মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

মেট্রোরেলে ক্রেতা বাড়ছে বৃন্দাবন হাটের

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৩, ১০:৩২ এএম

শেয়ার করুন:

মেট্রোরেলে ক্রেতা বাড়ছে বৃন্দাবন হাটের

রাজধানীর অন্যতম পশুর হাট উত্তরার বৃন্দাবন। মেট্রোরেলের কারণে এই হাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা সহজ হয়েছে। আর এর প্রভাবে বেড়েছে এই হাটের ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা। আবার এই হাটে পশু বিক্রি করতে আসা অনেকেই মেট্রোরেলে চড়ার শখ পূরণ করে নিচ্ছেন।

রাজধানীতে পাঁচদিনের জন্য বসা অস্থায়ী হাটগুলোর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে আজ (২৫ জুন) রোববার শুরু হচ্ছে। যদিও গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন হাটে পশু আসতে শুরু করেছে। এমনকি অনেক হাটে বিক্রিও জমে উঠেছে।


বিজ্ঞাপন


উত্তরার বৃন্দাবন হাটে গরু আসতে শুরু করে গত ১৮ জুন থেকে। এই হাটের ক্রেতাদের বড় একটা অংশ আসছেন মেট্রোরেলে চড়ে। অনেকেই পরিবার নিয়ে মেট্রোরেলে চড়ে পশুর হাট দেখতে যাচ্ছেন।Specialসরেজমিন শনিবার বেলা ১১টায় আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে যাত্রীদের সাথে কথা বললে কমপক্ষে ২০ জন জানান তারা উত্তরা হাটে যাচ্ছেন গরু দেখতে। এরমধ্যে অনেকে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়ছেন এবং একই সাথে পশুর হাট দেখতে যাচ্ছেন।

আগারগাঁও স্টেশনে কথা হয় গরু বিক্রেতা মো. সজিবের সাথে। তিনি সকালে মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও এসেছেন, এখন আবার ফিরছেন। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গা থেকে এসেছি। বাবা-ভাইসহ তিনজন মিলে ৭টি গরু নিয়ে এসেছি। মেট্রোরেলের চড়ার খুব ইচ্ছে হইছিল। ঢাকায় এসে দেখলাম হাটের পাশেই স্টেশন। তাই সকালের ট্রেনে এসে নামি আগারগাঁও, পরে বাসে করে খামারবাড়ি যাই। সেখানে চক্ষু হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে আবার হাটে ফিরতেছি। জীবনে প্রথমবার এমন একটা ট্রেনে চড়ছি, কি যে ভালো লাগছে বোঝানো যাবে না।

সজিবের সাথে আসা আসলাম মিয়া বলেন, মেট্রোরেলে চড়ার শখ জাগছিল, তাই দুদিন ধরে চড়েই যাচ্ছি। হাটে এখন বিক্রি কম, আমাদের লোকও আছে হাটে। তাই দুইদিন আমি মেট্রোরেলে ঘুরলাম।

শেওড়াপাড়া থেকে মেট্রোরেলে উঠেছেন তামিম আহসান, তার ভাই এবং দুই বন্ধু। তামিম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা তিনবার গেছি হাট দেখতে, আজ নিয়ে চারবার হবে। আজ গরু পছন্দ হলে কিনে ফেলব, সেই নিয়ত আছে। এখান থেকে জনপ্রতি ভাড়া ৪০ টাকা, তবে এতে আরাম। মাত্র ১০ মিনিট লাগছে। গতবার এই হাটে নিজেদের গাড়ি নিয়ে গেছি, বিশ্বাস করেন রাস্তা এত খারাপ ছিল পৌনে দুই ঘণ্টা লাগতো। তামিমের ভাই আরমান আহসান বলেন, আমাদের নিজেদের গাড়ি আছে। তারপরও সময় কম লাগে, তাই মেট্রোরেলে যাচ্ছি।Specialফার্মগেট থেকে অনেকেই আগারগাঁও স্টেশন এসে মেট্রোতে চড়ে যাচ্ছেন পশুর হাটে। আগারগাঁও স্টেশনে অনেক যাত্রীকে কাউন্টারে বলতে শোনা যায়, উত্তরায় গরুর হাটে যাবে, কোথায় নামতে হবে সেখানের টিকেট দেন। কাউন্টারে দায়িত্বরতরা জানান, অনেকেই পশুর হাট দেখতে যাচ্ছে। অনেকেই জানেন না, তাই এসে বলেন গরুর হাটে যাব, সেই টিকিট দেন।


বিজ্ঞাপন


উত্তরার বৃন্দাবন হাটে ইতিমধ্যে প্রচুর গরু উঠেছে। বিক্রি কিছুটা কম। হাটের হাসিলঘরে দায়িত্বরতদের তথ্য মতে, গত দুই দিনে শতাধিক গরু বিক্রি হয়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে সোহরাব হোসাইন এসেছেন ১২টি গরু নিয়ে। শনিবার ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিক্রি করেন একটি গরু। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আশপাশের রাস্তাঘাট গতবারের চেয়ে অনেক ভালো। গত বছর এই হাটে আসতে অনেক কষ্ট হইছে, ট্রাক ঢুকাতে কষ্ট করছি। এবার শুনতেছি অনেকে মেট্রোরেলেও আসতেছে।

গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গরু নিয়ে আসা কাদির মিয়া বলেন, আমাদের ছোট একটা খামার। প্রতিবছর গরু বিক্রি করি। গত ৫ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি কেনাকাটা জমজমাট হয় রাতে। এবার এই হাটে এসে দেখলাম দিনের বেলায়ও বেশ লোকজন আছে। অনেকেই ঘুরে ঘুরে দেখছেন, আবার কিনেও ফেলছেন। পুরুষদের সাথে প্রচুর নারীও আসছেন এই হাটে।Specialহাটে কথা হয় ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিনের সাথে। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার বাসা লালমাটিয়ায়। স্ত্রী-বাচ্চাসহ এসেছিলাম। সবাইকে হাট দেখালাম, সাথে মেট্রোরেল ভ্রমণ ছিল বাড়তি বিনোদন। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের আশপাশে হওয়ায় এই হাটই বেশি জমজমাট থাকবে অন্যগুলোর চেয়ে।

কাজীপাড়ার জামতলা রোডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন এই হাট থেকে গরু কিনেছেন এক লাখ ২৫ হাজার টাকায়। ছেলে, ভাতিজা ও ভাইসহ ৬ জন এসেছিলেন হাটে। আনোয়ার হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, কাজীপাড়া স্টেশন থেকে ১০ মিনিটে হাটে এসেছি। বাজার ঘুরে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই গরু কিনে ফেলেছি। এখন গরুসহ দুইজন পিকআপে করে বাসায় যাবে। বাকি চারজন মেট্রোতেই চলে যাচ্ছি।

মিরপুর এলাকার অনেকেই কোরবানির পশু কিনতে সাধারণত গাবতলী হাটে যেতেন। এবার তাদের অনেকেই মেট্রোরেলের সুযোগ নিয়ে উত্তরার বৃন্দাবন হাটে আসবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডব্লিউএইচ/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর