ঈদের দিনেই রাজধানীর সমস্ত কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র। দ্রুত ও নির্ধারিত সময়ে এ বর্জ্য অপসারণের জন্য দুই সিটি করপোরেশন প্রায় ২০ হাজার কর্মী প্রস্তুত রেখেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) দুপুর ২টা থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আট ঘণ্টায় এ বর্জ্য অপসারণ করবে।
প্রথম দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হবে বলেও মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, কোরবানির ঈদ তথা ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ নিয়ে আমাদের দুই সিটির ব্যাপক কর্মযজ্ঞ থাকে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমাদের প্রায় সাড়ে তিনশর ওপর যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত আছে। বিভিন্ন বহির্বিভাগ থেকেও গাড়ি এবং যান-যন্ত্রপাতি এনেছি। প্রায় ১০ হাজার জনবল নিয়োজিত থাকবে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে। আমরা আশাবাদী গতবারের ন্যায় এবারও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হবো। গতবারও যেভাবে সফল হয়েছি ইনশাআল্লাহ এবারও নির্ধারিত সমেয়ের মধ্যেই এই বর্জ্য অপসারণ করতে পারব, ঢাকাবাসীকে আরও বেশি সুফল দিতে পারব।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস নগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দুই দিনের মধ্যেই যেন পশু জবাইয়ের কাজ শেষ করা হয় এবং কোনোভাবেই যেন তৃতীয় দিন পর্যন্ত এটা না নেওয়া হয় সে বিষয়ে সবার কাছে অনুরোধ করছি।
উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, তাড়াতাড়ি বর্জ্য অপসারণ করতে এলাকাবাসীর সাহায্য দরকার। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, যত্রতত্র যেন ময়লা না ফেলেন। আমরা প্রত্যেককে পলি দিয়েছি। বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেবেন। আমাদের প্রায় ১১ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিকদের সাহায্য করার অনুরোধ করছি।
বিজ্ঞাপন
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কোরবানি দিয়ে অনেকেই বাড়ি চলে যাবেন। বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি, যেসব পাত্রে পানি জমে তা উল্টে রেখে বাড়িতে যাবেন। এটা সবার জন্য সহায়ক হবে। অবশ্যই ছাদে যে পাত্র আছে তাতে যেন বৃষ্টির পানি জমতে না পারে। তা উল্টে যাবেন। আমাদের সব কর্মকর্তা মাঠে থাকবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। আপনারা সহযোগিতা চাইলে আমরা দ্রুত বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা নিব।
জানা গেছে, এবার কোরবানির ঈদে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ৫ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশু থেকে কমপক্ষে ৩০ হাজার টন বর্জ্য সৃষ্টি হবে।
দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, নির্ধারিত সময়ে কোরবানির পশুর বর্জ্য ও হাটের বর্জ্য অপসারণ করতে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘোষিত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সব কর্মীর ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ বর্জ্য অপসারণের জন্য সার্বক্ষণিক হটলাইন খোলা থাকবে। এর বাইরে ইতোমধ্যে ১১ লাখ প্লাস্টিক ও পলিব্যাগ সরবরাহ করেছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ। দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
এছাড়া সবার প্রতি ঈদের দুই দিনের মধ্যে কোরবানি সম্পন্ন করা ও কোরবানির পর গ্রামে গেলে বাসার জল জমে থাকা জায়গাগুলো থেকে পানি অপসারণ করে তারপর বেরোনোর আহ্বান জানান।
ডিএসসিসি কার্যক্রম হিসেবে জানা গেছে, বর্জ্য অপসারণের কাজে বর্জ্যবাহী ট্রাক, পে-লোডার, ব্যাকহো-লোডার, পানিবাহী গাড়িসহ ৩৫৭টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৪টি ভারী যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। সংস্থাটির ৫ হাজার ৩০০ কর্মীসহ ৮ হাজার ৯৩০ জন কর্মী হাট ও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া হাট ও সড়ক জীবাণুমুক্ত করতে ৩২ হাজার ৫০০ টন ব্লিচিং পাউডার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য রাখার জন্য বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ব্যাগ।
আর ডিএনসিসির কার্যক্রম বিষয়ে জানা গেছে, কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় সর্বমোট ১০ হাজার ৩১৪ জন কর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োগ করা হয়েছে। জবাইকৃত কোরবানির পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণের জন্য এবং বর্জ্যবাহী ডাম্প বা খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি ও ভাড়ায় পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৬১৫টি গাড়ি নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া বর্জ্য পরিবেশ সম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৬টি এক্সকেভেটর, ৪টি চেইন ডোজার, ২টি টায়ার ডোজার ও ১টি পে-লোডার নিয়োজিত রাখা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করা হবে।
কেআর/ডব্লিউএইচ/এমএইচটি

















































































































































































































































































































