জিলহজের নয় তারিখ ফজরের পর থেকে তের তারিখ আসরের সালাত পর্যন্ত—মোট পাঁচদিন তাকবিরে তাশরিক পাঠ করবে। (হেদায়া ও ফাতহুল বারি: ২/৫৮৯) তাকবিরটি হলো- ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ (ফাতহুল কাদির: ২/৮২)
৬. ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা। (বুখারি: ৯৮৬)
৭. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। (তিরমিজি: ১২৯৫)
৮. ঈদগাহে শিশুদের নিয়ে যাওয়া। (সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৬৩৪৯)
৯. ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়স্বরূপ পরস্পরকে ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ বলা। (ফাতহুল কাদির, ২খন্ড, ৫১৭)
১০. ঈদের খুতবা দেওয়া ও শোনা। নামাজের পর খুতবা প্রদান করা সুন্নত। আর উপস্থিত মুসল্লিদের ওপর তা শোনা ওয়াজিব। (সুনানু ইবনু মাজাহ: ১০৭৩)
জুমার নামাজের মতো ঈদের নামাজেও দুই খুতবা রয়েছে। আর দুই খুতবার মধ্যখানে বসা সুন্নত। (সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৬২১৩)
১১. ঈদগাহ থেকে ফিরে নফল আদায় করা। ঈদের নামাজের আগে-পরে ঈদের নামাজের স্থানে নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ। ঈদের নামাজের পরে ইদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে দুই রাকাত নফল পড়া সুন্নত। (ইবনে মাজাহ: ১২৯৩)
কোরবানির পশু জবাইয়ের সুন্নত
১২. কোরবানির পশু জবাই করার যন্ত্র ভালোভাবে ধার দেওয়া, প্রাণীকে সুন্দরভাবে জবাইয়ের স্থানে নিয়ে যাওয়া ও উত্তমভাবে জবাই করা মোস্তাহাব। (মুসলিম: ৫১৬৭)
১৩. পারলে নিজে জবাই করা। অপারগ হলে অন্য মুসলিমকে দায়িত্ব দেওয়া উত্তম। জবাইকারীর মুখ কেবলার দিকে থাকা এবং ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ বলে জবাই করা মোস্তাহাব। আনাস (রা.) বলেন—“নবী করিম (সা.) ভেড়ার পাশের ওপর পা রেখে আল্লাহর নামে নিজ হাতে জবাই করেছেন। (বুখারি: ৫২৩৮) বর্ণিত আছে, ‘একশত উটের মধ্যে ষাট বা তার বেশি উট নিজ হাতে জবাই করেন। বাকিগুলো জবাই করতে আলী (রা.)-এর কাছে দেন।’ (মুসলিম: ৩০০৯)
১৪. কোরবানির পর নখ, চুল ও লোম কাটা মোস্তাহাব। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যার জবাইয়ের প্রাণী রয়েছে, সে তা জবাই করবে। অতএব যখন জিলহজের চাঁদ উদিত হয়, তখন সে যেন কোরবানির আগ পর্যন্ত তার চুল ও নখের কোনো কিছু না কাটে। (মুসলিম: ৫২৩৬ ও আবু দাউদ: ২৭৯৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককে ঈদের সুন্নত, মোস্তাহাব আমল ও ঈদের দিনের ইসলামিক শিষ্টাচার যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।