দেশের আকাশে পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আর ক’দিন বাদেই পালিত হবে মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে ঘিরে তাই প্রস্তুত হচ্ছে কোরবানির পশুর হাটও। তবে এবার পশুর হাটকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছয়টি পশুর হাটে (গাবতলী, বসিলা, আফতাবনগর, ভাটারা, কাওলা ও উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর) ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপন করা হবে।
ইতোমধ্যেই স্মার্ট হাটের এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সেই সঙ্গে খামারিরাও স্মার্ট পশুর হাটকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাতা ও সাদিক এগ্রো’র প্রেসিডেন্ট মো. ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের খামারিরা গরু বিক্রির পর স্মার্ট লেনদেনের মাধ্যমে তাদের টাকাটা নিয়ে যেতে পারবে, তার সিকিউরিটি আমরা পাচ্ছি। নিরাপত্তার বিষয়টি বিষয়টি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে।
ইমরান হোসেন বলেন, প্রতিবছর কোরবানি ঈদে আমরা অনেক খামারিদের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হই। আমরা শুনেছি- কার কীভাবে টাকা ছিনতাই হয়ে গেছে, মলম পার্টির পাল্লায় কারা পড়েছে, আবার দালালদের খপ্পরে পড়ে টাকা খোয়ানোর কথাও আমরা শুনেছি। তবে এবার স্মার্ট পশুর হাটের এই পদ্ধতির মাধ্যমে খামারিদের টাকাটা তাদের কাছে পৌঁছে যাওয়াটা আমাদের খামারিদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাতা ও সাদিক এগ্রো’র প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমার কাছে মনে হয়- এই স্মার্ট লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের গরু ক্রয়সহ পরবর্তী লেনদেন সহজ হবে। বিক্রেতা সহজেই টাকা পাবেন। যে টাকা দিয়ে সে আবারও গরু কিনে বিক্রি করতে পারবে। যা দুই দিক থেকেই ভালো হবে। আমারা খামারিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আয়োজনে যুক্ত হতে সম্মতি জানিয়েছি। পাশাপাশি আমরা সবসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের সহযোগিতায় আমরা স্মার্ট হাট বসাতে পেরেছি জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে হয়তো এই স্মার্ট হাটের পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। অমরা আগে থেকেই মনে করতাম- এমন একটা পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল। যেখানে খামারি বেচাবিক্রি করে টাকা বাসায় নিয়ে যেতে পারবে। তবে নতুন এই পদ্ধতিতে যেহেতু অনেকেরেই অজানা, তাই আমরা আশা করি আগামী বছর আরও ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে স্মার্ট পশুর হাট।
উল্লেখ্য, পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছয়টি পশুর হাট চলাকালীন (গাবতলী, বসিলা, আফতাবনগর, ভাটারা, কাওলা ও উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর) ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাটগুলোর সংশ্লিষ্ট ইজারাদাররাও এ ধরণের কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত পোষণ করে এই প্রকল্পে সর্বাত্মক সহায়তা করছেন।
হাটগুলোর পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে কার্ড স্কিম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মাস্টারকার্ড, ভিসা ও আমেরিকান এক্সপ্রেস; ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপন করবে। সেই সঙ্গে এগুলো পরিচালনার জন্য লিড ব্যাংক হিসেবে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক (ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড) এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বিকাশ লিমিটেড ও ইসলামী ব্যাংক এম ক্যাশ একযোগে কাজ করছে।
এই প্রকল্পের আওতাধীন হাটগুলোতে একটি করে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপন করা হবে, যেখানে ক্রেতারা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পিওএস (POS) এ, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, কিউআর কোডের মাধ্যমে অথবা বুদ্ধে স্থাপিত এটিএম মেশিন থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করেও বিক্রেতাকে পশুর মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। পাশাপাশি ইজারাদারদের কাছে প্রদেয় পশুর হাসিল নগদ অর্থ ছাড়াও ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পিওএস (POS) মেশিনে অথবা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়া প্রান্তিক খামারি এবং সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের স্বার্থে পাইলট প্রকল্পের অধীনে সম্পাদিত ডিজিটাল লেনদেনে কোনো চার্জ (কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে MDR এবং IRF চার্জ এবং MFS ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্যাশ আউট চার্জ) প্রযোজ্য হবে না।
ডিএইচডি/আইএইচ