রাত পোহালেই দেশজুড়ে পালিত হবে মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে শেষ মুহূর্তে রাজধানীর পশুর হাটগুলোয় পর্যাপ্ত গরু থাকলেও, অনেকটাই ক্রেতাশূন্য প্রায় সব হাট। এমনকি লোকসান গুণেও গরু বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে অনেকে বিক্রেতাই সাধ করে হাটে নিয়ে আসা গরু বেচতে না পেরে রীতিমতো নির্বাক হয়ে পড়েছেন।
বুধবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন খেলার মাঠের পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাটে এখনো অনেক গরুই রয়েছে। এরমধ্যে ছোট গরুর চেয়ে বড় গরুর সংখ্যাই বেশি। তবে ক্রেতা খুব একটা নেই। ফলে বেচাকেনাও কম।
বিজ্ঞাপন
বিক্রেতাদের ভাষ্য, দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি এবং এবার হাটে গরু সরবরাহ বেশি হওয়ায় তাদের এমন দশা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা এবার গরু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু শেষ সময়েও ক্রেতা না থাকায় বিক্রি একেবারেই নেই।
যদিও গতকাল মঙ্গলবারও (২৭ জুন) হাটে অনেক গরু বিক্রি হয়েছে। তবে আজ সকাল থেকেই ছিল বৃষ্টির দাপট। দুপুরের দিকে কিছুটা কমলেও হাটে ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। আবার দুই-একজন ক্রেতা আসলেও তাদের কাছে লোকসানেই গরু বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যাপারীদের।শেরপুর থেকে আসা গরু বিক্রেতা মুতালিব মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, এবার আমি ১৬টি গরু নিয়ে আসছিলাম। গতকাল (মঙ্গলবার) ১৪টি বিক্রি করে দিয়েছি। তবে শেষ সময়ে আজ বাকি দুইটি গরু ৮০ হাজার টাকা লসে বিক্রি করে দিয়েছি। গতকাল লাভ হলেও আজ অনেক লস হয়েছে।
একই কথা জানিয়েছেন আবুল ইসলামও। ঢাকা মেইলকে এই বিক্রেতা বলেন, গতকাল ১৪টি গরু নিয়ে আসছিলাম। মাত্র চারটা বিক্রি করতে পেরেছি। ১০টা গরু এখনো বিক্রি করতে পারি নাই। ইতোমধ্যেই বিশ হাজার টাকা লস হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে গরু ব্যবসায়ী মুন্নার অবস্থাও একই। ঢাকা মেইলকে তিনি জানান, ২০টি গরু নিয়ে এবার হাটে এসেছিলাম। এখনো সাতটি বিক্রি করতে পারি নাই। আমার প্রায় এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকা লস হয়েছে।মুতালিব মিয়া, আবুল ইসলাম ও মুন্নার মতো অনেক গরুই বিক্রি করতে পারেননি নান্দাইলের শাকিল আহমদ, শিবচরের লিটন মিয়া, জামালপুরের বাদশা মিয়া, সিরাজগঞ্জের আব্দুল আলিমসহ অনেকেরই। এরমধ্যে শিবচরের লিটন মিয়া এবার হাটে দুইটি গরু নিয়ে এসেছিলেন। ইতোমধ্যে একটি বিক্রি করলেও অপর গরুটি এখনো বিক্রি করতে পারেননি।
বিজ্ঞাপন
কথা হলে তিনি বলেন, একটি গরু বিক্রি করেছি ৪০ হাজার টাকা লস দিয়ে। যে গরুটি বিক্রি করেছি সেটা এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। এখনো একটা গরু বাকি আছে। এটা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। কিন্তু বিক্রি করার জন্য কোনো ক্রেতা পাচ্ছি না।কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ৬ সন্তান। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। গরু বিক্রি করে তাদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করে নিয়ে যাওয়ার কথা। এখন আমি কি করব- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের আব্দুল আলিমের। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে কাস্টমার না থাকায় ‘কালো মানিককে’ বিক্রি করতে পারি নাই। ৯ লাখ টাকা দাম উঠেছে। লস হবে দেখে বিক্রি করি নাই। কিন্তু এখন কোনো কাস্টমারই নাই। বাকি যে গরু এনেছিলাম সেগুলো বিক্রি করেও এখন পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার মতো লস হয়েছে।
কেআর/আইএইচ