মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

গরু বিক্রিতেই তাদের ‘ঈদ আনন্দ’

মুহা. তারিক আবেদীন ইমন
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৩, ০৯:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

গরু বিক্রিতেই তাদের ‘ঈদ আনন্দ’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজধানীর কমলাপুর বাজারে ৪০টি গরু নিয়ে এসেছেন সিফাত। খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টাঙিয়ে থাকছেন দুদিন ধরে। ভালো জায়গা পাওয়ার আশায় এবার আগেভাগেই এসেছেন। গরু বিক্রি হলে তারপর বাড়ি যাবেন। ঢাকা মেইলের সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, সারা বছর এই একটা ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমরা কয়েকজন মিলে ৪০টা গরু এনেছি। এগুলো বিক্রি করে তারপরে বাড়ি যাব। যদি ঈদের দু-একদিন আগে বিক্রি শেষ হয় তাহলে বাড়ি গিয়ে ঈদ করতে পারব। আর বিক্রি না হলে আগের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর ঈদের আগের রাতে বিক্রি শেষ হলে বাড়ি যাইতে ঈদের দিন লাগবে।

সিফাতের মতো অনেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে এসেছেন রাজধানীর কমলাপুর হাটে। গরু বিক্রি করতে অনেকের ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত লেগে যায়। তাই গরু বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে তাদের ঈদের দিন দুপুর পেরিয়ে যায়। অনেকে পথেই পড়েন ঈদের নামাজ। সবকিছু জেনেই লাভের আশায় ঢাকায় গরু নিয়ে এসেছেন। সব গরু বিক্রি করতে পারাই যেন তাদের কাছে ঈদের আনন্দ।Specialরাজধানীর কোরবানি পশু বিক্রির বড় হাটের অন্যতম কমলাপুর। মানিকনগর থেকে শুরু করে টিটিপাড়া, গোপীবাগ, মধুমিতা সিনেমা হল হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনের রোড পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই হাট। গত দুদিন ধরে শত শত ট্রাকে এই হাটে আসছে হাজার হাজার গরু। তবে এখন পর্যন্ত জমে উঠেনি বেচা-কেনা। বাজারে তেমন ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।


বিজ্ঞাপন


শনিবার বিকেলে কমলাপুর হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, মুগদা স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে গোপীবাগ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ, দেওয়ানবাগ দরবার শরিফের সামনের রাস্তাসহ আশপাশের ফাঁকা সড়কজুড়ে সারি সারি গরু। ছোট-বড় নানা ধরনের গরু। ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-ছাগল আসছে। গরুগুলো নামিয়ে তা বেঁধে রাখছেন বেপারীরা, করছেন পরিচর্যা। যদিও হাটের অনেক  জায়গা এখনো খালি। হাসিল কাটার কাউন্টারগুলোও খালি। ইজারাদার কর্তৃপক্ষ মাইকে বারবার ঘোষণা করছে রাস্তায় ট্রাক না থামানোর জন্য। কে কোথায় গরু রাখবেন দেখিয়ে দিচ্ছেন ভলান্টিয়াররা।

কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনো হাটে ক্রেতা আসছে না। দু-একজন আসলেও শুধু দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছে।Specialঝিনাইদহ থেকে গরু নিয়ে আসা কামাল মিয়া বলেন, আমরা ৬০টা গরু নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত ১টা বিক্রি হয়েছে। এবার গরুর দাম বেশি। গত বছর ১০০ গরু নিয়ে এসেছিলাম। সবগুলোই বিক্রি হয়েছিল।

আরেক বেপারী আশরাফ বলেন, গরুর পরিচর্যা ও খাবারের দাম অনেক বেশি। বিক্রির জন্য আনা ২০টি গরুকে এ পর্যন্ত আনতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। বিক্রি হলে সব খরচ উঠে লাভের মুখ দেখব। বাকিটা আল্লাহর ওপর ভরসা।

কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা সোহাগ বলেন, দুদিন আগে এসেছি। ৪০টি গরু এনেছি। বড়-ছোট সব ধরনের গরু আছে। তিনি বলেন, প্রতিবারই আমি এ হাটে গরু এনে বিক্রি করি। অনেকে এসে ঘুরে এসে গরু দেখে যাচ্ছেন, দামাদামি করছেন। তবে ঈদের দুই-তিন দিন আগে গরু বিক্রি শুরু হবে।


বিজ্ঞাপন


আরও কয়েকজন বেপারী জানান, ঈদের দুই-তিন দিন আগে পশু বেচা-বিক্রি বেশি হয়। সেই হিসেবে এখনও হাতে সময় আছে। এ কারণে অনেক বেপারী এখনও কমলাপুর হাটে গরু-ছাগল নিয়ে আসেননি। তবে দু-একদিনের মধ্যে জমে উঠবে হাট।

এদিকে ক্রেতারাও আসছেন দেখতে ও বাজার যাচাই করতে। নাজমুল নামের এক ক্রেতা বলেন, আজ দেখতে এসেছি, বাজারটা যাচাই করছি। দু-একদিন পরে কিনব। এবার গরুর দাম গতবারের চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে। দেখা যাক, আরও দু-একটা বাজার ঘুরে তারপর গরু কিনব।Specialকমলাপুর হাটে এবার ২৫টি হাসিল ঘর করা হয়েছে। হাটের বিভিন্ন প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে এসব হাসিল ঘর। হাট জমে না উঠায় ভিড় নেই হাসিল ঘরগুলোতে। তারা বলছেন, এখন দুই-একটা গরু বিক্রি হচ্ছে। দুদিন পর মানুষ গরু কিনতে আসবে। হাসিল ঘরে থাকা মাসুদ বলেন, এখনো বেচাকেনা জমে উঠেনি। বেচাকেনা হবে তিন দিন। ২৯ তারিখে যেহেতু ঈদ, তাহলে ২৬, ২৭, ২৮ তারিখে বেচাকেনা হবে। তখন আমাদের দম ফেলার সময় থাকবে না।

কমলাপুর হাটের ইজারাদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার সব ধরনের নিয়মনীতি মেনে হাট বসানো হয়েছে। হাটে যেন কোনো ধরনের অঘটন না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে হাটের লোকজন কাজ করছে। সেক্ষেত্রে অন্য বারের তুলনায় এবার শান্তিপূর্ণভাবে হাট শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। কোনো পশু যদি অসুস্থ হয় সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসকের ব্যবস্থাও আমরা রেখেছি।

এদিকে বাজারের সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জাল টাকা শনাক্ত করতে মেশিন বসানো হয়েছে। কোনো ধরনের চুরি বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ যেন না হয় সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দারাও কাজ করছে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে পুলিশ বলছে, কোনো অপরিচিত লোকের দেওয়া কিছু খাবেন না। হাটের মধ্যে লেনদেন করবেন। কেউ যদি মনে করেন তার টাকা বহন করতে অনিরাপদ মনে হচ্ছে, তিনি পুলিশের সহযোগিতা পাবেন।

রাজধানী ঢাকায় এবার বসবে ১৯টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৯টি এবং উত্তর সিটিতে ১০টি স্থানে পশুর হাট বসবে। ইতিমধ্যে উভয় সিটি করপোরেশন এসব হাটের ইজারাদার ও স্থান সুনির্দিষ্ট করেছে।

টিএই/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর